উড়োজাহাজের কাহিনী

October 28, 2015
Leave a comment
উড়োজাহাজের কাহিনী

লিঙ্ক:

(https://aviationbangladesh.wordpress.com/2015/10/29/%e0%a6%89%e0%a7%9c%e0%a7%8b%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%80/)

প্রণয়নে:
সৈয়দ মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন
সহকারী অধ্যাপক (অব:)
রামপুরা একরামুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ
(সাবেক বিমান সেনা (PAF & BAF), প্রশিক্ষক (ASEA, Army), এ ই সি (এস ডব্লিউ ও/অবঃ), সাবেক খণ্ডকালীন অধ্যাপক ক্যাম্ব্রিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অফ এভিয়েশন (বি এ এ এম এবং অন্য কোর্স), ঢাকা, বাংলাদেশ,
প্রাক্তন চীফ ইন্সস্ট্রাক্টর কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজী ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজী, ঢাকা, বাংলাদেশ এবং
ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ হেরিটেজ ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব এভিয়েশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট (বর্তমানে কর্মকাণ্ড স্থগিত)।

প্রকাশনায়
সোনালী সোপান প্রকাশন
৩৮/৩ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।

পৃষ্ঠপোষকতায়
মোসাম্মাৎ সকিনা খাতুন

প্রতিষ্ঠাতা
ডক্টর শাহ মুহাম্মাদ ‘আবদুর রাহীম

প্রকাশক
মুহাম্মাদ আবদুল জাব্বার
মোবাইল : ০১৭১৫৮১৯৮৬৯, ০১৭৩৩১১৩৪৩৩

পরিচালক
মুহাম্মাদ আবদুস সাত্তার

প্রথম প্রকাশ ঃ ডিসেম্বর ২০১৩

বর্ণবিন্যাস
নাছের পাটওয়ারী ডিজাইন ঘর

মুদ্রণে : ক্রিয়েটিভ প্রিণ্টার্স

হাদিয়া : ২০০ টাকা মাত্র।

(দ্রষ্টব্য: পুস্তকটিতে বড় ও ছোট ছোট বহু মুদ্রন ভ্রান্তি রয়েছে। ক্রমে পুরোটা এডিট ও সংশোধন করা হবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি পাবলিশার পুস্তকাকারে বইটি প্রকাশকালে সকল প্রয়োজনীয় চিত্র যথাস্থানে প্রদর্শন করবেন। ইউ টিউব থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য শেয়ার করা ভিডিওগুলো ছাপানো বইয়ে থাকবে না তবে লিঙ্ক থেকে যাবে। আরো দেখুন:

https//aviationbangladesh.wordpress.com/author/syedsaleshduddin/)

উৎসর্গ:

সকল শিশু-কিশোর
যারা বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

ভুমিকা
পুস্তকটি বিমান আবিষ্কার ও এর ক্রমবিকাশের কাহিনী। উল্লেখ্য বাংলা একাডেমি ‘উড্ডয়নের ইতিহাস’ নামে আমার লেখা একটি পুস্তক বহু বছর পূর্বে প্রকাশ করেছিল। এ পুস্তকটি সে পুস্তকেরই একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি সহজ ভাষায় শিশু কিশোরদের জন্য লিখা হয়েছিল কিছু বিদেশী পুস্তকের সহায়তায়। সে পুস্তকটির প্রুফ দেখে দিয়েছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব:) আলফাজ ও পুস্তকটির জন্য নিজ খরচে প্রয়োজনীয় চিত্র নেগেটিভ করে দিয়েছিলেন তৎকালীন টাইগন্স লিঃ এর এম ডি আমার শ্রদ্ধেয় মুজিব মামা। এ বিজ্ঞান পছন্দ মামা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বিজ্ঞানের জয় হোক!

এ যুগ বিজ্ঞানের চরম উন্নতির যুগ। তাইত ঘুরি নয় বরং উড়োজাহাজ বর্তমান শিশু-কিশোরদের আগ্রহের বিষয়। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ‘বড় হয়ে কি হবে?’ বহু শিশুই এখন অকপটে উত্তর দিয়ে ফেলে ‘বড় হয়ে আমি পাইলট হব।’ বর্তমানে এদেশেই এম আই এসটি সহ বহু প্রতিষ্ঠান উড্ডয়নের ইতিহাস বিষয় পাঠদান করে থাকে।

পুস্তকটিতে তাদের জন্যও রয়েছে প্রয়োজনীয় শিক্ষণীয় বিষয়। উজোড়াহাজের কাহিনী নামের এ পুস্তকটি তাদের সকলেরই জানার তৃষ্ণা মিটাবে।
আমি আশা করি যে সকল শিশু কিশোর যারা বৈমানিক তথা যে কোন পর্যায়ের সামরিক/ বেসামরিক সংস্থায় এয়্যারম্যান হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে তাদের পিতা-মাতাগণ পুস্তুকটি তাদের হাতে তুলে দিবেন। তাদের স্বপ্ন সফল হোক।

যাদের পুস্তুক থেকে এ পুস্তকটির জন্য আমি তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাদের সকলেরই নিকট আমি ঋণী।

সৈয়দ মোহাম্মাদ সালেহ উদ্দিন

সূচিপত্র

১) আদম এলেন এ ধরাতে আলোর রথে

২) পাখির ডানায় ওদের গুঞ্জন

৩) বেলুন থেকে এয়ারশীপ

৪) যান্ত্রিক বিমানের ক্রমবিকাশ ও সর্বাধুনিক বিমান

৫) বিভিন্ন ধরনের বিমান এবং ওদের উড্ডয়ন রহস্য

৬) হেলিকপ্টারের ইতিহাস

৭) বিমানের ইন্জিন প্রসঙ্গ

********************

আদম এলেন এ ধরাতে আলোর রথে

চিত্র : আকাশ ভরা গ্রহ তারা (সৌজন্যে:wikipedia)

আদম ও হাওয়া এই পৃথিবীর প্রথম সভ্য মানব মানবী। নৃবিজ্ঞানীরা বলেন লাখো বছরের বিবর্তনের ফলে এই ধরাতেই কোন এক শুভ লগ্নে চোখ মেলেছিলেন তারা। আসলেই কি তাই? এই পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ধর্ম বিশ্বাস হল স্রষ্টা আদম ও হাওয়াকে এই ধূলির ধরায় নয় বরং বেহেশত নামক দূরের কোন এক গ্রহে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর এই গ্রহে পাঠিয়েছেন এটাকে আবাদ করার জন্য, তার খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে তারই গুণগান করার জন্য।

কিন্তু কেমন করে তাদের পাঠালেন? কোথাও বলা হয় নাই। মানুষ অবগত হল, আদমকে অবতরণ করানো হয়েছে সিংহলের পর্বতমালার কোন এক স্থানে আর হাওয়াকে অবতরণ করানো হয়েছে জেদ্দার মরু প্রান্তরে। সুতরাং তারা আকাশ ফুরে কোন দ্রুতগতি সম্পন্ন অলৌকিক যানে এই দুনিয়ার ভূমিতে অবতরণ করেছেন। স্রষ্টাই তার কোন অতি দ্রুতগতি সম্পন্ন বাহনে সম্ভবত: নয় বরং নিঃসন্দেহে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। বাহনগুলি আলোর হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা তার সকল ফেরেশতা বা দূতগণ আলোর দ্বারাই সৃষ্ট এবং তিনি নিজেও আলোকময় এক মহাশক্তি। তাইত স্রষ্টা তার শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স:) কে বোরাক নামক বাহন দ্বারা মেরাজ ভ্রমণ করিয়েছিলেন। উহা ছিল আলোর তৈরী এবং খুবই দ্রুতগতি সম্পন্ন। মুহুর্তের মাঝে তিনি ওই বাহন দ্বারা প্রথম আকাশ বা এই মহাবিশ্বের তারকাদের জগত অতঃপর দ্বিতীয় আকাশ বা মহাশূন্যের দ্বিতীয় স্তর, একইভাবে পর্যায়ক্রমে সপ্তম স্তর অতিক্রম করেছিলেন। অতঃপর রফরফ তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন এ মহা মহা বিশ্বের সীমান্তের প্রান্তসীমায়। সেটিও ছিল আলোর তৈরী।

উল্লেখ্য যে বর্তমান কম্পিউটারের যুগেও প্রথম স্তর বা তারকাদের জগতের ব্যপ্তি হিসাব করা সম্ভব হয় নাই। শুধু তাই নয় বোরাক নামের ঐ যানটি আরো বহু স্থানে মুহাম্মাদ (স:) এর বাহন ছিল। ওই গুলির সর্বমোট দূরত্ব আাদের কল্পনারও অনেক দূরে। অবশেষে বোরাক হযরত মুহাম্মদ (স:) কে নিয়ে এই পৃথিবীতে ফিরে। আশ্চর্যের বিষয় যাত্রা শুরু ও সমাপনের মাঝে সময়ের ব্যবধান ছিল খুবই কম। অর্থাৎ বাহনটি এতই দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল যে আমাদের হিসাব মতে কোটি কোটি আলোক বর্ষের দূরত্ব মাত্র কয়েক মুহুর্তের মাঝে শেষ করতে সমর্থ হয়েছিল ওই বোরাক। মহান আল্লাহ পাক কি তাঁকে কোন বোরাক নামের টাইম মেশিনে কোন অতীত কালে সফরের ব্যবস্থা করে তার ক্ষমতার নজির রেখেছেন! তিনি তা বেহতর অবগত। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এর উপর ক্ষমতা রাখেন।

শুধু মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্মে বিশ্বাসী জনসাধাারণ আদম ও হাওয়ার কাহিনীতে বিশ্বাস করেন। হযরত মুহাম্মদ (স:) এর মিরাজ ভ্রমণ ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস। ব্যবিলন, এসিরিয়া, মিশর, গ্রীস, চীন, ভারত ইত্যাদি দেশের পৌরনিক কাহিনীতে তাদের দেবদেবীদের আকাশ পথে ভ্রমণের উল্লেখ আছে। তাদের কারো কারো পাখা ছিল। কেহ বা উড়ন্ত ঘোড়া, ছাগল, বাঘ, সিংহ, ড্রাগন অথবা ষাড়ের পিঠে চড়ে আকাশ ভ্রমণ করেছেন। তাদের কারো বাহন ছিল উড়ন্ত রথ বা নৌকা। গ্রীকরা বিশ্বাস করে তাদের দেবতা দেইদেলাস ও তাঁর পুত্র ইকারুস পাখির পালক মোমের আঠাদ্বারা লাগিয়ে আকাশে উড়েন। পিতা সিসিলি পর্যন্ত পৌঁছতে সমর্থ হন আর হতভাগ্য পুত্রের ঘটে মর্মান্তিক মৃত্যু। তিনি ডানা ঝাপটিয়ে সূর্যের নিকটে পৌঁছেন। সূর্যের তাপে মোম গলে যায় ফলে তিনি সমুদ্রে পতিত হন এবং সাগরের গভীর কাল কালো ঘূর্ণি মাঝে হারিয়ে যান।

খুনসু ছিলেন মিশরের একজন দেবতা। তিনি নাকি তার আপন পাখায় ভড় করে যথা ইচ্ছা তথা উড়ে বেড়াতেন। ভারতীয় হিন্দুদের অনেক দেবতা মেঘের আড়ালে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। অস্ত্র নিক্ষেপ করতেন, রথে চড়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে উড়ে যেতেন। ভারতীয় হিন্দুদের শক্তিশালী দেবতা শিবের বাহন ছিল একটি গাভী। গরুর নামের যানে (দেবতাদের বাহন) চড়ে তিনি স্বর্গ নামক অন্য এক গ্রহে গমন করতেন।

আরবরা বিশ্বাস করে হিব্রু রাজা ও নবী হযরত সুলায়মান (আঃ) সিংহাসনে চড়ে তার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতেন। পারশ্য রাজ কায়কাউসের ছিল উড়ন্ত সিংহাসন। জ্বীন ও শয়তানদের সম্বন্ধে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষের বিশ্বাস যে তারাও আকাশচারী। আকাশ পথেই ওদের আনাগোনা।

Please visit following link :-

https://flyingstory.wordpress.com/category/books/https://flyingstory.wordpress.com/category/books/

____________________________

পাখির ডানায় ওদের গুঞ্জন

মানুষের পূর্বেই নাকি পাখিদের এই পৃথিবীতে আগমন। মানব সদৃশ বানরেরা আদম ও হাওয়ার আগমনের বহু পূর্ব থেকেই এই ধরায় রাজত্ব করত। সম্ভবত: তখন থেকেই শুরু। ডানা মেলা পাখি দেখে সম্ভবত: ওরাও মহাকাশে ওদের কল্পনার ডানা মেলে দিত। একদিন ধরা প্রথম মানব মানবীর পদচারণায় মুখর হল। ক্রমে পৃথিবীর সকল স্থানে তাদের সন্তানেরা বসবাস শুরু করল। সব জায়গায়ই পাখি তাদের প্রতিবেশী। মানুষের মাথার উপর দিয়ে মহানন্দে উড়তে থাকে ওরা। মানুষ ও ভাবত, যদি আমরা ওদের মত ডানা মেলে উড়তে পারতাম! গহীন আকাশের ঘন নীলে হারিয়ে যেতে পারতাম! শুরু হল প্রচেষ্টা। ভাবল বাহুতে পাখা লাগিয়ে হয়ত পাখির মত উড়া যাবে।

নিবেদিত প্রাণ অনেকেই হাতে পায়ে পাখা লাগিয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফিয়ে হাত পা নেড়ে পাখির মত উড়তে চাইল। বাতাসের সমুদ্রে ঝাঁপ দিল কেউ। এইভাবে আরো সাহসী মানুষ উড়ার খায়েশ পূরণ করতে চাইল। কিন্তু হায় মৃত্যুই শুধু তাদের সকল প্রচেষ্টাকে অমর করে রাখল। মানুষের পাখা নেড়ে উড়ে বেড়ানোর প্রচেষ্টা ব্যার্থ হল।

ইসলামের স্বর্ন যুগে স্পেনের মুসলিম বিজ্ঞানীদের একজন আবুল কাশেম ইবনে আব্বাস ফিরনাসের এমন প্রচেষ্টা কিছুটা সফল হলেও সঠিক নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির অভাবের কারণে অবতরণকালে তিনি আঘাত পান।যদিও তাঁর উড্ডয়ন প্রচেষ্টায় ডানা ও আলখেল্লা যৌক্তিক ভিত্তিতে বানানো হয়েছিল তবে পদার্থ তথা বায়ু বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয় তাঁরও হাল আমলের মত যথার্থ ছিলনা।

তিনি যে খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীতে তাঁর সে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন আর সর্বশেষে ১৫১৯ সালে সে যুগের একজন উচ্চাভিলাসী বিজ্ঞানী এই প্রচেষ্টায় মারা যাওয়ার পর এইভাবে আকাশ ভ্রমণের পরীক্ষা নীরিক্ষা বাতিল হয়ে গেল। উল্লেখ্য যে তিনি এমন একটি পাখা বানিয়েছিলেন যা নিচের দিকে এবং পেছনের দিকে নাড়ানো যেত। কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন মানুষের হাত ও পায়ের মাংসপেশী পাখ – পাখালির মাংস পেশীর মত ক্রমাগত নাড়াচারা করার উপযোগী নমনীয় নয়। তাঁর উল্লেখিত ভুল থাকা সত্বেও তিনিই পাশ্চাত্য দুনিয়ার উড্ডয়নের ইতিহাসের প্রথম সফল বিজ্ঞানী। তোমরা এই মহান ব্যক্তির নাম জান কি?

তার নাম লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চি। তার মৃত্যুর প্রায় ২৭৮ বৎসর পর ১৯৯৭ সালে হঠাৎ করেই তার হারিয়ে যাওয়া ডাইরিটি আবিষ্কৃত হল। তাতে পাওয়া গেল তার কল্পিত বিভিন্ন উড়ন্ত যানের নকশা। কোনটি বর্তমান যুগের হেলিকপ্টারের ঘূর্ণায়মান রোটরের কথাই মনে করিয়ে দেয়। কোনটি বা হাল আমলের কোন গ্লাইভার, কোনটি বা প্যারাসূট, এসবের সাথে তুলনীয়। তাঁর কল্পনা ওই সময় অনেক বিজ্ঞানীর কল্পনা রাজ্যে ঝড় তুলেছিল। এমনকি প্রায় একশত বৎসর পর পর্যন্ত তা মানব কল্পনার রাজ্যে ভাবনার বিষয় ছিল। সে প্রভাব রয়ে গিয়েছিল সে কালের গবেষকদের ভাবনার জগতে।

জার্মানীর অটোলিলিয়ানথাল ও তাঁর ভাই গোস্তাভ ওই সময় পাখির মত পাখা মেলেন। ডানায় ভেসে উড়তে চেষ্টা করেন এবং পরে গ্লাইডারের সাহায্যে উড়তে সমর্থ হন।


চিত্র :লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চির উড়ন্ত যানের নকশা


চিত্র :লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চির মৃত্যুর প্রায় ৩৭৫ বৎসর পর অটোলিলিয়ানথাল গ্লাইডারের সাহায্যে আকাশে উড়ছেন।

অবশ্য লিলিয়ানের বহুপূর্বেই ১৬৭৮ সালে ফরাসী তালা নির্মাতা বেসনিয়ার বিশেষ ধরনের পাখার সাহায্যে উড়তে সমর্থ হয়েছেন বলে দাবী করেছেন। অবশ্য বর্তমান বিজ্ঞানীরা এর সত্যতায় সন্দিহান।

এইবার আমি তোমাদিগকে কয়েকজন ডিজাইনারের নাম বলব। ওদের নামও উড্ডয়নের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৬৭০ সালে ফ্রান্সিসকো ডি লানা নৌকার মত একটি উড়োজাহাজের নকশা এঁকেছিলেন। তিনি ছিলেন ইটালি দেশের একজন পাদরী। তাঁর উড়োজাহাজের নকশায় নৌকার উপরে ছিল একটি পাল আর বায়ু শূন্য তাম্র নির্মিত চারটি পাতলা গোলক।

ফ্রান্সিসকো ডি লানার নৌকার মত একটি উড়োজাহাজের নকশা।

অবশ্য সেটি কখনো আকাশে পাল তুলে নাই। কেননা চারটি পাতলা বায়ূশুন্য তাম্র গোলক নৌকাটিকে কখনো আকাশে নিয়ে যেতে সমর্থ ছিল না। কেননা বায়ুশুন্যতার ফলে গোলকগুলি বাইরের বায়ুর চাপে ধ্বংস হতে বাধ্য হত। সুতরাং পালের ধারণাও অবাস্তব।

লরেনকো ছিলেন একজন পূর্তগীজ ফিলসফার। ১৭০৯ সালে তিনি আকাশযানের একটি নকশা আঁকেন। সম্ভবত: বাস্তবে সেটা কখনো তৈরী হয় নাই বিধায় আকাশেও উড়ে নাই।

এইবার তোমরা ফ্রান্সের এনোনে শহরের দুই ভাইয়ের গল্প শোন। ওরা জোশেফ এবং এতিনে ম’গলফার। ১৭৮২ সালের কাহিনী। ওরা শুধু মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকেন, আর ভাবেন কি মজা হত যদি না মেঘের উপর ভেসে বেড়ানো যেত। কিন্তু এটা কেমন করে সম্ভব? মেঘত বায়ুর চেয়ে কিছুটা হালকা জলীয় বাষ্প ছাড়া আর কিছু নয়। এলোমেলো ভাবনা তাদের মগজে ঢেউ খেলত। ভাবতেন মেঘ যদি কোন একটি থলের ভেতর ডুকানো যায় তবে তা তাদের আকাশে নিয়ে যেতে পারবে।

আসলে মেঘের কোন প্রয়োজন ছিলনা। অবশ্য বায়ু থেকে হালকা কোন পদার্থও তাঁদের জানা ছিলনা। এক শীতের রাতের ঘটনা। ওরা রান্নাঘড়ের চুল্লির পাশে বসে শীত তাড়াচ্ছেন। লক্ষ করছেন কিছু ছাই আগুনের ধোয়ার উপর ভাসছে। ভাবলেন আকাশে উড়ার সঠিক বস্তুটি পাওয়া গেছে। আর মেঘের প্রয়োজন নাই। তারা একটি ছোট্ট রেশমের থলে খুঁজে বের করলেন। কিছুক্ষণ আগুণের উপর ধরে রাখলেন। ধোয়ায় ওটা পূর্ণ হয়ে গেল। এক সময় ছেড়ে দিলে সেটা ক্রমে উপরে উঠল।

চলল তাদের সাধনা। প্রথমে ছোট থলে, অতঃপর বড় থলে দ্বারা চালালেন অনেকগুলি পরীক্ষা। তারা ৩৮ ফুট পরিধির বড় একটি লিলেনের থলে বানিয়ে ফেললেন। একটি মাঠের মাঝে উড্ডয়ন পরীক্ষা করতে চাইলেন। ৫ই জুন ১৭৮৩ সাল। একটি খড়ের অগ্নিকুন্ড প্রস্তুত করা হল। দুই ভাই, আরো অনেকে থলেটি আগুনের উপর মেলে ধরলেন। উত্তপ্ত ধোয়ায় থলেটি পূর্ণ হয়ে গেল। ক্রমে সেটা ৬০০০ ফুট উর্ধ্বে আরোহণ করল। অতঃপর বায়ুর গতিপথে ১০ মিনিট কাল ভ্রমণ করে দেড় মাইল দূরে ভূমিতে নেমে এল। এরূপে আবিষ্কৃত হল প্রাথমিক আকাশযান। হাজার বছর পূর্বে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা পাখির ডানায় শুনেছিলেন ভবিষ্যত আকাশযানের যে মৃদু গুঞ্জন বেলুন ও গ্লাইডার আবিষ্কার মানুষকে নিয়ে গেল সে স্বপ্নের খুবই কাছে।

চিত্র: বেলুনের দৃশ্য। এর থলে সাধারণত রেশম অথবা লিনেন দ্বারা প্রস্তুত করা হত। থলেটি জালের ভিতর আটকানো থাকত। নিচে ঝুলানো হত যাত্রীবহনযোগ্য ঝুড়ি।

_____________________________

বেলুন থেকে এয়ারশীপ

শনৈ: শনৈ: বেলুন উন্নত হয়েছে। উত্তপ্ত বায়ুর বদলে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের হালকা গ্যাস। বেলুনের আকাশে উড্ডয়নের কারণ কি জান? উত্তপ্ত বায়ু আবহাওয়া মন্ডলের সাধারণ বায়ু হতে হালকা। সুতরাং উত্তপ্ত বায়ুপূর্ন বেলুন উপরে উঠতে সমর্থ হয় এবং ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত শূন্যে অবস্থান করতে পারে। হালকা গ্যাসপূর্ণ বেলুনও বায়ু হতে হালকা বিধায় বাতাস ফুরে উর্ধ্বে আরোহণে সমর্থ।
উল্লেখিত নীতি মনে রেখে সে যুগের বিজ্ঞানীগণ ব্যবহার যোগ্য বেলুন আবিষ্কারে সচেষ্ট হলেন। প্যারিসের পিলাটর দ্য রোজিয়ার ও মার্কুয়িস দ্য অরল্যান্ড এক বিশাল আকৃতির বেলুন প্রস্তুত করলেন। ১৭৮৩ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ। তাদের বেলুন বাতাস ভেদ করে আকাশে আরোহণ করতে থাকল। নিচে ঝুলন্ত জ্বলন্ত ধাতব চুল্লি। ওটা ২৫ মিনিট আকাশে ছিল। অতঃপর সাড়ে পাঁচ মাইল দূরে সফলভাবে ভূমিতে অবতরণ করল।
বেলুনে সর্বপ্রথম হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করেন ফ্রান্সেরই বিজ্ঞানী প্রফেসর জে এ সি চার্লস। অবশ্য এই গ্যাস ১৭৬৬ সালে হেনরী ক্যাভেনডিস আবিষ্কার করেন। ১৭৮৩ সালের ১লা ডিসেম্বর চার্লসের রেশমী কাপড়ের বেলুনখানা আকাশে উড়ে। সেটা ছিল রবারে আবৃত। চার্লস নিজেই বেলুনটির একজন যাত্রী ছিলেন। বেলুনের অপর যাত্রী ছিলেন রবার ব্যবহারের উদ্ভাবক রবার্ট ভ্রাতা দ্বয়ের বড় জন। ঐ যাত্রায় তারা ৭৬ মাইল ভ্রমণ করে নিরাপদে অবতরণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

১৭৮৫ সাল বেলুনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঐ বৎসর ফ্রান্সের জ্য পিয়ারে ব্লানচার্ড ও আমেরিকার ড. জন জেফরীস যৌথ ভবে হাইড্রোজেন বেলুনে সর্বপ্রথম ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। ঐ বৎসরই নতুন ধরনের বেলুনে ভ্রমণ প্রচেষ্টায় দুইজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী মৃত্যু বরণ করেন। ঐ দুইজনের নাম পিলাটর দ্য রোজিয়ার এবং তার উড্ডয়ন সঙ্গি পি. এ দ্য রোমেইন। তারা বৃহৎ হাইড্রোজেন বেলুনের নিচে ক্ষুদ্রতর একটি চুল্লি ব্যবহার করেছিলেন। হাইড্রজেন দাহ্য পদার্থ। ফলে উড্ডয়নের মাত্র ২০ মিনিট পর চুল্লি থেকে হাইড্রোজেন পূর্ণ বেলুনে আগুন লেগে গেল।

বেলুনে বিস্ফোরণ ঘটল। ঐ সময় বেলুনটি ৩০০০ ফুট উর্ধ্বে বাতাসে ভেসে উড়ে বেড়াচ্ছিল। তারা ছিলেন নতুন কোন কল্পনায় বিভোর। তাদের নিয়ে জ্বলন্ত বেলুন ৩০০০ ফুট নিচে ভূমিতে পতিত হল। তারা জীবন দিয়ে ইতিহাসে নাম রেখে গেলেন।

জ্য পিয়ারে ব্লানচার্ড এবং ড. জন জেফরীস এই বেলুনে ১৭৮৫ সালের জানুয়ারী মাসে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। তাতে ছিল বিমানের মত রাডার এবং বায়ু কাটার জন্য কয়েকটি দাঁড়।
আমেরিকাতেও ব্লানচার্ড ১৭৯৩ সালে বেলুনের সাহায্যে আকাশে উড্ডয়ন করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। ফিলাডেলফিয়ায় ব্লানচার্ডের বেলুনে উড্ডয়ন দেখার জন্য তিনিও জনতার মাঝে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর মানুষকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিশেষ বিশেষ কাঠামোর উপর বেলুনের কাপড় অথবা রাবারের আবরণ দেয়া হল। আবিষ্কৃত হল ডিরিগেবল অথবা এয়ারশীপ।


হেনরী জিফার্ডের ডিরিগেবল।

হেনরী জিফার্ড ছিলেন ফ্রান্সের একজন প্রকৌশলী। তিনি উল্লেখিত ধরনের বিমানের প্রথম সফল স্রষ্টা। তিনি ১৮৫২ সালে ১৪৩ ফুট লম্বা সিগারের মত একটি ডিরিগেবল নির্মাণ করেন।
ক্রমে এয়ারশীপে হাইড্রোজেন গ্যাসের বদলে কয়লার গ্যাস ব্যবহার আরম্ভ হল। অতঃপর শক্তিশালী অন্তর্দহন ইঞ্জিন সংযোজন করা হল। ১৮৯৮ সালে ব্রাজিলের আলবার্তো সান্টোস ডুমন্ট একটি এয়ারশীপ নির্মাণ করেন। তিনি উহাতে সাড়ে তিন হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন সংযোজন করেন। তিনি সর্বমোট চৌদ্দটি বিভিন্ন ধরনের এয়ারশীপ নির্মাণ করেছিলেন। সেগুলির তিনি দক্ষ পরিচালকও ছিলেন। তরুণ ডুমন্টের জন্মস্থান ব্রাজিল হলে কি হবে মুক্ত পাখির মত উড়ার জন্য তিনি ফ্রান্সের আকাশকে বেছে নিয়েছিলেন।

তিনি যেন ছিলেন প্যারিসের আকাশের মুক্ত বিহঙ্গ। ছাদ সমান উচ্চতায় প্যারিসের রাস্তার উপর দিয়ে উড়ে উড়ে তিনি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। ১৯০১ সালে একবার তিনি তার এয়ারশীপ নিয়ে সেন্ট ক্লাউড থেকে আকাশে উড়লেন। উদ্দেশ্য আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত পৌঁছে ফিরে আসা। তার এয়ারশীপ নিরাপদে আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত পৌঁছাল। ওটার চারদিকে বৃত্তাকারে পাক খেয়ে সেটি নিরাপদে সেন্ট ক্লাউডে ফিরে গেল। তিনি দক্ষতার সাথে সেখানে অবতরণ করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেন।


আলবার্তো সান্টোস ডুমন্টের একটি এয়ারশীপে আইফেল টাওয়ার পরিভ্রমণ।

এয়ারশীপ নির্মাণে জার্মানরা বিশেষ দক্ষতার ছাপ রাখে। সেই দেশের কাউন্ট ফার্ডিনান্ড ভন জেপেলিন উড্ডয়নের ইতিহাসের পাতায় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি বহু পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে এক বা একাধিক অনমনীয় কাঠামোর বেলুন নির্মাণ করেন।

তাঁর বানানো এলোমুনিয়ামের কাঠামোর এয়ারশীপটি ছিল ৪২০ ফুট লম্বা। কাঠামোর নিচে ঝুলন্ত ছিল যাত্রী ও চালক কেবিন। তার এয়ারশীপটির নাম তাঁরই নাম অনুসারে দেওয়া হয় জেপেলিন। তিনি ছিলেন জার্মান সেনা বাহিনীর একজন অবসর প্রাপ্ত অফিসার।

সে বায়ু থেকে হালকা উরলযানটির উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য তিনি সান্টোস ডুমন্টের পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন। এর জন্য তিনি এয়ারশীপটির বিশেষস্থানে একটি ওজনদার বস্তু স্থাপন করেছিলেন। সেটিকে উপর এবং নিচে উঠানো নামানো যেত। প্রয়োজনে সামনে নেওয়া যেত এবং পেছনে টানা যেত।

উজনবিশিষ্ট বস্তুটি টি পেছনে টানলে এয়ারশীপটির সম্মুখভাগ উপরের দিকে উঠত। ফলে এটাও উড্ডয়ন করতে থাকত। উজনটিকে সামনের দিকে ঠেলে দিলে সম্মুখভাগের উজন বৃদ্ধি পেত ফলে সেটি নিচের দিকে নেমে যেত এবং আস্তে আস্তে অবতরণ করত।
জেপেলিন নামের অনেক এয়ারশীপ জার্মানরা নির্মাণ করেছিল। প্রথম মহাযুদ্ধে ঐগুলি ছিল পরাক্রমশালী আকাশযোদ্ধা। মহা বিক্রমে লন্ডন শহরের উপর বোমা বর্ষণে পিছপা হয় নাই সেসব জার্মান জেপেলিন স্কোয়াড্রন। অবশ্য যুদ্ধের পর জেপেলিন পরিবহন বিমান হিসাবে মানব কল্যাণে আত্মনিয়োগ করল। মহাসাগর পার হয়ে অনেক দেশে সেগুলি সেবার স্বাক্ষর রাখতে ব্রতি হল। ১৯২৯ সালে ২০ দিন ৪ ঘণ্টায় গ্রাফ জেপেলিন ২১,৭০০ মাইল অতিক্রম করতে সমর্থ হয়। উড্ডয়নে তা ছিল একটি বিশ্ব রেকর্ড।

তখন বৃটেন, ফ্রান্স, ইটালি এবং আমেরিকা তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনে এয়ারশীপের অনেক উন্নতি করে। ক্রমে ঐগুলির দৈর্ঘ্য এবং গতি উভয়ই বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেসবের কোনটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮০০ ফুট আর কোন কোনটি ঘণ্টায় ৮০ মাইল ভ্রমণ করতে সমর্থ ছিল। এক সময় এয়ারশীপের প্রলয় ঘণ্টা শোনা গেল। দুর্ঘটনা যেন তাদের নিত্য সাথী হয়ে দাড়ায়। একটি দুঃখজনক ঘটনা এয়ারশীপ নির্মাণের উৎসাহ স্তিমিত করে ফেলল। ৬ই মে, ১৯৩৭ সাল। জার্মান জেপেলিন হিনডেনবার্গে এক বিষ্ফোরণ ঘটে। অগ্নি সেটিকে গ্রাস করে ফেলে। ঐ ঘটনায় ছয় ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেন। এরপর আর উল্লেখযোগ্য এয়ারশীপ নির্মাণ করা হয় নাই।
অবশ্য ব্লিম্প দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও প্রথম মহাযুদ্ধের মত অংশগ্রহণ করে। এই ধরনের ক্ষুদ্র নমনীয় এয়ারশীপ বা নজরদারি উরুক্কু বাহনগুলো যুদ্ধের সময় আকাশে টহল দিয়ে বেড়াত, সমুদ্রে সাবমেরিন খুজত। লম্বা তারে বাধা ব্লিস্পগুলি শত্রু বিমানের নীচু উচ্চতায় বোমা বর্ষণ ও গুলি বর্ষণ হতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান রক্ষা করার জন্যে ভিজাইন করা হতো। ক্রমে জার্মান ও বৃটেন-আমেরিকাসহ এ ধরার সকলদেশ থেকেই এয়ারশীপ বিদায় নেয়া।

এক পাশ থেকে দেখা রাইট ব্রাদ্রার্সের সর্বপ্রথম ইঞ্জিনচালীত বিমান। এটি ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ১২ সেকেন্ডে ১২০ ফিট, ১১ সেকেন্ডে ১৯৫ ফিট, ১৫ সেকেন্ডে ২০০ ফিট এবং ৫৯ সেকেন্ডে ৮৫২ ফিট উড্ডয়ন করে।

**************************

যান্ত্রিক বিমানের ক্রমবিকাশ ও সর্বাধুনিক বিমান

বহুদিন পূর্ব থেকে মানুষ ধাতবযানে আকাশ ভ্রমণের প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছিল। ১৮০৪ সালে লন্ডন শহরের যুবক জর্জ কেলে একটি গ্লাইডার বানিয়ে ফেলেন। তাঁর গ্লাইডারটির এক দিকে ছিল একটি লেজ। ওটা যানটিকে উপরে, নিচে এবং ডানে, বায়ে নিয়ন্ত্রণ করে পারত। তার গ্লাইডারের একমাত্র যাত্রী ছিল ১০ বৎসরের একজন বালক। উড্ডয়নের চিন্তা ধারায় তিনি ছিলেন তার যুগের চেয়ে অনেকটা অগ্রগামী। তখনো ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয় নাই। কিন্তু তিনি পেট্রোল নির্মিত কোন ইঞ্জিন ব্যবহারের সম্ভাবনা চিন্তা করতেন। তিনি আকাশযানের হরেক রকমের নকশা আঁকেন। ১৮৪৩ সালে তাঁর অংকিত নকশাটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য এবং তাঁর উন্নত চিন্তাধারার পরিচায়ক। ওটা ছিল একটি হেলিকপ্টার ও বিমানের মিলিতরূপ। তিনি সেটাতে ষ্টিম ইঞ্জিন ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।


জন স্ট্রিং ফেলোর এ্যারিয়াল ষ্টিম ক্যারেজের নকশা

রাইট ব্রাদার্সের বহুপূর্বেই কেলের মত অনেকেই আকাশ যান নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন। ১৮৪২ সালে উইলিয়াম হ্যানসন এবং জন স্ট্রিং ফেলো এ্যারিয়াল ষ্টিম ক্যারেজের নকশা আঁকেন। কাঠামোর ডিজাইন করেছিলেন হ্যানসন এবং ষ্টিম ইঞ্জিনের উদ্ভাবন করেন ষ্ট্রিং ফেলো। তাঁদের পরিকল্পিত বিমানটির পাখার দৈর্ঘ্য ছিল ১৫০ ফুট এবং ইঞ্জিনটি ছিল ২৫ থেকে ৩০ অশ্বশক্তিসম্পন্ন। পরে তারা ২০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট পাখাসম্পন্ন আরো একটি ছোট বিমানের নকশা করেন। বিভিন্ন কারণে বাস্তবে উভয় বিমানই আকাশে পাখা মেলতে ব্যার্থ হয়।

অবশ্য সেকালে তাদের ডিজাইন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল তাদের এ্যারিয়াল ষ্টিম ক্যারেজের ছবি। তাদের পথে আরো অনেকে গবেষণা করেন। অংকন করেন উন্নত নকশা। ফ্রান্সের আলফন্সো পেনাউড ১৮৭১ সালে বিমানের একটি মডেল আবিষ্কার করেন। তা চালনার জন্য রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়। ১১ সেকেন্ডে সেটি ১৩১ ফুট উড্ডয়ন করেছিল। এর চার বৎসর পর ইংল্যান্ডের টমাস মুই আকাশযানের একটি বিরাট মডেল তৈরি করেন। ওটার নাম দেওয়া হয় এ্যারিয়াল ষ্টিমার। তাতে স্টিম ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছিল। অবশ্য সেটি ভূমি থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি মডেলটিকে উঠাতে সমর্থ হয়েছিল। আসলে ভারী স্টিম ইঞ্জিনের সাথে হালকা অথবা অধিকতর ওজনদার কোন রকম মডেলই আকাশে উঠানো সম্ভব ছিল না। ১৮৭৬ সালে অন্তর্দহন ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয় এবং দ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকে। অবশ্য এই ধরনের ইঞ্জিন বিমানে সংযোজনের পূর্বে ষ্টিম ইঞ্জিন ব্যবহারের আরো প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে আকাশযানের আরো উন্নততর কাঠামোর ডিজাইন করা হয়েছিল।

উড্ডয়নের ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার লরেন্স হারগ্রেবের অবদানও খাট করে দেখলে চলবে না। তিনি এমন একটি বাক্স ঘুড়ি আবিষ্কার করলেন যাতে গ্লাইডার এবং উড়োজাহাজে ব্যবহারযোগ্য বিশেষ ধরনের পাখা সংযুক্ত করা সম্ভব। ইংল্যান্ড এর হুরাশিও ফিলিপস তার গবেষণা দ্বারা বিমানের পাখার উন্নতি করতে চেয়েছিলেন। তার বানানো একটি আকাশযানের উড্ডয়ন পরীক্ষা ১৮৯৩ সালে করা হয়েছিল। তাতে ছিল ভেনিশিয়ান ব্লাইন্ডের মত ৫০টি পাখা। সেটাতে সংযুক্ত করা হয়েছিল ষ্টিম ইঞ্জিন। যানটির শুধু পেছনের চাকা ভূমি হতে উপরে অল্প উঠতে পেরেছিল।

স্যার হিরাম ম্যাক্সিম ১৮৯৪ সালে চারটন ওজনের এক আশ্চর্য আকাশযান তৈরী করেন। তিনি ছিলেন লন্ডনে বসবাসরত একজন আমেরিকান। তিনি সেটিকে রেললাইনের উপর থেকে উড্ডয়ন করাতে চেয়েছিলেন। নির্দিষ্ট দিন সেটি ১৮০ হর্স পাওয়ারের দু’টি স্টিম ইঞ্জিনের সাহায্যে রেলপথের উপর দিয়ে ছুটে গেল। চাকা পথ থেকে সামান্য উপরে উঠল অতঃপর ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল। ১৮৯৭ সালে ফ্রান্স দেশের ক্লিমেন্ট আডের এভিয়ন থ্রী নামে একটি আকাশযান তৈরী করেছিলেন। তিনি দাবী করেছিলেন, ষ্টিম ইঞ্জিনচালিত এই যানটি আকাশে উড্ডয়ন করতে সমর্থ হয়েছিল।

ইতোপূর্বে আমি তোমাদিগকে অটোলিলিয়ানথালের আবিষ্কার সম্বন্ধে অল্প ধারণা দিয়েছিলাম। তিনি অনেক গ্লাইডার তৈরী করেছিলেন। দুই হাজার বারের অধিকবার তিনি সেগুলোর সাহায্যে উড্ডয়ন করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে তিনি তাঁর তৈরী একটি গ্লাইডারে আড়াই অশ্বশক্তিসম্পন্ন একটি মোটর সংযোজন করেন। সেটার জ্বালানী ছিল ঘনিভূত কার্বনিক এসিড গ্যাস। ৯ই আগস্ট তাঁর যান্ত্রিক যানে তিনি সওয়ার হলেন। দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হলেন। তাঁর শেষ উচ্চারণ ছিল, “অবশ্যই আত্মত্যাগ করতে হবে।”

অটোলিলিয়ানথালের একজন ইংরেজ ছাত্র পার্সি পিলচার একই উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনচালীত গ্লাইডার চালাতে গিয়ে মৃত্যুমুখে নিপতিত হন। তাঁর অপর একজন ছাত্র ছিল অকটেভ চেনুট। তিনি এক ডানা এবং দুই ডানা বিশিষ্ট বহু গ্লাইডার নির্মাণ করেন। ঐগুলিতে তিনি ও তাঁর ছাত্র এ এম হেরিং প্রায় ৭০০ বার উড্ডয়ন করেন। এই উড্ডয়ন পাগল লোকটির জন্মস্থান ফ্রান্স। বাল্য বয়সে তিনি আমেরিকা গমন করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তিনিও যান্ত্রিক আকাশযানের স্বপ্ন দেখতেন।

“ব্যার্থতাই সফলতার ভিত্তি” প্রবচনটি সর্বজন পরিচিত। আলোচিত কোন প্রচেষ্টা সফল হয় নাই সত্য, ঐগুলি ব্যার্থও হয় নাই। কেননা ব্যার্থ প্রচেষ্টার পথ ধরেই উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইট নামে দুই ভাই ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর সফলভাবে সর্ব প্রথম আকাশে উড্ডয়ন করতে সমর্থ হন।

তারা আমেরিকার কিটিহক সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি একটি স্থানকে উড্ডয়নের জন্য উপযুক্ত জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁরা তাদের দুই ডানা বিশিষ্ট চার সিলেন্ডারের পেট্রোল ইঞ্জিনের বিমানে সেদিন সফলভাবে চারবার আকাশে উড্ডয়ন করতে সমর্থ হন।

প্রথমবার তাঁরা ১২ সেকেন্ডে ১২০ ফুট উড্ডয়ন করেছিলেন। তাঁরা দ্বিতীয়বার উড্ডয়ন করতে সমর্থ হন ১১ সেকেন্ডে ১৯৫ ফুট। অতঃপর র তৃতীয়বার উড়েন ১৫ সেকেন্ডে ২০০ ফুট এবং শেষবার উড্ডয়ন করেন ৫৯ সেকেন্ডে ৮৫২ ফুট।

অনেক গবেষণার পর ১৯০৪ সালে তারা তাদের দ্বিতীয় বিমান নির্মাণ করেন। সে বিমান একটি গোচারণ ভূমির উপর ৬৮ একর পরিমাণ স্থান অতিক্রম করে। তারা ১৯০৫ সালে আরো উন্নত একটি বিমান নির্মাণ করেন। সেইটা ২৪.২ মাইল উড্ডয়ন করতে সমর্থ হয়েছিল।

মজার ব্যাপার যে ঐ সময় তার আবিষ্কারকে অনেকেই অবিশ্বাস করে। এমনকি আমেরিকা সরকারও তাদের আবিষ্কারকে গুরুত্ব দেয় নাই। ঐ সময় রাইট ব্রাদার্স মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য একখানা বিমান নির্মাণ করে দেওয়ার ইচ্ছায় তিনবার আবেদনও করেছিলেন। উল্লেখিত কারণে তাদের ইচ্ছা ব্যার্থ হয়।


চিত্র : প্রাথমিক দিনের কয়েকটি বিমান।

বিদ্যুৎ গতিতে রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের বিমান আবিষ্কারের খবর সমুদ্রের অপর দিকে ইউরোপে পৌঁছে যায়। ঐ মহাদেশের ফ্রান্স প্রথম বিমান নির্মাতা দেশ হিসাবে আত্ম প্রকাশ করে। ঐ দেশের দুই ভাই গাব্রাইল এবং চার্লস ভোশীন বিমানের প্রথম নির্মাতা। ১৯০৬ সালে আলবার্টো সান্টোস ডুমন্ট, ভোশেন ভ্রাতৃদ্বয়ের একটি বিমান পরিচালনা করেন। সে বিমান সম্মুখে না উড়ে পেছনের দিকে উড্ডয়ন করত। ১৯০৭ সালে তাঁদের তৈরী একটি বিমান এক ব্যক্তি পরিচালনা করেছিলেন। এটি ছিল দুই পাখাবিশিষ্ট উড়োজাহাজ। ফ্রান্সে বসবাসরত একজন ইংরেজ তাদের অপর একটি বিমানে উড্ডয়ন করেছিলেন একই সালে। ঐ বৎসরই লুই ব্লিরয়েট নামে এক ব্যক্তি একটি একপাখা বিশিষ্ট বিমান নির্মাণ করেন।
বিমান উন্নত ইঞ্জিন ও কাঠামোর মিলনে আরো উন্নত হতে থাকে। সেই সময় লিউ লেভাভাশিয়ার নির্মিত এন্তোনিতি বিমান খুবই উপযোগী যোগী ছিল।

১৩ই জানুয়ারী ১৯০৮ সাল।

ঐ দিন হেনরি ফারমেন একটি বিমান নিয়ে আকাশে উড়েন। চক্রাকারে একমাইল পরিভ্রমণ করেন। ঐ বৎসরই তিনি ‘এন্তোনিতি’ বিমানে ১৬ মাইল অতিক্রম করেন।
ইংল্যান্ডে স্যার এলিয়ট ভারনন রো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য ‘এভ্রো’ নামে বিমান নির্মাণ করেন। প্রায় একই সময় আমেরিকার গ্লেন কারটিস বিমান চালনা করে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন।

ক্রমে মার্কিন সরকারও তাদের সেনাবাহিনীর জন্য রাইট ব্রাদার্সের বিমানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। তারা সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের জন্য একটি বিমানের আদেশ দিতে সিদ্ধান্ত নেয়। অপর দিকে ইউরোপের ফ্রান্সে রাইট ব্রাদার্সের বিমান তৈরীর জন্য একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়।

অরভীল রাইট তাঁদের বিমানের কার্যকারীতা সেনাবাহিনীর নিকট প্রমাণের জন্য একটি বিমান নিয়ে ওয়াশিংটনের নিকট ফোর্ট মেয়ারে গমণ করেন এবং উইলবার রাইট অপর একটি বিমান নিয়ে ফ্রান্সের লি ম্যানস এ গমন করেন। ফ্রান্সে উইলবারের বিমান ১৯০৮ সালের ৮ আগস্ট আকাশে ডানা মেলে। অবশেষে সফলভাবে আবতরণ করে। প্রমাণিত হয় তাঁর বিমানটিই সে যুগের উত্তম বিমান।

অরভীল ফোর্ট মেয়ারে ৩রা সেপ্টেম্বর উড্ডয়ন করেন ও সফল ভাবে অবতরণ করেন। দর্শকেরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। তিনি একই মাসে আরো অনেকবার উড্ডয়ন করেন। ১৭ই সেপ্টেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট থমাস সেলফরীজ নামে সিগন্যাল কোরের একজন অফিসারকে নিয়ে আকাশে উড়েন। ২৫ ফুট উর্ধ্বে আরোহণের পর প্রপেলারের ত্রুটির কারণে বিমান দুর্ঘটনায় নিপতিত হয়। থমাস সেলফরীজ মারা যান। তিনি বায়ু থেকে ভারি ধরনের বিমান দুর্ঘটনা প্রথম শহীদ।

বলা যেতে পারে অনেক প্রাণের বিনিময়ে বিমান আবিষ্কৃত হয়েছে। আজকে আমরা যেসব সর্বাধুনিক বিমানের সাথে পরিচিত সেগুলি উল্লেখিত বিমানগুলিরই উন্নত সংস্করন। বিবর্তনের ধারায় অনেক গবেষণা এবং জীবন বিসর্জনের পর ওরা আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

এঙ্গলো – ফ্রান্স কনকর্ড বিমান এ কালের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সুপার – সনিক যাত্রীবাহী বিমান। এটা বৃটেন ও ফ্রান্সের মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। এই বিমান ১৪৪ জন যাত্রী বহনে সমর্থ। এটা একটি সুপারসনিক ধরনের বিমান বিধায় শব্দের দুইগুণ বেগেও এই বিমান উড্ডয়নে সমর্থ। ভূমি থেকে ৬০,০০০ ফুট উচ্চতায় কনকর্ড বিমান উড়ে যেতে পারে। রুশ সুপারসনিক বিমান টি ইউ-১৪৪ ও যাত্রীবাহী বিমান। উভয় বিমানই এখন আকাশে উড়ছে না। সনিক বূমের কারণে আবহাওয়া মন্ডলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াও বিশেষজ্ঞ গন যাত্রীবহনের জন্য সুপারসনিক গতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। সংশ্লিষ্ট নির্মাতারা অবশ্য বিশেষ যান্ত্রিক সমস্যা নিরসন করে হাইপার সনিক যাত্রীবাহী বিমান বানাতে চাচ্ছে।


চিত্রঃ কনকর্ড বিমান (সৌজন্যেঃwikipedia)

আধুনিক যুদ্ধ বিমানের মাঝে আমেরিকার ফেনটম, ইংল্যান্ড এর হ্যারিয়ার, এনগ্লু – ফ্রান্স জাগুয়ার, ফ্রান্সের মিরেজ, রাশিয়ার মিগ – ২৯ ধরনের বিমান বিখ্যাত। আমেরিকার ডিজাইনকৃত সর্বাধুনিক বোমারু বিমান নর্থহপ বি-২। এরপরও আরো শক্তিশালী বিমানের ডিজাইন হয়েছে। চীন বানাচ্ছে উন্নত মানের বিমান। ভারত আর পাকিস্তান নিজ নিজ প্রয়োজনে বিমান শক্তি বৃদ্ধি করতে


চিত্রঃ নর্থহপ বি-২ বিমান (সৌজন্যেঃwikipedia)

বর্তমান বিমানযুদ্ধে যুদ্ধ বিমানের চেয়ে সামরিক পরিবহন বিমানের গুরুত্ব মোটেও কম নয়। যুদ্ধেও শান্তিতে সৈন্য পরিবহন, খাদ্য ও অস্ত্র সরবরাহ এই বিমান দ্বারা করা হয়ে থাকে। যুদ্ধের ময়দানে প্যারাসূট দিয়ে সৈন্য অবতরণ এই বিমান থেকেই করানো হয়। বন্যা, ভূমিকম্প এবং অন্য যে কোন ধরনের দুর্যোগে প্যারাসূটের সাহায্যে উদ্ধারকারী দল অথবা খাদ্য নামানোর প্রয়োজন হলে এই বিমানের সাহায্য নেওয়া হয়। যে কোন ধরনের যাত্রাবাহী বিমান এমনকি জাম্বু জেটও এই কাজে ব্যবহার করা যায়। বিশাল জাম্বু জেট বিমানে গতি বৃদ্ধির জন্য বিশাল ও ভিষন শক্তিশালী ইন্জিন থাকার কারণে তা যেনতেন অবতরন ক্ষেত্রে নামতে পারেনা যদিও সেসবে গতি কমানোর জন্য থ্রাস্ট রিভার্সার যুক্ত রয়েছে। বিস্ময়কর থ্রাস্ট রিভার্সার নিম্ন লিংকে ক্লিক করে দেখে নিন: https://youtu.be/pmepKkQ6I9whttps://youtu.be/pmepKkQ6I9w

অবশ্য সামরিক বাহিনী উল্লিখিত কাজের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত পছন্দমাফিক ধরনের বিমান ব্যবহার করে থাকে। এই ধরনের বিমানে যাত্রাবাহী বিমানের মত আরাম আয়েশের ব্যবস্থা থাকে না। তবে রসদ উঠানো নামানোর জন্য লেজের নিচে একটি বিশেষ দরজা (ব্যাক ডোর/রেম ডোর) থাকে। ভারী বস্তু উঠানোর জন্য থাকে বিশেষ ধরনের লিফটের ব্যবস্থা। আধুনিক সামরিক বাহিনীর জন্য আমেরিকার সি-১৩০ বিমান খুবই উপযোগী। জার্মান ডরনিয়ার এবং রাশিয়ার তৈরী এন্তোনভ বিমানগুলিও বিখ্যাত। দুনিয়ার সর্ববৃহৎ সামরিক বাহিনীর পরিবহন বিমানটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে নির্মিত আন্তনভ – ২২৫ (মিরিয়া)। বিশাল খরচ আর মার্কেট পাওয়া না পাওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করে এ ডিজাইনের বিমান মাত্র একটিই বানানো হয় যা রুশ – ইউক্রেনের যুদ্ধে কোন একদিন রুশ হামলার শিকার হয়ে বিনষ্ট হয়।


চিত্রঃ ডরনিয়ার পরিবহন বিমান।

বর্তমান যুগে হেলিকপ্টারের ব্যবহারও খুবই ব্যাপক। সামরিক বাহিনী এবং বেসমারিক সংস্থা বিভিন্ন প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে থাকে। সিকোরস্কি, চিনুক, বেল, পোমা, এলিউট এবং রাশিয়ার এম আই সিরিজের হেলিকপ্টারগুলি বিশ্ববিখ্যাত।


সিকরঙ্কি এস-৮০ এম-১ হেলিকপ্টার (সৌজন্যে :wikimedia )

***************************

বিভিন্ন ধরনের বিমান এবং ওদের উড্ডয়ন রহস্য

বিভিন্ন ধরনের বিমানের শব্দে বর্তমান বিশ্বের আকাশ মুখরিত। বেলুন আবিষ্কারের পর থেকে আকাশযানের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল আজো তা বজায় আছে। তোমরা এ পর্যন্ত যে সকল বিমানের সাথে পরিচিত হয়েছ ওদের সবই মাত্র দুই ধরনের বিমানের অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ্যারোষ্ট্যান্ট বা বেগহীন বায়ুচালীত বিমান এবং এ্যারোডাইন বা বেগময় বায়ুচালীত বিমান।

এ্যারোষ্ট্যাট বায়ু থেকে হালকা বায়বীয় পদার্থ অথবা উত্তপ্ত বায়ু দ্বারা পরিচালিত বিমান। এই জাতীয় বিমানের জন্য প্রয়োজন ছিদ্রহীন রাবার অথবা লিলেনের থলে। এসব হালকা গ্যাস দ্বারা পূর্ণ করে অথবা সাধারণ বায়ু ক্রমাগত উত্তপ্ত করার ব্যবস্থা করে আকাশে উড্ডয়ন করাতে হয়। উল্লেখ্য যে উত্তপ্ত বায়ু সাধারণ বায়ু থেকে হালকা। এই জাতীয় বিমান ভূমি থেকে উড্ডয়ন করে এবং বায়ুতে ভাসতে থাকে কারণ বিমানটি বায়ুর সমপরিমাণ অথবা তা থেকে অধিক স্থান জুড়ে থাকে। তা ব্যতীত যানটির উজনও ঐ পরিমাণ বায়ুর সমান অথবা বায়ু থেকে কম। বেলুন এবং এয়ারশীপ এই জাতীয় বিমান।

বেলুন যুগে চালক ও যাত্রী পরিবহনের জন্য বেলুনের নিচের দিকে একটি ঝুড়ি ঝুলানো থাকত। বায়ুর গতিপথই ছিল বেলুনেরও গতিপথ। বায়ু প্রবাহের উল্টা দিকে বেলুন চলতে পারত না। পরে অবশ্য ইঞ্জিন, রাডার ইত্যাদি স্থাপন করার ফলে তা সকল দিকেই চলতে সমর্থ হয়েছিল। এয়ারশীপ হলো আকৃতি পরিবর্তীত যান্ত্রিক বেলুন। আকাশে যে কোন দিকে এয়ারশীপ চালানো যেত। সে বাহনে পরিচালক ও যাত্রীদের জন্য উপযুক্ত কেবিন সংযুক্ত থাকত যাতে তাদের সফর আরামদায়ক হয়।

এ্যারোডাইন বায়ু থেকে ভারী জাতীয় বিমান। এর চারিদিকের গতিময় বায়ুর প্রতিক্রিয়া কাজে লাগিয়ে এটি আকাশে উড্ডয়ন করে, একস্থান থেকে অপর স্থানে উড়ে বেড়ায় এবং ভূমিতে অবতরণ করে। গ্লাইডার, সেইলপ্লেন, ড্রোন, এ্যারোপ্লেন, সিপ্লেন, অটো জাইরু, হেলিকপ্টার ইত্যাদি এই ধরনের বিমান।

উল্লেখিত সকল বিমান বায়ু থেকে ভারী হলেও সেসবের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। প্রত্যেকের আদল/ধরন এবং কর্মদক্ষতাও ভিন্ন। নিম্নে আলাদা আলাদাভাবে সে সব সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
গ্লাইডার এবং সেইলপ্লেন: এইগুলি ইঞ্জিনবিহীন বিমান। বিমানগুলির ডানা স্থির এবং হালকা। বহিরাকৃতি খুবই এ্যারোডাইনামিক অর্থাৎ বায়ু ভেদ করে যাওয়ার সময় খুব কম বাধার দৃষ্টি করে অগ্রসর হতে পারে। উভয় ধরনের বিমানেই চালকের জন্য ছোট্ট একটি ককপিট থাকে, যা থেকে চালক একটি মাত্র নিয়ন্ত্রণদন্ড এবং অল্প কয়েকটি ইনষ্ট্রুমেন্টের সাহায্য নিয়ে বিমানগুলি পরিচালনা করে থাকেন। উভয়টিই বর্তমান কালে স্পোর্টস বিমান হিসাবে পরিচিত। কোথাও কোথাও খুবই প্রাথমিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের জন্য এইগুলি ব্যবহৃত হয়। এক সময় এদেশেও সামরিক ক্যাডেটগণকে গ্লাইডারে প্রাথমিক উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে । বালক বেলায় ঢাকা ফার্মের আমার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলাধুলার ময়দান থেকে তেজগাঁও বিমান বন্দরের রানওয়েতে গ্লাইডার উঠা নামা করতে দেখে চমৎকৃত হতাম!
এ্যারোপ্লেন: স্থির পাখা বিশিষ্ট সকল বিমানই এ্যারোপ্লেন। পাখাগুলি ফিউজলেজের সাথে সংযুক্ত থাকে। ফিউজলেজ এ্যারোপ্লেনের প্রধান অংশ। কন্ট্রোল সারফেস, ইঞ্জিন, ল্যন্ডিঙ গিয়ার ইত্যাদি সকল কিছুই ফিউজলেজের সাথে সংযুক্ত থাকে। এতে আছে ককপিট তথা ফ্লাইট ডেক। এটি থেকেই চালক বিমানটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তাতে স্থাপিত কণ্ট্রোল কলাম এবং অন্যান্য ইনস্ট্রুমেন্টের সাহায্যে। যাত্রী বিমানে ককপিটের (ফ্লাইট ডেক) পেছনে থাকে যাত্রী কেবিন। মাল বহনের জন্য থাকে নির্দিষ্ট স্থান।

আধুনিক বিমানে বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। ফলে ঐগুলির উঠা – নামার জন্য বড় রানওয়ের প্রয়োজন হয় । পৃথিবীর সকল স্থানে বড় রানওয়ে পাওয়া সমস্যার ব্যাপার। ফলে নির্মাতাগণ খাড়াভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণে সক্ষম বিমান নির্মাণের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তাদের গবেষণার ফসল ভিটুওএল(VTOL) বিমান তথা ভারটিক্যাল টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং অর্থ খাড়াভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণে সক্ষম বিমান। নামেই বুঝা যায় এই ধরনের বিমান খাড়াভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণে সমর্থ। এইভাবে উড্ডয়ন এবং অবতরণের জন্য বিশেষ বিশেষ বিমান বিশেষ বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। কোন কোন বিমানের ইঞ্জিনের নির্গমন নল খাড়াভাবে উঠা নামার জন্য নিচের দিকে নামানোর বা নিম্ন মুখী করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঐ সময় ইঞ্জিনের সম্মুখভাগ উপরের দিকে উঠে যায় এবং ইঞ্জিনের কম্প্রেসার সজোরে নির্গমন নল দিয়ে চাপপূর্ণ গ্যাস নিচের দিকে নিক্ষেপ করতে সমর্থ হয়। ফলে বিমানটি খাড়া উড্ডয়ন করে। একই পদ্ধতিতে অবতরণকালেও এমন বিমান নির্গমন নলের অবস্থান পরিবর্তন করে থাকে। বৃটিশ হকার সিডলি হেরিয়ার এবং এ্যাংলো ফ্রান্স জাগুয়ার এই ধরনের বিমান।

চিত্রঃ হকার সিডলি হেরিয়ার বিমান।

নবনির্মিত ‘স্পিরিট অব আমেরিকা’ নামের একটি জেট কারকে নেভাদার ব্লাক রক মরুভূমির উপর দিয়ে ঘন্টায় ৩৮১ মাইল বেগে ছুটতে দেখা যাইতেছে। অনেক আগেই এই গাড়ীটির পরীক্ষামূলক ড্রাইভিং এর কথা থাকলেও মরুর আবহাওয়ার কারণে তারিখ পিছাইয়া দেওয়া হয় এবং (পরে) প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ীটি চালাইয়া দেখা হয়। ‘রয়টার’

এই সমস্ত বিমানে লেভেল ফ্লাইটের সময় ইঞ্জিনকে যথাস্থানে অর্থাৎ সাধারণ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে নির্গমন নলও নিচ থেকে পেছনের দিকে চলে যায় এবং কম্প্রেসার, গ্যাস নির্গমণ নল দিয়ে পেছনে নিক্ষেপ করতে থাকে। বিমানও সম্মুখে অগ্রসর হয়। জার্মানির ডরনিয়ার (ভিটিওএল) এর এই ধরনের বিমান। এটি একটি পরিবহন বিমান বিধায় বেশ বড় ধরনের বিমান। খাড়াভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য বিশেষ ধরনের বিমানটির উভয় ডানার প্রত্যেকটির নিচে বিশেষ ধরনের কূপের ভিতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চারটি জেট ইঞ্জিন স্থাপন করা হয়েছে। উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য শুধুমাত্র সেগুলি ব্যবহার করা হয়। লেভেল ফ্লাইট কালে ডানার নিচের প্রধান ইঞ্জিনগুলি সচল করে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।


চিত্র: এলটিভি এক্স সি-১৪২ ট্রান্সপোর্ট বিমান

এল টি ভি এক্স সি-১৪২ ট্রান্সপোর্ট বিমান খাড়াভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য অন্য একটি বিশেষ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছে। এই বিমান এর পাখার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। খাড়া উড্ডয়ন ও অবতরণের নিমিত্তে ডানার সম্মুখভাগ উপরের দিকে উঠানো হয়। ফলে ইঞ্জিনের সম্মুখভাগও উপরের দিকে উঠে যায় এবং এর নির্গমন নলের খোলা অংশ নিচের দিকে নেমে যায়। ইঞ্জিনের কম্প্রেসার সজোরে উত্তপ্ত গ্যাস নিচের দিকে নিক্ষেপ করে বিমানটিকে খাড়া উড্ডয়নে সহায়তা করে। লেভেল ফ্লাইটের সময় ডানাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়। বিমানটির অবতরণকালেও ডানার অবস্থানের পরিবর্তন করতে হয়। এস টি ও এল (STOL) বা সর্ট টেকঅফ এন্ড লান্ডিং বিমানও এক ধরনের এ্যারোপ্লেন। নামেই বুঝায় যায় এই ধরনের বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য ক্ষুদ্র রানওয়ের প্রয়োজন হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বিমান নামাতে পাইলট রিভার্স থ্রাস্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। সেটি হলো, থ্রাস্টকে স্বাভাবিকের বিপরীত দিকে প্রজেক্ট করা হয় এবং এটি অবতরণের আমেরিকারআমেরিকারপরে, প্রত্যাখ্যান করা টেক অফের ক্ষেত্রে বা কিছু সীমিত ক্ষেত্রের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে একটি বিমানের গতি কমাতে ব্যবহৃত হয়” (There are three common types of thrust reversing systems used on jet engines: the target, clam-shell, and cold stream systems.) আরো জানতে ক্লিক করুন: https://en.m.wikipedia.org/wiki/Thrust_reversal#:~:text=There%20are%20three%20common%20types,shell%2C%20and%20cold%20stream%20systems.

আমেরিকা, রাশিয়া, চীন ও অন্যান্য বিমান নির্মাতা দেশ এই ধরনের অনেক বিমান নির্মাণ করেছে। জেনারেল ডাইনামিকস এফ ১১১ এই ধরনের বিমান।

চিত্র : জেনারেল ডাইনামিকস এফ-১১১ বিমান

এটা একটি আশ্চর্য ধরনের বিমান। ক্ষুদ্র রানওয়েতে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য এর ডানাগুলি সোজা করতে পারে এবং খুবই দ্রুতগতিতে ছুটে যাওয়ার জন্য ডানাগুলিকে পেছনের দিকে নিতে পারে। এই ধরনের গুণসম্পন্ন বিমানকে ভেরিয়েবল জিওমেট্রি বিমান বলে। নিচে উভয় অবস্থার দুটি ছবি দেওয়া হল।


চিত্র: উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় এফ-১১১ বিমানের পাখার অবস্থা ও সুপারসনিক বেগে উড্ডয়নরত এফ-১১১

সিপ্লেন: সিপ্লেন দেখতে সাধারণ বিমানের মতো। তবে ডিজাইন পানি হতে উড্ডয়ন, তাতে অবতরণ এবং পানিতে ভেসে থাকার উপযোগী।
হেলিকপ্টার: হেলিকপ্টারও এ্যারোডাইন এবং ভিটুওএল ধরনের বিমান। অবশ্য এটা প্রপেলার অথবা জেট ইঞ্জিন দ্বারা সরাসরি পরিচালিত হয় না বরং বিমানটিতে উপরে স্থাপিত প্রায় প্রপেলারের মত দেখতে ঘূর্ণায়মান রোটরের প্রতিক্রিয়ার ফলে পরিচালিত হয়। পরে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।


চিত্রঃ বেল-২২২ হেলিকপ্টারের রোটর।

আমরা হালে ক্রমে বহুমূখী ড্রোনের সাথে সাথে উন্নত প্রযুক্তির বিমান বিষয়ে জানতে পারছি ও প্রযুক্তির হরেক রকমের ব্যবহারের সাথে পরিচিত হচ্ছি। ড্রোন হল দূর নিয়ন্ত্রিত বিমান ও হেলিকপ্টার নকশার বায়ুচারী উড়ল যন্ত্র। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এমন বিমান হামলায় সিরিয়ার আইএস, আফগানিস্তানে তালিবানদের বহু মানুষ হতাহত করেছে। হত্যা করেছে ইরানি জেনারেল সুলাইমানিকে। এ প্রযুক্তি এখন তুরষ্ক ও ইরানসহ বহু দেশের হাতে চলে গেছে। ইউক্রেনের আকাশে এখন রুশ-ইরানের ড্রোন মার্কিন-ইউরোপ-ইসরাইলীয় ড্রোনের বিপক্ষে সেয়ানে সেয়ানে লড়ছে।

বিমানের জন্মই হয়েছে মানুষের প্রয়োজনে আকাশে উড্ডয়ন করার জন্য। এরা ভূমির মায়া ত্যাগ করে আকাশে ডানা মেলে, নদ-নদী, বনবাদার, বিস্তর মরুভূমি, সমুদ্র মহাসমুদ্র অতিক্রম করে দেশ থেকে দেশান্তরে গমন করে। অতঃপর স্বচ্ছন্দে ধূলির ধরার রান ওয়েতে অবতরণ করে। সিপ্নেনকে অবশ্য সাগরের বুকে অবতরণ করতে হয়। নিম্ন লিংকে ক্লিক করে ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।https://deshibideshisahitto.wordpress.com/2023/05/08/watch-the-worlds-largest-seaplane-airlines-airlines-of-maldives-aviation-in-maldives-on-youtube/

এটা কেমন করে সম্ভব? কি এর গোপন রহস্য?

এ্যারোপ্লেন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি এই বায়ু মন্ডলের উরুক্কু যান। বায়ু আছে বলেই এরা উড্ডয়ন করতে পারে, এক স্থান থেকে অপর স্থানে যেতে পারে। বায়ুর অস্তিত্ব না থাকলে কোন ধরনের বিমানই আবিষ্কার করা সম্ভব হত না। অবশ্য রকেট বা মহাকাশ যান পরিচালনার জন্য কোন বায়ুমন্ডলের প্রয়োজন হয় না।

বায়ু মন্ডল ভূপৃষ্ট থেকে উর্দ্ধদিকে প্রায় ৬০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। অবশ্য ভূপৃষ্ঠের বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ সর্বদাই অধিক। উর্ধ্বদিকে বায়ুর চাপ ও ঘনত্ব ক্রমে কমতে থাকে। এই বায়ুমন্ডলের নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত বিমান চালনা করা সম্ভব।
বিমান ও হেলিকপ্টারের আকাশে উড়ার গোপন রহস্য বিমানের ডানা ও হেলিকপ্টারের রোটরের আকৃতির মধ্যে লুকিয়ে আছ। যখন বিমান বায়ুর মধ্য দিয়ে পরিচালনা করা হয় অথবা হেলিকপ্টারের রোটর ঘুরানো হয় তখন সেগুলোর বিশেষ আকৃতির কারণে ডানার অথবা রোটরের উপরের বায়ুর বেগ তাদের নিম্নস্থ বায়ুর বেগ হতে অধিক হয় ফলে উল্লেখিত ডানার উপরস্থ স্থানের বায়ুর চাপ তুলনামূলক ভাবে ডানার নিম্নস্থ এলাকার চাপ থেকে হয় কম।

মহাত্মা বার্ণূলী এই সত্যটি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। ভেনচুরী টিউবের ভেতর দিয়ে তরল পদার্থ প্রবাহিত করে এটা প্রমাণ করা সম্ভব।

যেহেতু ডানা অথবা রোটরে চলন্ত অথবা ঘুরন্ত অবস্থায় উপরস্থ এলাকা নীচের স্থান থেকে নিম্ন চাপ অঞ্চল স্বাভাবিক ভাবেই নীচের উচ্চচাপ ঐগুলিকে ঠেলে উর্দ্ধদিকে উঠিয়ে দেয়। তা Lift নামে পরিচিত।

হেলিকপ্টার আবিষ্কার

https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/f/fa/HE2G8.jpg/
Paul Cornu’s helicopter of 1907.
চিত্র: হেলিকপ্টারের আগমন ও ক্রমবিকাশ

১৯৪০ সাল পর্যন্ত উড়োজাহাজ ডিজাইনারগণ কর্তৃক প্রপেলারহীন জেট বিমান আবিষ্কৃত হয়েছে। অনেক আবিষ্কারকই কিন্তু একটু ভিন্ন ধরনের বিমানের জিডাইন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছিলেন যা বিশেষ ধরনের কাজের জন্য ধীরগতিতে উড়তে পারবে। একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে।

আজকের হেলিকপ্টার এই ধরনের একটি বিমান। এটি ধীরগতিতে উড়তে পারে, আকাশে একই স্থানে স্থিরভাবে থেকে উড়তে পারে, কোন কোনটি নিচে ভারী বস্তু ঝুলিয়ে ছুটে যেতে পারে। অগ্নি নির্বাপন করার জন্যে বিশেষ ভিজাইনের পাত্রে পানি বা অন্য কোন তরল কেমিক্যাল নিয়ে দ্রুত অপারেশন যেতে পারে।

হেলিকপ্টার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি বিমান প্রকৌশল বিভাগের জটিল শাখা। আশ্চর্যের কথা ১৫০০ সালে লিউনার্দো দ্য ভিনচি এই ধরনের একটি বিমানের ডিজাইন (নকশা) করেছিলেন। তিনি এর স্পিরিঙ চালিত ছোট্ট একটি মডেলও তৈরী করেছিলেন। আরো আশ্চর্য যে পিরামিড মাঝে দেয়ালে আঁকা কিছু চিত্র মাঝে দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাল জমানায় আকাশে উড়ে এমন হেলিকপ্টার আকৃতির চিত্র। এখন পর্যন্ত আমরা কেউ এর চিত্রকর কে ছিলেন তা জানতে পারিনি।

তবে ইতিহাস থেকে জানা যায় যে চীন দেশের লোকেরা বহু দিন পূর্ব থেকেই এই ধরনের বিমানের চিন্তা ভাবনা করত। তারা খেলনা হেলিকপ্টার বানাতে পারত। ১৭৮৪ সালে একটি সাধারণ খেলনা হেলিকপ্টার বনিকদের তেজারতি পন্য হিসেবে চীন দেশ থেকে ইউরোপে পৌঁছে।

লনয় ও বিয়েনভেনো নামে দুইভাই কাজে লেগে গেলেন। তাঁরা একটি হেলিকপ্টার তৈরী করে ফেললেন। তাঁরা সেটাতে লাগালেন পাখির পালকের রোটর। ঠিক যেন চীন দেশের ঐ হেলিকপ্টার।

ইংরেজ বিজ্ঞানী জর্জ কেলে খেলনাটি দেখে আকৃষ্ট হলেন। ওটার অনুকরণে তৈরী করলেন একটি হেলিকপ্টার। এতেই তিনি ক্ষান্ত হলেন না। আরো উন্নত ধরনের হেলিকপ্টার বানানোর নেশা তাকে উম্মাদ করে তুলল। তিনি ধাতু দিয়ে ঐ রকম একটি যন্ত্র তৈরী করলেন। প্রচেষ্টা চালালেন সেটাকে উর্ধ্বে প্রেরণ করতে। যন্ত্রটি ৯০ফুট পর্যন্ত উর্ধ্বারোহন করতে সমর্থ হয়েছিল। পরে তিনি আরো অনেকগুলি ডিজাইন করেছিলেন। সেসবের মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ডিজাইনটি ছিল যেন একটি হেলিকপ্টার ও এ্যারোপ্লেনের মিশ্ররূপ।
গবেষণা ও ডিজাইন আপন গতিতে এগিয়ে চলল। ইতালিতে ভিতারিও সার্টি ১৮২৮ সালে একটি হেলিকপ্টারের ডিজাইন করেন। ফ্রান্সেও চলছিল গবেষণা। ১৮৬৩ সালে ঐ দেশের ভিকতে দ্য পনটন দ্য আমিকুর্ত হেলিকপ্টারের একটি নতুন ডিজাইন করলেন। পরবর্তী উল্লেখযোগ্য ডিজাইনটি ১৮৭৮ সালে করেছিলেন ইতালির ইনরিকো ফরলানিনি। অবশ্য ঐ গুলি কখনো আকাশে উড়েনি।

১৯০৭ সালে ব্রিগয়েট ব্রাদার্স নামে পরিচিত দুইভাই লুই এবং জেকুইস একটি হেলিকপ্টার নির্মাণ করলেন। সেটার একটি দন্ডে চারটি রোটর স্থাপন করা হয়েছিল। একটির নিচে অপরটি। হেলিকপ্টার লুইকে নিয়ে আকাশে উড়ল। তবে মুক্তভাবে নয়। চারজন লোক দন্ডটি ধরে রেখেছিল। এটিই ছিল হেলিকপ্টারে সর্বপ্রথম উড্ডয়ন।

এই ধরনের ব্যোমযানে সর্বপ্রথম মুক্তবাবে আকাশে উড়েন অপর একজন ফরাসী আবিষ্কারক পল কর্নো, লুইয়ের উড্ডয়নের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর। ১৯০৮ সালে লুই ব্রিগয়েট আর একটি হেলিকপ্টার নির্মাণ করেন। প্রাথমিক স্তরের এই যানটি কিছুটা উন্নত ছিল কিন্তু এগুলোর কোনটিকেই যথার্থ হেলিকপ্টার বলা চলে না।

একটি কার্যকর হেলিকপ্টার নির্মাণে বহুবিধ বাস্তব সমস্যা দেখা দেয়। আবিষ্কারকগণও সমস্যা সমাধানের উপায় নির্ধারণের জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নামেন। ১৯২৩ সাল স্পেনের জুয়ান দ্য লা সিয়েরভা বিমানের সাথে হেলিকপ্টারের ধারণার মিলন ঘটান। এটা ছিল সে সময়ের বিমানের মতই তবে উপরে লাগানো হয়েছিল একটি রোটর। তিনি ঐটির নাম দেন অটো জাইরো।

তার অটোজাইরোকে হেলিকপ্টার বলা চলে না। কারণ উপরের বড় রোটরটি কোন ইঞ্জিন দ্বারা চালীত হতনা। বিমানটির সম্মুখে ছিল প্রপেলার। ইঞ্জিন একে নিয়ন্ত্রণ করত। বিমানটি সম্মুখের দিকে চলতে থাকলে উপরের রোটর ঘুড়তে থাকত এবং সেই ঘূর্ণায়মান রোটর বিমানকে উড্ডয়নে সহায়তা করত মাত্র। তা সোজা খাড়া উঠানামা করতে পারত না কিন্তু অল্প স্থানে উঠানমা করতে পারত ফলে হেলিকপ্টার আবিষ্কারের পরে অটোজাইরো আকাশ থেকে ক্রমে বিদায় নেয়।


অটো জাইরোর চিত্র।

১৯৩৮ সালের দিকে আকাশে উন্নত ধরনের হেলিকপ্টার দেখা যেত। ঐ সময় জার্মানিতে ফকী এসজেলিস এস ডব্লিউ-৬১ ধরনের হেলিকপ্টার নির্মিত হত। এটার সম্মুখে ছিল প্রপেলার এবং উপরে দুইদিকে ছিল দুইটি রোটর। এটা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৬ মাইল বেগে ১১০০০ ফুটের উর্ধ্ব দিয়ে ৮০ মিনিট পর্যন্ত আকাশে উড্ডয়ন করতে পারত।

ইগর সিকরস্কি একজন সফল হেলিকপ্টার নির্মাতা। তার জন্মস্থান রাশিয়া। পরে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি টর্কের অর্থাৎ রোটরের ঘূর্ণনের উল্টাদিকে লেজের ঘুড়ে যাওয়ার সমস্যা সমাধান করেন। তিনি লেজের কাঠামোর প্রায় শেষ প্রান্তে বাম দিকে ছোট্ট একটি রোটর স্থাপন করেন। এটা অর্থাৎ টেইল রোটর হেলিকপ্টারের ভারসাম্যতা আনয়ন করে। একে লেভেল ফ্লাইট, হোভারিং ইত্যাদি সকল কিছুতে সহায়তা করে।


চিত্রঃ সিকরস্কি এস-৫৮

গবেষণা চলতে থাকে। অন্য আবিষ্কারকেরা এই সমস্যা সমাধানে ভিন্নপথ অবলম্বন করেন।

একজন নির্মাতা এক রোটরের উপর অপর রোটর স্থাপন করেন। রোটর দুটিকে পরষ্পর বিপরীত দিকে ঘুরতে হত। অপর নির্মাতা দুই পার্শ্বে দুইটি, কেউবা দুই প্রান্তে দুইটি রোটার স্থাপন করেন। উল্লেখ্য যে সকল ক্ষেত্রেই বিপরীত দিকে ঘূর্ণনের মাধ্যমে ভারসাম্যতা রক্ষা করা হত। আজও টর্ক সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে উল্লেখিত যে কোন একটি পদ্ধতি প্রত্যেক প্রকার হেলিকপ্টারে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য আরো উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বর্তমান বিশ্বের বিমান নির্মাতা প্রায় সকল দেশ হেলিকপ্টারও নির্মাণ করে থাকে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের হেলিকপ্টার অধিক পরিচিত। সর্বাধিক বিখ্যাত হেলিকপ্টারগুলির মধ্যে সিকরস্কি, বেল, বোয়িং, চিনুক, হিলার, এলিউট এবং রাশিয়ার এম আই ধরনের হেলিকপ্টারগুলি উল্লেখযোগ্য।

ভারত, ইরান, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ বিমান নির্মাণ শিল্পে ক্রমে উন্নতি লাভ করছে। ভারত ও ইরান নির্মিত ছোট্ট ধরনের হেলিকপ্টার তাদের সমারিক বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। যথাযথ ভাবে যুদ্ধ মহড়া , উদ্ধার, ত্রাণ সবরাহ ইত্যাদি কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকার দেশেই জঙ্গি বিমান বানানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে । নিম্ন লিংকে ক্লিক করে প্রাসঙ্গিক ভিডিওটি দেখুন:https://deshibideshisahitto.wordpress.com/2023/05/09/watch-how-many-years-does-bangladesh-need-to-build-its-own-warplane-air-force-need-own-fighter-project-on-youtube/

হেলিকপ্টার আবিষ্কারের ফলে উদ্ধার কার্য, ত্রান বিতরণ, সফর, অগ্নিনির্বাপন, অনুসন্ধান ইত্যাদি সহজ হয়েছে। এর মাধ্যমে দ্রুত গতিতে আহতদের হাসপাতালে বহন করা যায়, বন্যাদূর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যায়। যে সমস্ত এলাকায় বিমান যোগাযোগ সম্ভব নয় সে সমস্ত এলাকায় হ্যালিপ্যাড নির্মাণ করে দ্রুত যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করা সম্ভব।

রাশিয়া, আমেরিকা, বৃটেন ইত্যাদি দেশে বড় বড় হেলিকপ্টার নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়। আধুনিক আকাশযুদ্ধে হেলিকপ্টার গানশীপের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য শ্লথগতির কারণে শত্রুদেশের খুবই ভেতরে বোমাবর্ষণে এর ব্যবহার খুবই নগণ্য। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য, অস্ত্র, রসদ ইত্যাদি প্রেরণে হেলিকপ্টার তুলনাহীন। বড় হেলিকপ্টার যুদ্ধের ময়দানে প্রয়োজনে সেনা ও রসদ বহন করে নিয়ে যায়। এসব প্যারা ড্রপিং তথা ছত্রীসেনা নামানোতেও ব্যবহৃত হয়।

***************************

বিমানের ইন্জিন প্রসঙ্গ


চিত্রঃ একটি টার্বোফ্যান ইঞ্জিন।

এ যুগে হরহামেশা আকাশ থেকে শোনা যায় উড়ন্ত বিমানের আওয়াজ আসলে তা হলো ইঞ্জিনের গর্জ্জন!

পৃথিবীর মানুষ আজ গ্রহান্তরে ভ্রমণের প্রচেষ্টায় গবেষণারত। ইতোমধ্যে চাঁদে পড়েছে মানুষের পদচি‎হ্ন। আমাদেরই আকাশযান পাইয়ুনিয়ার ঘন্টায় ৪২ হাজার ১৯৬ মাইল বেগে মহাকাশ ভেদ করে এগিয়ে চলেছে অজানার দিকে। হয়ত লক্ষ কোটি বছর এটি চলতেই থাকবে। মঙ্গল গ্রহের লাল রংয়ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে কচ্ছব গতিতে এ দুনিয়ার রোবটযান সক্রিয়।
আমরা নির্মাণ করেছি কনকর্ড নামে যাত্রীবাহী সুপারিসনিক বিমান। এটা শব্দের গতির দ্বিগুণেরও অধিক বেগে উড্ডয়নে সমর্থ।

আমাদের যুদ্ধবিমানগুলি আরো ক্ষমতাধর। আরো দুর্দান্ত তেজে গর্জ্জন করে ছুটে যায় নীলাকাশ ভেদ করে। তবু মানুষ খুশি নয়। তারা আরো গতি চায়! চলছে দুর্জয় ‘হাইপারসনিক’ গতি লাভের প্রচেষ্টা।

বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন আকাশে আকাশযানের সকল শক্তি ও বেগের উৎস। যদি ইঞ্জিন আবিষ্কার না হত তবে এত দুর্বার ও দুর্দান্ত গতি কখনো সম্ভব হত না।

বিবর্তনের পথ ধরেই ইঞ্জিন বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছতে সমর্থ হয়েছে। প্রথম কোন ব্যক্তি ইঞ্জিন আবিষ্কারের চিন্তা করেছিলেন তা আজ আমাদের জানার কোন উপায় নাই। তবে সম্ভবত: হেলিকপ্টারের মত ইঞ্জিনের ধারণাও চীন দেশ থেকেই এসেছিল। ঐ দেশের এক ব্যক্তি বারুদ তৈরীর জন্য শোরা, গন্ধক এবং কাঠ কয়লা মিস্রিত করেছিলেন।

তিনিই সম্ভবত: ইঞ্জিন আবিষ্কারের চেষ্টাও করেছিলেন। স্কটল্যান্ডের জেমস ওয়াট বাষ্প কাজে লগিয়ে ১৭৬৯ সালে একটি বাস্তব ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেন। শুরু হল অগ্রযাত্রা। এক সময় জলযান, শিল্প তথা কলকারখানায় বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহার ছিল ব্যাপক।


একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিনের চিত্র।

অনেক ডিজাইনার বাষ্পীয় ইঞ্জিন কাজে লাগিয়ে বিমান আবিষ্কারের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা তা দিয়ে একটি বাস্তব এবং উড্ডয়নক্ষম বিমান নির্মাণে ব্যার্থ হন। বিমানে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন ব্যবহারের প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছিল। সে প্রচেষ্টাও শেষ পর্যন্ত পরিত্যাক্ত হয়। হালে অবশ্য ছোট ছোট বিমান, ড্রোনে সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুত বানিয়ে ক্রমাগত ব্যাটারি চার্জ করে সেসব উড়ানোর গবেষণা করে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে।

বর্তমান কালে বিমান চালনায় পেট্রোলের পিষ্টন ইঞ্জিন অথবা কেরোসিনের জেট ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। এয়ারশীপ নির্মাতারা তাদের বিমানে পেট্রোল ইঞ্জিন ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করতেন। রাইট ব্রাদার্সের প্রথম ধাতব বিমানে পেট্রোল ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছিল। বিমানে ব্যবহৃত প্রাথমিক ইঞ্জিনগুলির সিলেন্ডার একই সাড়িতে অথবা ইংরেজী (V) আকৃতিতে স্থাপন করা হত। ঐ সময় অটোমোবাইল ইঞ্জিনের বিন্যাসও একইরকম ছিল এবং উল্লেখ্য উভয় প্রকার ইঞ্জিন শীতল করা হত পানির সাহায্যে।

বিমানে ব্যবহৃত পেট্রোল ইঞ্জিনের চিত্র।

পরে আরো উন্নত ধরনের পেট্রোল ইঞ্জিন আবিষ্কৃত ও বিমানে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেগুলোর একটি রোটরী বা ঘূর্ণায়মান ইঞ্জিন। এটার এরূপ নাম ছিল কারণ একটি দন্ড বা ক্রাঙ্ক শেফটের চারদিকে ক্রাঙ্ককেইস এবং সিলিন্ডারগুলি নিজেরাই ঘুড়তে থাকত।

অটোমোবাইলের ইঞ্জিনগুলির শুধু ক্রাঙ্ক শেফটই ঘুড়ে এবং তা চাকা ঘুড়িয়ে থাকে ও সকল ধরনের অটোমোবাইলকে সচল করে। বিমানে ব্যবহৃত অপর ধরনের ইঞ্জিনের নাম রেডিয়াল ইঞ্জিন। রোটরী ইঞ্জিনে সিলেন্ডারগুলি নিজেরাই ঘুড়তে থাকে কিন্তু রেডিয়াল ইঞ্জিনে সিলেন্ডারগুলি স্থির থাকে।


চিত্রঃ রোটরী ইঞ্জিন।

চিত্রঃ রেডিয়াল ইঞ্জিন।

পিষ্টনসমূহ দন্ড বা শেফটের কীলকে আবদ্ধ থাকে। শেফটের সাথে পিষ্টনও ঘুড়ে এবং সিলেন্ডারের দুই প্রান্তে উঠানামা করে ইঞ্জিনকে সচল ও বিমানকে চলমান রাখে। বায়ু এই ধরনের ইঞ্জিন শীতল করে থাকে। ঘূর্ণমান প্রপেলারের বেগে পেছনে প্রেরিত বায়ুই ইঞ্জিন শীতল করে অধিক সময় বিমানটিকে বায়ু সাগরে উড্ডয়নক্ষম রাখে।

উল্লেখ্য যে বিমানের সকল ধরনের পিষ্টন ইঞ্জিনই অন্তর্দহন ইঞ্জিন আর ইঞ্জিনের সম্মুখে স্থাপিত প্রপেলার ঘূর্ণমান অবস্থায় সম্মুখের বায়ু সজোরে পিছনে নিক্ষেপ করে এবং এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিমান সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকে। তা Thurst নামে পরিচিত। পিষ্টন ইঞ্জিনের মত টার্বোপ্রপ ইঞ্জিনেও প্রপেলার ব্যবহৃত হয়।


চিত্রঃ একটি টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন।

ক্রমে বিমানের ইঞ্জিন থেকে প্রপেলার বিদায় নিচ্ছে। জেট ইঞ্জিনের আবিষ্কার ও বিমানে ঐগুলির কার্যকারীতা প্রমাণের পর আধুনিক বিমান নির্মাতারা শুধু জেট ইঞ্জিন সংযোজন গবেষণায় অধিক সময় ও শ্রম ব্যায় করছেন। ফলে শক্তিশালী এবং নানাহ প্রকার জেট ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয়েছে ও উন্নতির ধারা এখনো অব্যহত রয়েছে।এটি অন্তর্দহন ইঞ্জিনের দ্বিতীয় একটি শ্রেণী যাতে নিয়মিত দহন ঘটে: গ্যাস টার্বাইন, জেট ইঞ্জিন এবং বেশিরভাগ রকেট ইঞ্জিন এই ধরনের অন্তর্দহন ইঞ্জিন।

জেট ইঞ্জিন কিন্তু হঠাৎ করে এই বিংশ শতাব্দিতে এসে উদয় হয় নাই। আসলে এটা পুরাতন ধারণার আধুনিক রূপায়ন। মানুষ বহু পূর্বেই টার্বাইন নামক একটি যন্ত্রের সাথে পরিচিত ছিল। টার্বাইন শব্দটি ল্যাটিন টার্বো থেকে উদ্ভূত। এটার অর্থ দ্রুত ঘূর্ণন অথবা ঘুর্ণিবায়ু। হাজার বছর পূর্বে কৃষি ক্ষেত্রে পানি সেচ করার জন্য যে ওয়াটার হুইল ব্যবহার হত তা এক ধরনের টার্বাইন। পরবর্তীকালের স্মোকজ্যাকও (ধূম্রজ্যাক) এক ধরনের টার্বাইন ছিল। ধূম্র ব্যবহার করে এই যন্ত্রের সাহায্যে গোস্ত সেঁকে সঠিক ভাবে শিক কাবাব বানানোর জন্য সেটি আগুনের উপর ঘুরানো হত।

হাজার হাজার বছর পূর্বে নির্মিত মিশরের পিরামিডের ভিতরের পাথুরে দরজার সাথে লাগানো হয়েছিল কোন বিশেষ ডিভাইস (যান্ত্রিক বস্তু) যেটি জেট তত্বে পরিচালিত হতো বলে মনে করেন গবেষকগণ।
১৭৯১ সালে জন বার্বার নামে এক ব্যক্তি তখনকার যুগের গ্যাস টার্বাইনের একটি চিত্র আঁকেন। ঐ চিত্র থেকে বুঝা যায় যে সেটাতে একটি কম্প্রেসার ছিল। কম্প্রেসার থেকে বায়ু প্রবাহ অবিচ্ছিন্ন ভাবে দহন প্রকোষ্ঠে প্রবাহিত হতে থাকে। সেখানে দহন সম্পন্ন হওয়ার পর টার্বাইনের মাঝ দিয়ে উত্তপ্ত ও পোড়া গ্যাস প্রবাহিত হতে থাাকাকালীন সময়ে টার্বাইনের ব্লেড ঘুরতে থাকত। ফলে টার্বাইনের সাথে কম্প্রেসারও ঘুরতে থাকত। আধুনিক কালে বিমানে ব্যবহৃত ইঞ্জিনও একই নীতিতে কার্য সমাধা করে থাকে তবে এগুলি তখনকার গ্যাস টার্বাইন থেকে অনেক উন্নত।

চিত্রঃ টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন।

বর্তমান যুগের জেট ইঞ্জিনগুলি চুরুটাকৃতির। কোনটি ছোট, কোনটি বড়। কোনটি কম প্রশস্ত। কোনটি অধিক প্রশস্ত। এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলতে হয়। জেট ইঞ্জিন চুরুটাকৃতির পরিচালন যন্ত্র যেটি আবহমন্ডল হতে বায়ু গ্রহণ করে সংকুচিত করে অতঃপর দহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তপ্ত ও প্রসারিত করে পেছনের দিক দিয়ে সজোরে বাইরে নিক্ষেপ করার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সম্মুখে চলতে থাকে (Thurst)।
জেট ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে বিমান চালনায় পিষ্টন ইঞ্জিনের মত জটিল ইঞ্জিন পরিহার করা সম্ভব হচ্ছে। এর কার্যপদ্ধতি পিষ্টন ইঞ্জিন থেকে অনেক সহজ এবং অনেক কম জটিল যন্ত্রাংশ দিয়ে নির্মিত। ফলে উজনও তুলনামূলকভাবে কম। এই ইঞ্জিন ব্যবহারের ফলে বিমান পিষ্টন ইঞ্জিনের গতির সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। বিমান ডিজাইনে ইন্জিনের সামর্থ্য বিবেচনায় রাখতে হয়।

(নিম্ন লিংকে কিছু বিমান বিষয়ে জানতে ক্লিক করুন): https://aviationbangladesh.wordpress.com/2023/05/13/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%95%e0%a6%a5%e0%a6%a8/

ডিজাইনারগণ দুর্জয় গতিসম্পন্ন ইঞ্জিন উদ্ভাবনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ইঞ্জিন দ্বারা খুবই বৃহদাকৃতির বিমান ডিজাইন করা সম্ভব হয়েছে। সর্বোপরি জেট ইঞ্জিনের বিমান খুবই অধিক উচ্চতায় উড্ডয়নে সমর্থ। তাতে সুপার চার্জার লাগিয়ে আরো অধিক উচ্চতায় উড়া সম্ভব হয়েছে। সুপারচার্জার মূলত এক ধরনের এয়ার ব্লোয়ার যা কোন শক্তির উৎস থেকে অনেক বেশি গতিতে চালিত হয়। সকল সুপার চার্জার এর উদ্দেশ্য একই। বায়ুমন্ডলের চাপ কে (সেই ‘চাপ’ এর তুলনায়) অতিরিক্ত চাপে ইঞ্জিনের সিলিন্ডারে প্রবেশ করানো। যার ফলে ইঞ্জিনে শক্তি উৎপাদন বেড়ে যায়।

সুপার চার্জারের চিত্র।

জেট ইঞ্জিনের জগতে টার্বোজেট, টার্বোফ্যান জেট, টার্বোপ্রপ জেট, র‌্যামজেট, পালস জেট, হাই বাইপাস টার্বোফ্যান জেট, টার্বো ফ্যান র ্যাম জেট, পাল্স জেট ইত্যাদি বিখ্যাত।


টার্বোজেট ইঞ্জিন: এ ইঞ্জিনও এক ধরনের অন্তর্দহন ইঞ্জিন। এই ধরনের ইঞ্জিনের ৫ টি প্রধান অংশ আছে।

১. প্রবেশ পথ (ইনটেক)

২. কম্প্রেসার

৩. দহন প্রকোষ্ঠ

৪. টার্বাইন

৫. নির্গমণ পথ (জেট নোজল বা এক্সসট)

প্রবেশ পথ দিয়ে বায়ু ইঞ্জিনে প্রবেশ করে সরাসরি কম্প্রেসারে চলে যায়। প্রবেশ পথের বায়ু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কম্প্রেসারের প্রয়োজানুসারে বায়ু সরবরাহ করে থাকে। পূর্বে কোন কোন জেট ইঞ্জিনে সেন্ট্রিফিউগাল কম্প্রেসার ব্যবহার করা হত।

বর্তমানে জেট ইঞ্জিনে এক্সিয়াল ফ্লো কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ইঞ্জিনে স্থির এবং ঘূর্ণনযোগ্য ব্লেডের অনেকগুলি স্তর থাাকে যা পর্যায়ক্রমে স্থাপিত। ক্ষুদ্র ইঞ্জিনে ব্লেডের স্তর কম থাকে পক্ষান্তরে বৃহৎ ইঞ্জিনে অধিক স্তর স্থাপন করতে হয়। প্রত্যেক স্তরে থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলি ব্লেড। ব্লেডের প্রত্যেকটি স্তর পরিক্ষিত চাপ বৃদ্ধি করে থাকে।

কম্প্রেসার থেকে বায়ু দহন প্রকোষ্ঠে গমন করে। বায়ু সেখানে উত্তপ্ত হয়ে উচ্চ চাঁপযুক্ত গ্যাস সৃষ্টি করে। অতঃপর সেগুলি দুর্বার গতিতে নির্গমণের পথ খুঁজতে থাকেও টার্বাইনকে সচল করে নির্গমণ নল দিয়ে সজোরে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যায়।

টার্বাইনের প্রধান কাজ কম্প্রেসার ঘুরানো। এটা একটি ঘূর্ণনযোগ্য চাকতি। এর চারিদিকে কিনারায় ব্লেড অথবা বাকেট একের পর এক অনেকগুলি সজ্জিত থাকে।

কম্প্রেসারের স্থির ব্লেডের রিংয়ের মত টার্বাইনেরও নিশ্চল ব্লেডের রিং থাকে।

ইঞ্জিনের সর্বশেষ স্তর নির্গমণ পথ। এখানে অবশিষ্ট গ্যাস শক্তি, গতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে উচ্চগতিতে বের হয়ে যায়। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিমান সম্মুখে চলতে থাকে। নির্গমন পথে শব্দ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং থ্রারস্ট রিভারসার সংযুক্ত থাকে।

কম্প্রেসার, দহন প্রকোষ্ঠ এবং টার্বাইনকে একত্রে গ্রাস জেনারেটর বলে। নিগর্মন পথের জেট বিশেষ যান্ত্রিক উপায়ের মাধ্যমে কিছুটা পরিবর্তন করে সুপার চার্জারের নিয়ন্ত্রন কাজে লাগানো হয়।

ফ্যান জেট ইঞ্জিন : এই ধরনের জেট ইঞ্জিনে কম্প্রেসারের সম্মুখে প্রবেশ পথের একটু ভিতরে ফ্যান স্থাপন করা হয়। ফ্যানও এক ধরনের প্রপেলার তবে ঐগুলি ইঞ্জিনের বাইরে থাকে না এবং বাহির থেকে তেমন নজরেও আসে না। কোন কোন ধরনের ইঞ্জিনে সম্মুখের বদলে পেছনে ইঞ্জিন স্থাপন করা হয়। টার্বো জেট ইঞ্জিনের সকল বায়ু গ্যাস জেনারেটর অতিক্রম করে থাকে। কিছু সোজাসুজি তবে অবশিষ্ট বায়ু ফ্যান অথবা নিম্নচাপযুক্ত কম্প্রেসার হয়ে অতিক্রম করে। এই পদ্ধতিকে বলে বাইপাস পদ্ধতি। বাইপাশ অর্থ পার্শ্বপথ।

এই পদ্ধতি ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যবহার না করে বিমানের গতি বৃদ্ধি করা।

টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন: পিষ্টন ইঞ্জিনের প্রপেলর এবং জেট ইঞ্জিনের প্রপেলার একই রকম। পার্থক্য শুধু একে জেট ইঞ্জিনের সম্মুখে স্থাপন করা হয়। ইঞ্জিনের অন্তস্থিত টার্বাইন একে চালনা করে বিধায় এটার নাম টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন।

হেলিকপ্টারেও এই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। হেলিকপ্টারে এইগুলির নাম টার্বো শ্যাফট ইঞ্জিন। এগুলোর নাম টার্বো শ্যাফট দেওয়া হয়েছে কারণ সেগুলো ইঞ্জিনের শ্যাফট বা দন্ড যা রোটরের সংযোজন স্থল পর্যন্ত বিস্তৃত ঐগুলিকে সরাসরি ঘুরিয়ে থাকে।


চিত্রঃ ফ্যান জেট ইঞ্জিন।

র‌্যাম জেট ইঞ্জিন: এগুলো সবচেয়ে সহজ ধরনের জেট ইঞ্জিন। অনেক বিশেষজ্ঞ এটাকে উড়ন্ত নল চুল্লিও বলে থাকেন।


চিত্রঃ র‌্যাম জেট ইঞ্জিন।

এর ভিতরে কোন ঘূর্ণনযোগ্য অংশ নাই। ভিতরের সম্পূর্ণ অংশটিই একটি দহন প্রকোষ্ট যেন। র‌্যাম জেট খুবই উচ্চগতিতে বিশেষ করে শব্দের গতির তিনগুণ অধিক অথবা আরো উর্ধ্বগতিতে ভাল কাজ করে। এই ধরনের ইঞ্জিনের প্রধান অসুবিধা অন্য ইঞ্জিনের সাহায্য ব্যতীত এই ধরনের ইঞ্জিন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। অন্য ইঞ্জিন দ্বারা বিমানের প্রয়োজনীয় গতি লাভের পর র‌্যাম ইঞ্জিন চালু করা হয় এবং মূল ইঞ্জিনটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

তখন মুক্তবায়ু র‌্যাম ইঞ্জিনে ভিষণ বেগে ধাক্কা দিয়ে প্রবেশ করে এবং দহন প্রকোষ্ঠে জ্বালানীর সাথে মিশ্রিত হয়ে দগ্ধ হয়। অতঃপর উত্তপ্ত ও প্রসারিত বায়ু পেছনের নির্গমণ পথ দিয়ে সবেগে বের হয়ে যায় এবং প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিমান আপন পথে চলতে থাকে।

উল্লেখিত ইঞ্জিনসমূহ ব্যতীত আফট বার্নারসহ টার্বোজেট এবং টার্বো- র‌্যাম – জেট উল্লেখযোগ্য ধরনের বিমানে ব্যবহৃত হয়।

চিত্রঃ আফটার বার্ণারসহ টার্বোজেট।

খুবই দ্রুতগতি সম্পন্ন বিমানে যুদ্ধকালীন জরুরী প্রয়োজনে আফটার বার্ণার চালু করে অতিরিক্ত দ্রুত গতি অর্জন করা সম্ভব হয়। অবশ্য আফটার বার্ণারে খুবই অধিক জ্বালানীর প্রয়োজন। এই ধরনের ইঞ্জিনে টার্বোজেটের সাথে একটি অতিরিক্ত বার্ণার টার্বাইনের পেছনে সংযুক্ত করা হয়।

টার্বোজেটের গতির সীমাবদ্ধতা এবং র‌্যামজেটের অন্য ধরনের ইঞ্জিনের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার কারণে সৃষ্ট অসুবিধা দুরীকরণার্থে বহু চেষ্টার পর ডিজাইনারগণ এক নতুন ধরনের ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছেন। এর নাম টার্বো-র‌্যাম-জেট।

এটা নির্মাণ করা হয়েছে টার্বোজেট এবং র‌্যামজেট ইঞ্জিনের সমন্বয়ে। এটার টার্বোজেট অংশ প্রথমে বিমানকে নির্ধারিত সুপারসনিক গতি পর্যন্ত পরিচালনা করে থাকে। অতঃপর গ্যাস জেনারেটরের পথ বন্ধ করে দেয়। তখন ফ্যানজেটের মত পার্শ্ব পথ দিয়ে বায়ু প্রবাহিত থাকে। ঐ বায়ু খুব লম্বা দহন প্রকোষ্ঠের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি মূল ইঞ্জিনটির পিছনে অবস্থিত। অবশ্য গ্যাস জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পুরো ইঞ্জিনটিই র‌্যাম জেটে পরিণত হয়। টার্বাইন ও কম্প্রেসারের ব্লেডগুলিকে প্রবাহিত বায়ু থেকে রক্ষা করার জন্য বায়ু বন্ধ করার কৌশলসহ বিভিন্ন পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়।


পাল্স জেট ইঞ্জিনও র‌্যামজেট ইঞ্জিনের মত কাজ করে থাকে। তবে এর ব্যবহার খুবই সীমিত।

মহাকাশযানে রকেট ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। সিরিজের পরবর্তী পুস্তকে রকেট ইঞ্জিন সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

(জেনে নিন/ ছাত্রগন নিম্ন লিংকে ক্লিক করে আরও কিছু তথ্য জেনে নিতে পারে):

https://m.facebook.com/story.php/?story_fbid=4168818853158995&id=1097391460301765

বিভিন্ন ধরনের জেট ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে দেশে দেশে বিমান নির্মাণ কারখানা গড়ে উঠেছে। উন্নত ধরনের জেট বিমান সম্বন্ধে গবেষণা চলছে। আত্মপ্রকাশ করছে নতুন নতুন শক্তিশালী বিমান।

http://i.space.com/images/i/000/017/022/original/enterprise-manhattan-1000.jpg?1335806218
চিত্রঃ বিমানের পিঠে স্পেস সাঁটল সওয়ার।

**************************

বিমান যুদ্ধ মুসলিম দেশে ও বিশ্বময়

প্রণয়নে:
সৈয়দ মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন
সহকারী অধ্যাপক (অব:)
রামপুরা একরামুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ
(সাবেক বিমান সেনা, প্রশিক্ষক, এ ই সি (এস ডব্লিউ ও/ অবঃ), সাবেক
খণ্ডকালীন শিক্ষক (ফ্যাকাল্টি/ অধ্যাপক) ক্যাম্ব্রিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অফ এভিয়েশন, ঢাকা, বাংলাদেশ, প্রাক্তন চীফ ইন্সস্ট্রাক্টর, কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজী ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজী, ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ হেরিটেজ ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব এভিয়েশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট (বর্তমানে কর্মকাণ্ড স্থগিত)।

প্রকাশনায়
সোনালী সোপান প্রকাশন
৩৮/৩ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।

পৃষ্ঠপোষকতায়
মোসাম্মাৎ সকিনা খাতুন

প্রতিষ্ঠাতা
ডক্টর শাহ মুহাম্মাদ ‘আবদুর রাহীম

প্রকাশক
মুহাম্মাদ আবদুল জাব্বার
মোবাইল : ০১৭১৫৮১৯৮৬৯, ০১৭৩৩১১৩৪৩৩

পরিচালক
মুহাম্মাদ আবদুস সাত্তার

প্রথম প্রকাশ ঃ ডিসেম্বর ২০১৩

বর্ণবিন্যাস
নাছের পাটওয়ারী ডিজাইন ঘর

মুদ্রণে ঃ ক্রিয়েটিভ প্রিণ্টার্স

হাদিয়া : ২০০ টাকা মাত্র।

উৎসর্গ

বাবা সৈয়দ শাহাদৎ হোসেন এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে ঢাকাস্থ আর আই এ এফ এবং মার্কিন এয়ারফোর্স ডিটাচমেন্টে কর্মরত সকল এদেশীয় বেসামরিক কর্মচারী যারা পরোক্ষভাবে এ যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশকে জাপানী বিমান আক্রমণ থেকে রক্ষায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। সম্ভবত: তাঁদের অধিকাংশ এখন আর বেঁচে নাই। আল্লাহ তাঁদের সকলকে বেহেশত নসিব করুন, আমিন।

সূচী পত্র

১) প্রথম মহাযুদ্ধকালীন সময়ের যুদ্ধবিমান

২) জাপান ও আমেরিকার আকাশে যুদ্ধ বিমান

৩) আরও লড়াই আরও বিমান

৪) পাক-ভারতের মাঝে যুদ্ধে বিমান

৫) স্বাধীনতা ও ১৯৭১এর বিমান যুদ্ধ

৬) ৭১এর বিমান যোদ্ধাদের কথা

৭) মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যুদ্ধবিমান

৮) ইরাক – ইরানের যুদ্ধে বিমান

৯) শিস্ দিয়ে উড়ে যায় গোয়েন্দা বিমান

১০) বিমানবাহী জাহাজ ও আধুনিক যুদ্ধ

১১) ক্যারিয়ারে যুদ্ধ বিমান

১২) বীর বাঙ্গালী বৈমানিকদের গাঁথা

১৩) বাংলাদেশের ‘বেসামরিক বৈমানিক’ কথন

১৪) আফগানিস্তানে চলমান যুদ্ধসমূহে বিমান

১৫) ড্রোন যুদ্ধ

ভুমিকা
পুস্তকটি প্রথম মহাযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যেসব বিমান যুদ্ধ হয়েছে সেসবের কাহিনী। এসব যুদ্ধ মুসলিম বিশ্বসহ দেশে দেশে সংঘঠিত হয়েছে বা এখনো চলছে। উল্লেখ্য বেশ কয়েক বছর পূর্বে বাংলা একাডেমি ‘উড্ডয়নের ইতিহাস’ নামে আমার একটি পুস্তক প্রকাশ করেছিল। পুস্তকটি একাডেমিতে জমা দেওয়া হয়েছিল আরো বহু বছর পূর্বে। প্রায় একই সময় এ পুস্তকটি এবং ‘নেভিগেশন যুগে যুগে’ নামে অপর একটি পুস্তক বাংলা একাডেমিতে জমা দেওয়া হয়েছিল। আফগানিস্তানে মার্কিন ও মিত্রদের হামলার পর একাডেমি সর্বশেষ যুদ্ধ পরিস্থিতি সংযোজন করে দেওয়ার জন্য পুস্তকটি আমাকে দেয়। আমি আমার দায়িত্ব পালন করে পুস্তকটিকে একাডেমি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেই। উল্লেখ্য, আমি জেনেছিলাম ড. আব্দুুল্লাহ আল মুতী (তাঁর মৃত্যুর পূর্বে) এবং অপর একজন ডক্টর পূর্বেই পুস্তকটি রিভিউ করেছিলেন। আল্লাহ এ মহান বিজ্ঞানীকে জান্নাত দান করুন।
সংশোধনের পর এ পৃথিবীতে আরো সময় বয়ে গেছে। মূল আফগানযুদ্ধ শেষ হয়েছে। ইরাকে ইঙ্গ মার্কিন হামলা শেষ হয়েছে। লেবাননের উপর হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল সুযোগ পেলেই। সিরিয়া ও ইরাকে হামলায় সে যেন মুখিয়ে আছে। মাঝে মাঝে ইরানের ভিতরে ঢুকে হামলা চালিয়েছে মোশাদ। আরব বসন্তের পর মোয়াম্মার গাদ্দাফিকে বলপূর্বক উৎখাতের যুদ্ধে সীমিত পর্যায়ে হলেও মার্কিন বিমান হামলা হয়েছে। সিরিয়ার উপরও হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। চালিয়েছে ড্রোন নজরদারি ও হামলা। আফগানিস্তানেত এখনো চলছে ড্রোন হামলা।

ইয়েমেনে মাঝে-মধ্যে মার্কিন ড্রোন আফগানিস্তানের মত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে (হালে অবশ্য সৌদি আরব আর ইরানের মাঝে শান্তি আলোচনা চলছে। আশাকরি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব)। মার্কিন বাহিনী ইরানের উপরও উড়িয়েছিল ড্রোন। তার কিছু অবশ্য ইরানিরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হ্যাক করে নামিয়ে হস্তগত করে। বলা যায় ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শুধু আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় সি আই এ ৩৩০ বার ড্রোন হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের সরকারী হিসাব মতে এসব হামলায় মারা গিয়েছে দুই হাজার দুই শত জন। তাদের ৪০০ জনই বেসামরিক ব্যক্তি।
পুস্তকটি পাঠে বিমান বাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী, ক্যাডেট, বিমানযোদ্ধা ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপকৃত হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। আগ্রহী সকলেই বিমান যুদ্ধ সম্বন্ধে জানতে পারবে।

সৈয়দ মোহাম্মাদ সালেহ উদ্দিন

প্রথম মহাযুদ্ধকালীন সময়ের যুদ্ধবিমান


চিত্রঃ মহাযুদ্ধের রণক্ষেত্রে যুদ্ধ বিমান।

প্রথম মহাযুদ্ধে জেপেলিন ও বিভিন্ন ধরনের এয়ারশীপ ছিল মহা পরাক্রমশালী আকাশযোদ্ধা। নিজ নিজ দেশের আকাশে ওরাই ছিল সদাজাগ্রত প্রহরী। ওরা আকাশে টহল দিয়ে বেড়াত। সমুদ্রে নিম্ন উচ্চতায় উড়ে উড়ে ওরা সাবমেরিন খুঁজত। শত্রু এয়ারশীপ অথবা বিমান আক্রমণ নস্যাৎ করে দিত। জার্মান জেপেলিন ছিল খুবই সাহসী আক্রমণকারী এয়ারশীপ। সুদূর ইংল্যান্ডে সফলতার সাথে বোমাবর্ষণ করে ওরা আনন্দচিত্তে ফিরে আসত।

ওই সময় অনেক এরোপ্লেন তথা বিমানও নির্মিত হয়েছে। তবে সেকালে যুদ্ধ বিমানগুলো ছিল খুবই প্রাথমিক, অনুন্নত ও আনাড়ি ধরনের বিমান। তখনকার যুদ্ধ বিমান থেকে সাহসী বৈমানিকগণ যুদ্ধ করতেন। তাঁরা অনুভব করতেন এ যুদ্ধ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই কারণ এ যুদ্ধ ছিল সম্মুখ সমর, বিমানে বিমানে মুখোমুখি যুদ্ধ যেমন প্রাচীন কালের বীর যোদ্ধাগণের কেউ কেউ তলোয়ার নিয়ে আর একজন বীরযোদ্ধার সামনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। অসীম সাহসে বুক বেঁধে কুশলি অস্ত্র চালনায় যুদ্ধ করে যেতেন। অতঃপর একজন বীরের মতই মৃত্যুবরণ করতেন। তারা ভাবতেন যদি মরতে হয় তবে বীরের মতই মরব।

খুবই প্রাথমিক ধরনের বিমানে তখন যুদ্ধ করা বর্তমান বিমানের মত এত সহজ ছিল না। বৈমানিক নিজেই ছিলেন যোদ্ধা। তখন সেগুলির যুদ্ধাস্ত্রও ছিল খুবই অনুন্নত ধরনের। বৈমানিক নিজেই বিমানে স্থাপিত তখনকার মেশিনগান চালনা করে শত্রু বিমান ঘায়েল করতেন। নিজের বিমানকে শত্রু বিমান থেকে রক্ষা করার জন্য বিপজ্জনক কৌশলে বিমান চালনা করতেন।

বিমানের এমন যুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে ছিল আকাশে মানুষে মানুষে যুদ্ধেরই নামান্তর। খুবই দক্ষ বৈমানিকগণ শুধু যুদ্ধ শেষে জয়ের আনন্দ নিয়ে অবতরণ করতে সমর্থ হতেন। অন্যরা বীরের মত এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতেন। প্রথম মহা যুদ্ধে অনেক দক্ষ বৈমানিক পাঁচ অথবা ততোধিক বিমান ধ্বংস করে বিশেষ সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন। সর্বাধিক বিমান যিনি গুলি করে নামিয়েছিলেন তিনি একজন জার্মান। তার নাম ছিল ব্যারণ ম্যানফ্রেড ভন রিকতুফেন। তিনি নামিয়েছিলেন ৮০টি বিমান। তারপর যিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন তিনি একজন ফরাসী বৈমানিক। তার নাম ছিল রেনী ফঙ্ক। তিনি ধ্বংস করেছিলেন ৭৫টি শত্রু বিমান। ইংল্যান্ড এর এডওয়ার্ড ম্যানক এবং কানাডার উইলিয়াম বিশপ যথাক্রমে ৭৩ এবং ৭২টি বিমান ধ্বংস করে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শুধু জার্মানী, ফ্রান্স, গ্রেট বৃটেন, ইতালী এবং আমেরিকার বিমান বাহিনী ছিল। যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন জার্মান বিমান বহরে বিমান সংখ্যা ছিল মাত্র ২৬০ খানা। ফ্রান্স, বৃটেন ও আমেরিকার ফকার ডি সেভেন, আলবাটরস ডি থ্রি স্কাউট ফাইটার বিমানগুলো মহাবিক্রমে যুদ্ধ করেছে। জার্মানদের জি ফোর বোমারু বিমান অথবা অন্য ধরনের বোম্বারগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে শত্রুদের দেশের অভ্যন্তরে বোমাবর্ষণ করেছে।


চিত্রঃ জার্মান বিমান বহরের কয়েকটি বিমান।

ওই সময় জার্মান বিমান বহরের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের স্পেড এবং গ্রেট বৃটেনের সপউইথ কেমেল ফাইটারগুলো সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করেছে। ইংল্যান্ডের ডি এইচ ফোর এবং হ্যান্ডলি পেজ জিরু অবলিক ফোর হান্ড্রেড বোম্বারগুলো রণক্ষেত্রে অথবা জার্মানীর অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হেনেছে। যুদ্ধ শুরুতে ওই দুইদেশের বিমান সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫৬ এবং ১৫৪ খানা। তখন আমেরিকান বিমান বাহিনী বহরে বিমান সংখ্যা ছিল শতের ও কিছু কম। অবশ্য যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমেরিকানরা তাঁদের নিজস্ব ডিজাইনের বিমান দিয়ে তাঁদের বিমান বাহিনী সজ্জিত করতে সমর্থ হয়েছিল। তাদের একটি বিখ্যাত বিমানের নাম ছিল কারটিস জে এন ফোর জেনী। উল্লেখ্য যে তখন আমেরিকাতে ওই একটি কোম্পানীতেই বিমান নির্মাণ করা হত। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ইতালীর নগণ্য সংখ্যক নিজস্ব ডিজাইনের বিমান ছিল। বিখ্যাত কার্পনী তাদেরই বিমান। অবশ্য ওই যুদ্ধে তাদের বিমান ব্যবহৃত হয়নি।


চিত্রঃ প্রথম মহাযুদ্ধের কয়েকটি বিমান।

প্রথম মহাযুদ্ধ শেষে উন্নত বিমান আবিষ্কারের প্রচেষ্টা বহু গুণ বেড়ে যায়। জাপান ও রাশিয়া নিজস্ব বিমান নির্মাণ প্রচেষ্টায় গবেষণা চালাতে থাকে। দ্রুত তারা তাদের নিজস্ব বিমান বহর গড়ে তুলতে সমর্থ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বহু পূর্বেই জাপান তাদের যুদ্ধ বিমান ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে যায়। তারা ছিল চীন ও রাশিয়ার শত্রু। এই দুই দেশের বিরুদ্ধে জাপান বহু যুদ্ধ করেছিল। জাপানের বিমান বহর তাদের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়। চীন দেশের বিরুদ্ধে মাঞ্চুরিয়ায় এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মাঞ্চুকুতে জাপান সর্বপ্রথম আকাশ থেকে বিমান দিয়ে আঘাত হানে। সম্ভবত: কার্যকর বিমানের অভাবে রাশিয়া সেই সময় পর্যন্ত কোন যুদ্ধে বিমান ব্যবহার করতে পারেনি।
১৯৩৬ সালের কথা। ওই সময় স্পেনে গণ বিদ্রোহ দেখা দেয়। স্পেনের জেনারেল ফ্রাঙ্কো ছিলেন বিদ্রোহীদের নেতা। জার্মানী ও ইতালী ছিল তাঁর মিত্র। উভয় দেশ জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সহায়তায় তাদের বিমান বহর প্রেরণ করেছিল। অবশ্য এই যুদ্ধের পূর্বে একবার ইতালী তাদের বিমান শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছিল ইথিওপীয়া আক্রমণ কালে। তখন তাদের বিমানবহর ইতালীয় বাহিনীকে যথেষ্ট সহায়তা দান করে।
কালক্রম যুদ্ধ বিমানের আরও উন্নতি হয়। সেই সময়ের বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের বিমান ও অন্যান্য অস্ত্রের শক্তিমত্তা পরীক্ষার সুযোগ খুঁজতে থাকে। একদিন সুযোগ এসেও যায়। গর্জে উঠে জার্মানদের ফুয়েরার হিটলারের বজ্র কণ্ঠ। বেজে উঠে রণ দামামা। দিনটি ছিল ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর। ক্রমে সংক্রামক ব্যাধির মত যুদ্ধ দেশে দেশে ছড়িয়ে রায়। তা রূপ নেয় মহাযুদ্ধের। বিশ্বের ৫৯টি দেশ যেন নর হত্যায় মেতে উঠে। রক্ত নেশায় যেন মাতাল হয়ে যায় তারা। অস্ত্রের গর্জন আর ধ্বংসলীলা একই সাথে হাত ধরে চলতে থাকে। রাতের আকাশে নিশি রাতের পাখির মত হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন উদয় হত শত্রু বিমানের ঝাঁক। শত নাগিনীর রুদ্র নিশ্বাসের মত গর্জন করে করে নিক্ষেপ করত অগ্নিবান। নিকট শব্দে ফেটে যেত সেগুলো।

হাজার বছরে তিল তিল করে জমানো সভ্যতার নিদর্শন করুণ আর্তনাদ করে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ত। দিনের আলোকেও ওরা ভয় পেত না। হঠাৎ করেই কোন রণক্ষেত্রে যুদ্ধরত শত্রুসেনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুহুর্তে তাদের সকল চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মিটিয়ে দিয়ে পালিয়ে যেত তাদের আপন ঘাঁটিতে। পথে হয়ত ওইগুলির কোন কোনটি শত্রু বিমানের গুলি অথবা ভূমির কামান থেকে নিক্ষিপ্ত গুলির আঘাতে বিস্ফোরিত হয়ে মুখ থুবরে মাটিতে পড়ে আপন তেজে চালকসহ নিশ্চি‎হ্ন হয়ে যেত।


(Cutaway of P-51, among the most famous aircraft of World War 2/দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিমান। )

মানব জাতির অভিশাপ এই যুদ্ধে আকাশে আধিপত্য বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছিল জার্মানী, বৃটেন, আমেরিকা, জাপান ও রাশিয়া। এই সমস্ত দেশ গড়ে তুলেছিল শক্তিশালী বিমান বহর। তৈরী করেছিল হাজার হাজার সাহসী বিমানযোদ্ধা। তাঁরা দেশের সম্মানে জান কুরবান করতে ছিল সদা প্রস্তুত। আদেশ পাওয়া মাত্র জেহাদী দেশে তাঁরা তাঁদের বিমান নিয়ে মুহূর্তে আকাশে ডানা মেলত। তপ্ত বুলেট ছুড়তে ছুড়তে শত্রু বিমানের ঝাঁকে ঢুকে পড়ত।শত্রু বিমান নিধন করে বিজয়ী বেশে নিজ দেশের বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করত অথবা শত্রু গোলার আঘাতে বীরের মত মৃত্যুবরণ করে স্ব স্ব জাতির ইতিহাসে স্থান করে নিত।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন জার্মানীর ছিল সর্ববৃহৎ বিমান বহর। ওই দেশের বিমান বাহিনীর প্রধান ফাইটার ছিল এম ই ১০৯। এটার ডিজাইন করেছিলেন উইলি মেসার্সস্মিথ। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩৬৪ মাইল। জার্মান বিমান বাহিনীর ফকী উলফ ১৯০ এবং টুইন জেট এমই ২৬২ বিমানগুলোও ছিল পাকা যোদ্ধা। এ দেশের জে ইউ ষ্টোকা ডাইভ বোম্বার, ডরনিয়ার বোম্বার এবং হেনিকেল বোম্বার খুবই দক্ষতার সাথে শত্রুদেশে অথবা রণক্ষেত্রে বোমাবর্ষণে সমর্থ ছিল।

জার্মান বিমানগুলোর মোকাবেলায় ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের স্পিটফায়ার ফাইটার খুবই দক্ষতার স্বাক্ষর রাখে। এরা ছিল জার্মান যে কোন বিমান থেকে আকাশে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও কৌশলগত উড্ডয়নে সমর্থ। ১৯৪০ সালের আগস্ট মাসে জার্মানী বৃটেনের বিরুদ্ধে বিমান যুদ্ধ আরম্ভ করে। ওই সময় তাদের বিমান বহরে বিমানের সংখ্যা ছিল বৃটেনের বিমানের প্রায় দ্বিগুণ। এক এক দিন প্রায় ১০০০ বিমান জার্মানী থেকে বৃটেনে উড়ে যেত, বোমা বর্ষণ করত। এ ভাবে ক্রমাগত বারবার আক্রমণ চলে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে আহরিত লুণ্ঠিত সম্পদে গড়া সভ্যতা এ বিভীষণ আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। নিহত হয় ১৪০০০ বেসামরিক লোক। হাত পা হারিয়ে কোন মতে বেঁচে থাকে আরো ২০,০০০ আদম সন্তান।

রুখে দাঁড়ায় রয়েল এয়ার ফোর্সের সাহসী বিমান যোদ্ধাগণ। বাতাস ভেদ করে তাদের স্পিটফায়ার এবং হারিক্যান বিমান নিয়ে জার্মান বিমানের পিছু নেয়। এ যেন আকাশে ঈগলে ঈগলে যুদ্ধ। ৮৪ দিনে তারা প্রায় ২০০০ জার্মান বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে। বন্ধ হয়ে যায় জার্মান বিমান আক্রমণ। এ জয় ছিল দেশ রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ ইংরেজ বৈমানিকদেরই জয়। সে সময় ব্রিটিশ বিমান বহরে স্পিটফায়ার, হকার হারিক্যান ছাড়াও ছিল হকার টাইফুন এবং টেম্পেষ্ট ফাইটার। আর ছিল ল্যাঙ্কাশায়ার বোম্বার। এগুলি ২২০০০ বোমা জার্মানীর বিভিন্ন লক্ষ্য বস্তুতে নিক্ষেপ করেছিল। এর অপর বিখ্যাত বিমানটি ছিল দ্য হ্যাভিল্যান্ড মসকুইটু। এ বিমানের কাঠামো ছিল কাঠ দিয়ে তৈরী। দু’ডানায় ছিল দুটি ইঞ্জিন, এটি বোমা ফেলে এবং টহল দিয়ে বেড়াত।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের রণক্ষেত্রে জাপানী বিমানগুলোও বিশেষ দক্ষতার সাথে যুদ্ধ করে। দুর্বার তেজে আঘাত হেনে শত্রুদের পর্যুদস্ত করে দেয়। এক সময় আমেরিকার বিমান জাপানী বিমানের সাথে মহাসংগ্রামে লিপ্ত হয়। পরের গল্পে তোমরা এ চমকপ্রদ কাহিনী শুনবে। এতক্ষণ তোমরা যে যুদ্ধের গল্প শুনলে এ ছিল বিশ্বমানবের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। এর সমাপ্তি ঘটে ১৯৪৫ সালে।

*************************

জাপান ও আমেরিকার আকাশ যুদ্ধ

http://cdn.theatlantic.com/assets/media/img/photo/2011/09/world-war-ii-the-pacific-islands/w07_20925011/main_1200.jpg?1420519269

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জাপান ও আমেরিকার মাঝে আকাশযুদ্ধ সবচেয়ে চমকপ্রদ এবং সবচেয়ে দুঃখজনক। ইতিহাস থেকে এ কাহিনী কখনো মুছে যাবে না।
যুদ্ধের সময় জাপান ছিল জার্মানীর মিত্র আর আমেরিকা ছিল মিত্র বাহিনীর মিত্র। নিঃসন্দেহে জাপান ওই সময় একটি বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। তার অস্ত্রভান্ডারে স্তুপিকৃত ছিল হাজারো ধরনের মরণাস্ত্র। বিশ্বে প্রাধান্য বিস্তার করতে সেসব আবিষ্কার জাপানকে সাহায্য করে নিঃসন্দেহে। কঠোর পরিশ্রমে ওরা একের পর এক ডিজাইন করেন আশ্চর্য দক্ষতার সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম বিমান। জাপান গড়ে তুলে সে সময়ের যে কোন বৃহৎশক্তির বিমান বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করার মত বিমান বহর।

জাপানের বিখ্যাত ফাইটারগুলো ‘জীরু’ ফাইটার নামে পরিচিত ছিল। ওইগুলোর পূর্ণ নাম ছিল মিটসুবিশি টাইপ ০। মিটসুবিশি মডেল ১৫২ বিমানগুলো ‘জেনি’ নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া এর বিমান বহরে ছিল এক এবং দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট বহু বিমান যেগুলো শুধু বোমাবর্ষণের জন্য ব্যবহৃত হত। রাশিয়া জাপানের নিকটতম শত্রু হলেও দুদেশের মাঝে তেমন চমকপ্রদ বিমানযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। এর কারণ সম্ভবত: রাশিয়া তার স্টারমেভিক এবং ইয়াক নামে ফাইটারগুলোকে আকাশযুদ্ধের জন্য তেমন উপযুক্ত মনে করেনি।

আসলেও তাই। সেগুলো যথার্থ দক্ষতার সাথে কৌশলগত উড্ডয়নে সমর্থ ছিল না। তাই তারা তাদের বিমানগুলোকে শুধু রণক্ষেত্রে স্থলবাহিনীর সহায়তায় ব্যস্ত রাখে। অপরদিকে জাপানের উচ্চাকাঙ্খা ও তার জানকুরবান বাহিনীর লড়াকু বৈমানিকদের উচ্চ মনোবল, সাহস ও দক্ষতার কমতি ছিল না। তাই ওই দেশের যুদ্ধবাজ পরিকল্পনাকারীদের প্রশস্ত মহা সাগর পাড়ি দিয়ে খাস আমেরিকান ভূখণ্ডে আঘাত হানার জন্য যুদ্ধ পরিকল্পনা করার উৎসাহ দিতে থাকে। জেনারেল গন কাজ করার তথা প্রস্তুতি নিতে নির্দেশও পেয়ে যান।

খুবই গোপনে তারা যুদ্ধ পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু আশ্চর্যের কথা পরিকল্পনার বিষয়বস্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাকপক্ষীও আঁচ করতে পারেনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী একদিন জাপানের বিমানবাহী নৌবহরের একটি অংশকে আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপে অবস্থিত নৌঘাঁটির দিকে যাত্রা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে ঘাঁটি ছিল পার্লহার্বার নামক স্থানে। এর চারদিকে ছিল যতদূর চোখ যায় কেবল মাত্র প্রশস্ত প্রশান্ত মহাসাগরের অথৈ কাল নয়নাভিরাম, অনাবিল – শান্ত জলরাশী।

১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর। জাপানী নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে এক ঝাঁক বিমান পার্লহার্বারের দিকে উড়ে যায়। নির্বিঘ্নে সেগুলো আমেরিকান নৌঘাঁটি পর্যন্ত পৌঁছে। হঠাৎ করেই শুরু হয়ে যায় প্রচন্ড গোলাবর্ষণ। আমেরিকানদের নিকট এ আক্রমণ ছিল কল্পনারও অতীত। নব্বই মিনিট ধরে চলে ঘাঁটির বিভিন্ন লক্ষ্য বস্তুর উপর হামলা। বিস্ফোরিত হয়ে ডুবে যায় চারটি আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজ, একটি মাইন লেয়ার এবং একটি টারগেট শীপ। পুরো ঘাঁটিকেই যেন অগ্নি গ্রাস করে ফেললো। ক্ষতিগ্রস্ত হলো আরও চারটি যুদ্ধজাহাজ, তিনটি ক্রুজার এবং তিনটি অন্য ধরনের নৌযান। এ বিমান আক্রমণে সর্বমোট নিহত হয়েছিলেন দু’হাজার ছিয়াশি জন বিবিধ স্তরের/পদবির আমেরিকান নৌসেনা। অপর ৭৪৯ জন আহত হয়ে এ যুদ্ধের স্মৃতি জীবনভর বয়ে বেড়িয়েছিলেন।

জাপানের এ বিমান আক্রমণের উদ্দেশ্য শুধু পার্লহার্বার ধ্বংস করাই ছিল না। একই সময় আরও কয়েক ঝাঁক জাপানী বিমান আক্রমণ করেছিল সেনা ও বিমান বাহিনী বেস হিকম্যান, হুইলার এবং বিল্লু। কেঁপে উঠেছিল ওই সমস্ত সেনা ছাউনি। মুহু মুহু বিস্ফোরণের শব্দ আর অগ্নির লেলিহান শিখার মাঝেও গর্জে উঠেছিল মার্কিন বিমান। সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়েছিল ওরা জাপানী বিমানের বিরুদ্ধে। অবশ্য তখন আর শেষ রক্ষা করার সময় ছিল না।

জাপানি এ আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় আমেরিকার ৬৪টি বিমান, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো ৮৬টি। পক্ষান্তরে জাপানের ক্ষতি হয়েছিল খুবই কম। এ চমকপ্রদ যুদ্ধ জাপানের যুদ্ধের ইতিহাসে এক বীরত্বপূর্ণ গাঁথা।
উল্লেখিত যুদ্ধের পরিণতিতে আমেরিকা নতুন সংকল্প নিয়ে যুদ্ধ পরিকল্পনায় মেতে উঠে। শক্তিশালী বিমান ডিজাইনে ব্যয় করে অপরিমিত সম্পদ।

যুদ্ধের শুরুতে আমেরিকার ছিল খুবই দুর্বল বিমানবহর। ১৯৪০ সালে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের নির্দেশ এবং ১৯৪১ সালের জাপানী আক্রমণের চরম শিক্ষায় আমেরিকা দ্রুত বিমান সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। ১৯৪৪ সালে তাদের বিমান বাহিনীতে বিমান সংখ্যা ছিল ৯৬৩১৮ টি। জার্মানি, বৃটেন, রাশিয়া ও জাপানের মত আমেরিকারও ওই সময় প্রপেলার চালিত পিষ্টন ইঞ্জিনের বিমান ছিল। অবশ্য পরে তারা জেই ইঞ্জিনের বিমানও আবিষ্কার করেছিল। তাদের সর্ব প্রথম নির্মিত জেট বিমানটির নাম ছিল বেল পি-৫৯ এ এয়ারাকমেট।

বেল পি-৫৯ এ এয়ারাকমেট বিমান সে জমানায় নির্মিত উন্নত ফাইটার। এই বিমান দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আমেরিকার বৈমানিক প্রশিক্ষণে ব্যবহার হত।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আমেরিকা জাপানের মতই দুই ধরনের বিমান বহর গড়ে তুলেছিল। স্থলের বিমান ঘাঁটি থেকে এক ধরনের বিমান শত্রু লক্ষ্যবস্তুর দিকে চুটে যেত। বিমান বাহিনীতে বিখ্যাত বিমান ছিল পি-৫১ মোষ্টাঙ্গ। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪৩৯ মাইল। এটি ছিল ফাইটার। এটা আকাশে শত্রু বিমানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হত। কৌশলী ডগ ফাইটে হামলাকারী শত্রু বিমানের মোকাবেলা করত।

শত্রুদের অবস্থানে বা দেশের ভেতরে বোমা বর্ষণ করতে যেত বি-১৭ ফ্লাইং ফোট্রেস, বি-২৪ লিবারেটর, বি-২৯ সুপার ফোট্রেস ইত্যাদি বোম্বার। কোন একটি লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানার জন্য ফর্মেশনে হাজারো আমেরিকান বিমান একবারের অপারেশনে পাঠানোর ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিল। ওরা ভূমির রানওয়ে বা বিমানবাহী জাহাজ থেকে উড়ে যেত।

জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকান নৌবাহিনীর যুদ্ধ বিমানগুলো ছিল সবচেয়ে সক্রিয়। ওরা সাগরের ওপর হামলা বা বই ফাইটে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে । বিমানবাহী জাহাজে সওয়ার হয়ে এরা সমুদ্রে ভেসে বেড়াত। আদেশ পাওয়া মাত্র ওগুলোর সাহসী বৈমানিকগণ জাপানী বিমান ও যুদ্ধ জাহাজের উপর আঘাত হানতো। জাহাজে সওয়ার ফাইটারগুলোর মধ্যে এফ-৪ ওয়াইল্ড ক্যাট, এফ-৬ হেলক্যাট এবং এফ-৪ ইউ কর্নিয়ার ফাইটার এবং বি-২৪ লিবারেটর, বি-২৫ মিচেলস ইত্যাদি বোম্বার খুবই বিখ্যাত ছিল। বি-২৯ বোম্বার বিমানগুলোও নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এগুলো ছিল দূরপাল্লার বোম্বার বিমান। এগুলো জাপানের খুবই ভেতরে বোমা বর্ষণ করত। বলা যেতে পারে শুধু দক্ষ বৈমানিকদের সাহস, মৃত্যুকে উপেক্ষা করার মত মানসিকতা এবং শক্তিশালী বিমানবহরের কারণে আমেরিকা, জাপানের নৌ ও বিমান শক্তির প্রাধান্য খর্ব করতে সমর্থ হয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সর্বত্র। ক্রমে জাপানের শক্তির গর্ব সমুদ্রের পানিতে যেন একাকার হয়ে যায়। তার সকল অহংকার লড়াইয়ের ময়দানে ধূলায় মিশে যেতে থাকে।

(Aircraft of the 509th Composite Group that took part in the Hiroshima bombing. Left to right: Big Stink, The Great Artiste, Enola Gay)

জাপানের বিরুদ্ধে আমেরিকার গৌরবময় দুটি বিমান আক্রমণ ছিল যুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বিভৎস ও হৃদয় বিদারক ঘটনা। আমেরিকার যুদ্ধবাজ নেতাগন রক্ত লালসায় উম্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের আরো রক্ত প্রয়োজন। স্রষ্টা আদর করে মানুষ নামের যে আশরাফুল মখলুকাত সৃষ্টি করেছিলেন তাদেরই লাশের উপর অট্টহাস্য করার জন্য আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী আবিষ্কার করল আনবিক বোমা। আদম সন্তানদের ধ্বংস করার জন্য এ মোক্ষম অস্ত্রটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকা। ভাবল জাপানই হবে তাদের প্রথম টার্গেট।

পরিকল্পনানুসারে একটি বোমারু বিমান আকাশে উড়ল। এর পেটে লুকানো নব আবিষ্কৃত ওই কুৎসিত বোমা। দিনটি ছিল ৬ই আগস্ট ১৯৪৫ সাল। বিমানটি হিরোশিমার উপর চক্কর দিল। বিশ হাজার টন টি.এন.টি ক্ষমতা সম্পন্ন বোমাটি বুতাম টিপে খালাস করলেন বৈমানিক। আকাশে যথা উচ্চতায় সেটি প্রচন্ড শব্দ করে ফেটে গেল, যেন বোমাটি গর্জন করে দুনিয়ার সকল মানুষকে তার আগমনী বার্তা জানান দিলো।

সাজানো, গুছানো, সুন্দর শহরটি মুহুর্তে এক মহাশ্মশানের রূপ নিলো। নিহত হল ৬০,০০০ হিরোশিমাবাসী। আহত হয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে কোন মতে বেঁচে থাকে আরও ২ লক্ষ মানুষ। মর্মান্তিক ও অমানবিক এই হত্যাযজ্ঞে স্তস্তিত হয়ে যায় সারা পৃথিবী। কিন্তু পাষান হৃদয় যুদ্ধবাজ নেতাদের সুপারিশে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের নির্দেশে এইরূপ আরো একটি হত্যাযজ্ঞের সিদ্ধান্ত হয়। হিরোসিমায় ‘লিটলবয়’ নামের আনবিক বোমা বহনকারী বিমান ‘এনেলা গে’ই নাগাসাকিতেও ‘ফ্যাটম্যান’ নামক আণবিক বোমাটি ফেলবে।


(Atomic cloud over Nagasaki/ নাগাসাকির আকাশে আণবিক মেঘ।)

৯ই আগস্ট ১৯৪৫ সাল। জাপানী শহর নাগাসাকির দিকে দুর্বার বেগে এগিয়ে চলেছে সে একই নিষ্ঠুর আমেরিকান বোমারু। হয়ত শহরের সৌন্দর্য বিহ্বল করল বৈমানিককে। হয়তবা মাত্র তিনদিন পূর্বের ধ্বংসলীলা আর হত্যাযজ্ঞের একটি স্পষ্ট ছবি তার মানসপটে ভেসে উঠল। বোতামের উপর তার হাত, সে হতে যাচ্ছে আর একটি হত্যাযজ্ঞের ঘৃণিত নায়ক। হয়তবা তার অবচেতন মন তাকে একাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিল, কেঁপে উঠল তার দেহমন। নাহ! সে যে একজন সৈনিক।

তাকে যে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই পালন করতে হবে। দেশের স্বার্থে এ ভয়ানক নির্দেশ তাকে অবশ্যই মানতে হবে। প্রচন্ড শব্দে কেঁপে উঠল নাগাসাকি। শত শত অগ্নি নাগিনি যেন ওদের তপ্ত ফনায় একে একে আঘাতে আঘাতে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করছিল সবকিছু। বিধ্বস্ত হল হাজার হাজার অট্টালিকা। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিল নব নব অগ্নিকুন্ড চারি – দিকে। নিমিশে মৃত্যুর নিকট বেঘোরে আত্মসমর্পন করল ৪০ হাজার লোক। নিরুপায় আহতদের করুন চিৎকারে অসহায় প্রকৃতি যেন মানব সভ্যতাকে ধিক্কার দিতে থাকল।

ঘটল জাপান ও আমেরিকার মাঝে চমকপ্রদ এবং মানবসভ্যতার সবচেয়ে ঘৃণিত ও ভয়াবহ আকাশ যুদ্ধের তথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি।

এ দু’দেশের মাঝে সংঘটিত পার্লহার্বারের যুদ্ধ ছিল জাপানের জন্য গর্ব। আমেরিকার অহংকার তার শক্তিশালী নৌঘাঁটি ধ্বংস করে জাপান গড়েছিল চমকপ্রদ যুদ্ধের এক ইতিহাস। এ যুদ্ধে বেসামরিক লোক খুব কমই প্রাণ হারিয়েছেন। আর সম্মুখ যুদ্ধের ময়দানে শত্রু সেনা নিধন কোন আইন বিরুদ্ধ কাজ নয়।

অবশ্য যুদ্ধ সভ্যতার জন্য সকল সময়ই অভিশাপ। সন্দেহ নাই আমেরিকার বিমানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা বর্ষণ জাপানকে শীঘ্র আত্মসমর্পনে বাধ্য করেছ তবুও তার একাজকে কখনো সমর্থন করা যায় না।

লাখো নিরপরাধ বেসামরিক লোক হত্যা করে যুদ্ধ বন্ধ করার কোন আইন কোথাও আছে কি? একা জাপান আর কতদিন যুদ্ধ করতে সমর্থ হতো? অল্প কিছু দিন পর সে নিজ থেকেই যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য হতো।
বিশ্বের মানুষ আর যুদ্ধ চায় না। চল আমরা এমন নির্দয়, দুঃখজনক ও কলঙ্কজনক যুদ্ধ থেকে মুক্তি কামনা করি।

আমেরিকান বোমারু ষ্ট্রাটোফোট্রেস কোয়েল মিসাইল ও বোমা নিক্ষেপ করছে। আমেরিকানরা এর দ্বারা কোয়েল মিসাইল শত্রু বিমান এবং রাডারকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য নিক্ষেপ করে থাকে। একটিমাত্র এই ধরনের ক্ষেপনাস্ত্রকে শত্রু রাডারে পাঁচটি মনে হয়।/B-52F releasing its payload of bombs over Vietnam ।

আরও লড়াই আরও বিমান

দানবরূপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দাবানলের মত দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ যুদ্ধ ধ্বংস করেছে হাজার হাজার জনপদ। বিষাক্ত করেছে ভারত, প্রশান্ত ও আটলান্তিক মহাসাগরের পবিত্র জলরাশি। মানব রক্তে সিক্ত করেছে তপ্ত মরুর উত্তপ্ত বালুকণা। দজলা, ফোরাত হয়ে সে রক্তধারা আরব সাগরের নোনা পানির সাথে মিশে গেছে। এ যুদ্ধ রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছিল ডেনমার্ক, নরওয়ে, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্সে। ওই সমস্ত দেশে জার্মান – ব্রিটিশ বিমান বহর ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে গিয়ে সৃষ্টি করেছিল মহা প্রলয়। জার্মান বিমান বহর গর্জন করেছে রুমানিয়া, হাঙ্গেরী, গ্রীস, বুলগেরিয়া ও যুগোশ্লোভাকিয়ার আকাশে। সুয়েজখাল, মিশর, সুদান ও তিউনিশিয়ার আকাশে মুখোমুখি হয়েছে চার্চিল আর মুসোলিনীর বিমান বহর।

আল-আমিন(El Alamein: Three major battles occurred around El Alamein between July and November 1942, and were the turning point of the war in North Africa.)এর আকাশে মরণপণ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে মিগ-১৫ এর সাথে মিত্র শক্তির উন্নত ধরনের বিমান নর্থ আমেরিকান স্যবর (এফ- ৮৬)। স্যবর ও মিগ-১৫ বিমান অবশ্য কার্যক্ষমতার দিক দিয়ে প্রায় সমকক্ষ ছিল। ৩৪০০০ ফুটের উর্ধ্ব দিয়ে মিগ-১৫ বিমান প্রচন্ড বেগে খুবই ফলপ্রসূভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারত শত্রু স্যবরের উপর, কিন্তু নিম্ন উচ্চতার স্যবর ছিল অপ্রতিরোধ্য। এর ছয়টি মেশিনগানের দুর্বারগতি বুলেটের ঝাঁক মুহুর্তে ধরাশায়ি করতো দূরন্ত মিগ বিমানগুলোকে।

You may visit following link:

https://www.britannica.com/place/El-Alamein

মিগ-১৫ বিমানের অল্প প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চীন দেশ ও কোরিয়ার বৈমানিকগণ তাদের কামানের বুতাম টিপার পূর্বেই স্যবরের মেশিন গানের গুলিতে ঝাঁকড়া হয়ে তাদেরই বিমানের অগ্নি গোলকের ভিতর দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেন। ওই সময় কঠোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অথবা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অভিজ্ঞ আমেরিকান বৈমানিকগণ স্যবরের ককপিটে হয়ত অট্টহাসিতে পৈচাশিক উল্লাস প্রকাশ করতেন। তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে যোগ হতো বিমান ভূপাতিত করার আরও নতুন অভিজ্ঞতা। ইতিহাসের পাতায় লিখা হয়ে যেত নতুন কোন রেকর্ড!

কোরিয়ার যুদ্ধে (কোরীয় যুদ্ধ (২৫ জুন ১৯৫০ – ২৭ জুলাই ১৯৫৩) জাতিসংঘ সমর্থিত কোরিয়া প্রজাতন্ত্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সমর্থিত গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া মধ্যকার ১৯৫০-এর দশকের প্রথম দিকে শুরু হওয়া তিন বছরের অধিক সময় ব্যাপী সংঘটিত হওয়া একটি আঞ্চলিক সামরিক যুদ্ধ) আহতদের করুন চিৎকারে সাড়া দিয়ে উদ্ধারে এগিয়ে এসেছিল হেলিকপ্টার। এর পূর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও হেলিকপ্টার অল্প বিস্তর ব্যবহৃত হয়েছে। অবশ্য মানব হিতৈষী রূপ নিয়ে কোরিয়ার দুর্গম রণক্ষেত্রে হেলিকপ্টারের আগমনে বেঁচে গিয়েছিল অনেক মৃত্যুপথযাত্রী আদম সন্তান। ওই যুদ্ধে হেলিকপ্টার যেন ছিল স্রষ্টার আশীর্বাদ।

রণক্ষেত্রে অথবা সমুদ্রে উদ্ধার কার্যে ওরা উড়ে যেত। বিপন্ন জনতা অথবা আহত সেনাদের বুকে নিয়ে ছুটত ওরা। ওদের নিরাপদ জায়গা বা হাসপাতালে পৌঁছে দিত। কোরিয়ার যুদ্ধের তিন বৎসরে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারগুলো বহন করেছে ২৩০০০ এর অধিক আহত মানুষ।

১৯৫৬ সালে কোরিয়ার মত ভিয়েতনামে কমিউনিজম ঠেকানোর উদ্দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকারকে বিমান, অস্ত্র ও সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে থাকে। ইতিহাসের পাতায় তাই ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত ।(The Vietnam War was a conflict in Vietnam, Laos, and Cambodia from 1 November 1955 to the fall of Saigon on 30 April 1975. It was the second of the Indochina Wars and was officially fought between North Vietnam and South Vietnam. Wikipedia) তখন কমিউনিষ্ট গেরিলারা ছিল সরকারের বিরুদ্ধে তৎপর। তাদেরকে বলা হত ভিয়েতকং। ভিয়েতকংদের সাহায্য করেছিল উত্তর ভিয়েতনাম, রাশিয়া ও চীন। তাদের ধ্বংস তথা নির্মূল করা সহজ ছিল না। তবে ওদের অবস্থানে হামলা করার নামে মার্কিনিরা ধ্বংস করেছে মানব সভ্যতার বিভিন্ন পুরাকীর্তি ও নিদর্শন। ওরা বারবার আঘাত হানে ভিয়েকংদের উপর সেকালে তাদেরই বানানো সবচেয়ে উন্নত বিমান ও অস্ত্র দিয়ে ।

চিত্রঃ বৃষ্টির মত বোমাবর্ষণ করছে ভিয়েতকং অবস্থানে আমেরিকান বোমারু/A U.S. B-66 Destroyer and four F-105 Thunderchiefs dropping bombs on North Vietnam during Operation Rolling Thunder।

১৯৫৬ থেকে ১৯৭৫ প্রায় ২০ বৎসর। মহাকালের তুলনায় এ সময়টুকু খুবই অল্প মনে হতে পারে কিন্তু মানব জাতির জন্য নেহায়েত কম নয় এ সময়। বহমান এ দিনগুলোতে আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক নতুন বিমান ও নতুন সমরাস্ত্র। আমেরিকা ও রাশিয়া তাদের অস্ত্রের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করেছে ভিয়েতনামের নিরিহ মানুষের উপর। নিত্যই নতুন নতুন মডেলের আমেরিকান বিমান উড়ে যেত ভিয়েতকং ধ্বংস করার নামে দো হত্যাযজ্ঞ চালানোর উদ্দেশ্যে। তাই পুরানো মডেলের বিমান তারা ক্রমে বাদ দিয়েছে। ১৯৫০ সালে কোরিয়ার আকাশের যোদ্ধা বিমান ডগলাস এ-১ স্কাইরাইডার আর ভিয়েতনামের আকাশে দেখা যায়নি। তার বদলে এসেছে ডগলাস এ-৩ স্কাইওয়ারিয়ার।

রাশিয়ান মিগের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অবর্তিত হয়েছে স্যাবর, এফ-১৪ টমক্যাট, এফ-১৫ ঈগল, এফ-১০২ কনভেয়ার ডেল্টা ডেগার, এফ-১০৪ ষ্টারফাইটার, এফ-১০৫ থান্ডারচীফ, এফ-১০০০ সুপার স্যবর, ফেনটম ইত্যাদি তথা সে সময়ের আধুনিক আমেরিকান ফাইটার বিমানগুলোর বেশিরভাগ। ওরা আকাশে মাঝে মাঝেই ডগফাইটে লিপ্ত হয়েছে।

(A F-105D shoots down a MiG-17, 1967./ আকাশে গুলি বিদ্ধ বিমান।)

সে যুদ্ধে কিছু কিছু মার্কিন বোম্বার অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমান বি-২৬ কে কাউন্টার ইনভেন্ডার, বি-৪৭, বি-৫৭ ক্যানবেরা ইত্যাদি বোমারুগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যেত ভিয়েতনামের বন বাদার ও গিরি কন্দরে ভিয়েতকং ঘাঁটি ধ্বংশের নেশায়। অতঃপর বোয়িং বি-৫২ ষ্ট্রাটোফোট্রেস অন্য সব বোমারু বিমানের স্থান দখল করে। এটি যেন ছিল আকাশে উড়ন্ত একটি দূর্গ। এ বিমান থেকে বৃষ্টির মত ঝড়ে পড়ত অগ্নি বোমা। আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়তো ভিয়েতনামের জনপদ, কল কারখানা, বনজঙ্গল ও পাহাড় পর্বতে।

(An Antonov An-26 lands at Tan Son Nhat Int’l / ভিয়েতনামে রুশ নির্মিত একটি আন্তনভ- ২৬ বিমান।)

ওই সময় রাশিয়ার বিমানেরও যথেষ্ট উন্নতি হয়। কোরিয় যুদ্ধের সময় রাশিয়ার মিকোয়ান গুরেভিচ মিগ -১৫ ছিল একমাত্র শক্তিশালী যুদ্ধবিমান। ক্রমে তাদের হাতে আসে মিগ-১৭, মিগ-১৯, মিগ-২১ (ফিশবেড) , মিগ-২৩ (ফ্লগার), মিগ-২৫ (ফক্সবেড), সুকুই এস ইউ -৭ (বিফিটার), এস ইউ-১১ (ফ্লাগন), টিউপলেভ টি ইউ-১৬ (বেজার), টি ইউ-২০ (বিয়ার), টি ইউ-২২ (ব্লাইন্ডার), টি ইউ-২৮ (ফিডলার), ইয়াক-৩, ইয়াক-১৫, ইয়াক-১৭, ইয়াক-২৩, ইয়াক-২৫ যুদ্ধবিমান। এদের অনেক বিমানই আমেরিকান যুদ্ধ বিমানের সাথে সমানে সমানে লড়েছে। আসলে এ যুদ্ধে কারও জয় হয় নি বরং তাতে মানব রচিত সভ্যতার বুক করা হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। যুদ্ধকালে বিধ্বস্ত অসহায়-মানুষের করুন আহাজারি বারবার ইথারে প্রতিধ্বনিত হয়ে মানবসমাজকে করেছে ব্যাঙ্গ প্রতিনিয়ত।

এরপরও যুদ্ধ প্রস্তুতি থেমে থাকেনি, থেকে থেকে দিকে দিকে বেজে উঠেছে রণদামামা। যুদ্ধবাজদের বজ্র হুংকারে কেঁপে উঠেছে বিশ্বের তাবৎ শক্তিকামী মানুষ। যুদ্ধ নামক কালো আজাদাহা এর লকেলকে জিহ্বা প্রসারিত করেছে বিভিন্ন দিকে। এর লেলিহান শিখার স্ফুলিংগ উল্কার মত আঘাত হেনেছে এ উপ-মহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্যের লিবিয়া, সিরিয়া , ইরাক – ইরান, ইয়েমেন এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে। বিভিন্ন সময় হঠাৎ করেই ইসরাইল নির্লজ্জভাবে তার নিজস্ব শক্তিশালী কাফির অথবা আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত ফ্যানটম বিমান দিয়ে আঘাত হেনেছে প্যালেষ্টাইনের উদ্বাস্ত শিবিরে।

লড়াইয়ে লড়াইয়ে কাবু এখন এগ্রহের অনেক দেশ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে নিজেরাই যেন আতঙ্ক সৃষ্টিকারী দেশ হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। ওরা পরিকল্পনামাফিক সুসংগঠিত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে টার্গেটে পরিণত করা অবস্থানে। এতে তারা সফল অধিকাংশ ক্ষেত্রে। অবশ্য ইরানে কমান্ডো হামলা প্রচেষ্টায় মার্কিন বাহিনী হারিয়েছে ওদের কিছু বিমান ও সেনা।

প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফিকে হত্যা প্রচেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ভাসমান ওদের বিমানবাহী জাহাজ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান উড়ে এসে হত্যা করেছে লিবিয়ার শত শত মানুষ। ধ্বংস করেছে কলকারখানা, বাড়িঘড়, রাস্তাঘাট, শহরবন্দর। সেটি এইত সেদিনের কথা। এ কাহিনী আলোড়ন তুলেছিল বিশ্বময়।

আমেরিকার চোখের কাটা পানামার প্রেসিডেন্ট নরিয়েগা। তাঁর দেশের উপর আমেরিকার কতৃত্ব সহ্য করতে পারতেন না তিনি। পানামা খালের উপর অপ্রকাশ্য নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য, পানামাতে তার ঘাঁটির ভবিষ্যৎ কণ্টকমুক্ত করার জন্য একদিন লৌহমানব নরিয়েগাকে গ্রেফতারের ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করে বসল পানামার বিভিন্ন সেনা ছাউনির উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজ।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মূলত: গণতন্ত্রের বুকে ছুড়ি হেনে অপর এক সর্বভৌম দেশে গণহত্যা চালালো আমেরিকা। একটি দুর্বল দেশের রক্ষক নিজেই তার ভক্ষক হয়ে বসল। তার বিমান ও হেলিকপ্টার গানশীপের আক্রমণে দিশেহারা দুর্বল পানামার সশস্ত্র বাহিনী পরাজিত হয়ে অস্ত্র সম্বরণ করল। ব্যর্থ লৌহ মানব নরিয়েগা ১৯৯০ সালের জানুয়ারী মাসের এক বিশাদময় দিনে আত্মসমর্পণ করলেন। আরো দেখুন:(https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE_%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B2)

দুনিয়ার দেশে দেশে যেখানেই এমনটি ঘটে তার পিছনে থাকে বৃহৎ শক্তি তথা বিশ্ব মোড়লদের কারো না কারো স্বার্থ! ওদের মতে তাদেরও রয়েছে অন্যদের তেল, সোনা, হিরাসহ সকল প্রকার সম্পদের হিস্যা!

হালে রুশ ইউক্রেনের মাঝে যুদ্ধ চলছে। ট্যাংক – বিমান এর সাথে ড্রোন, সাঁজোয়া যান, আর্টিলারি, বিমানবিধ্বংসী কামান– এসব হরহামেশা এশতেমাল করছেন উভয় পক্ষের সেনা।
রুশ সেনাবাহিনী নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনের প্রধান প্রধান শহরের বেসামরিক স্থাপনাসহ যত্রতত্র। দখল করে নিয়েছে ইউক্রেনের চার অঞ্চল— দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া। সেসব অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। হাতছাড়া হয়ে যাওয়া চারটি অঞ্চল ফিরে পেতে পাল্টা আক্রমণ করেছে ইউক্রেন। গত ১৮ অক্টোবর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ অবকাঠামো। সামরিক-বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে কিয়েভসহ অন্যান্য শহরে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কামিকাজি ড্রোন বা আত্মঘাতী ড্রোন ইরান রাশিয়াকে সরবরাহ করেছে ।

২০১৪ সালে শুরু হওয়া এ অনন্ত লড়াই বিষয়ে আরো জানতে চাইলে ক্লিক করুন:

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B6-%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7#:~:text=%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B6%2D%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%20%E0%A6%93%20%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%20%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF%20%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%93,%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%20%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%85%E0%A6%82%E0%A6%B6%20%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%20%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A5%A4
রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি পুনঃ নতুনভাবে নব নব কৌশলে ইউক্রেন আক্রমণ করে।[৯] এই আক্রমণটিকে আন্তর্জাতিকভাবে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১০][১১][১২] এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সূত্রপাত করে,[১৩][১৪] ৮.৮ মিলিয়নেরও বেশি ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়েছে,[১৫][১৬] এবং আরও লক্ষাধিক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়।[১৭]

এ দুই দেশও যুদ্ধে বিমান ব্যবহার করছে। উভয়েরই রয়েছে একই নির্মাতাদের বানানো বিমান। সুতরাং,এ দুই দেশের বিমান বাহিনীর যুদ্ধ রুশ বনাম রুশ যুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই নয় । তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা ন্যাটো জোট থেকে উন্নত প্রযুক্তির বিমান ইউক্রেন পেলে ওদের বিমান যুদ্ধ নয়া মাত্রা পেতে পারে। উভয়ের কাছেই এখন রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির ড্রোন। উভয়ে সেসব একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। এমনকি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হত্যার জন্য ইউক্রেন ড্রোন হামলা করতে সাহসী হয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার ফলে রুশ দাপট কিছুটা কমলেও বহাল তবিয়তে এখনো মার্কিন শক্তি । চীন সে মুলুকের সাথে দিতে চাইছে পাল্লা । দেশটির বিমানের মত চীন দেখুন:

Air War: China’s Fighter Jets vs US Fighter Jets – Warrior Maven: Center for Military Modernization

বাংলাদেশের আর কোন যুদ্ধে শরিক হওয়ার ইচ্ছা নাই যদিও মায়ানমার কখনো কখনো সীমান্তে অশান্তি সৃষ্টি করে। ভারত অবশ্যই আমাদের দেশের বন্ধু রাষ্ট্র। আশা করি ভারতীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের দেশের দিকে লালচের দৃষ্টি দিবে না। বি এস এফকেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার নির্দেশ দিবে।

তবে আমাদের বাহিনী দুনিয়ার অশান্ত দেশে দেশে শান্তি মিশনে যুক্ত রয়েছে। বিধায়, আমদেরও আধুনিক সামরিক বাহিনী, এর জাহাজ, বিমান, ড্রোনসহ হরেক সমরাস্ত্র থাকা উচিত । এসব বিষয়ে আমাদের সরকারও সচেতন।

এ বিষয়ে নিম্ন লিঙ্ক থেকে আরো তথ্য পাওয়া যাবে। আমার সেনা জমানায় আমাদের ৬ স্বতন্ত্র এক এক ব্রিগেডে টার্গেট ড্রোন ছিল। যুগের প্রয়োজনে উন্নত উড়োযান থাকা উচিত।

Watch “বাংলাদেশের বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে সর্ববৃহৎ যুদ্ধজাহাজ ও ড্রোন। Bangladesh Army buying combat drone” on YouTube

***************

পাক-ভারতের মাঝে যুদ্ধে বিমান

১৯৬৫ সালে পাকভারত যুদ্ধের সময় এ ধরনের এফ-৮৬ স্যবর ফাইটার পাকিস্তানের আকাশে টহল দিত।

১৯৪৭ সনের ১৪ ও ১৫ই আগস্ট বৃটিশ সিংহ পাকিস্তান ও ভারতকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দিতে বাধ্য হয়। প্রায় দুইশত বৎসরের গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করে উদয় হয় দুটি মুক্ত সূর্য।

বৃটিশ রাজ যখন ছলে বলে কৌশলে এ উপমহাদেশের ভারতবর্ষ নামক এলাকাকে গ্রাস করছিল তখন মুসলমানরা ছিলেন এ অঞ্চলের হর্তা কর্তা। এ বিশাল ভূখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে তখন বসবাস করতেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এদের নিজেদের মাঝে কলহ বিবাদই এদেশে বৃটিশ আগমনের পথ করে দিয়েছিল।

ক্রমে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। ভবিষ্যতের হবু জাতিগত সমস্যা উৎরানোর লক্ষ্যে এ উপমহাদেশের বুদ্ধিমান লোকেরা আজাদি আন্দোলন শুরু করেন ও আওয়াজ তোলেন দুটি স্বাধীন দেশের। ভারত বিভক্ত হয়ে স্বাধীন হয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত ইংরেজ বিভক্তকারীদের স্বার্থপরতার দরুন মুসলিম প্রধান কিছু অঞ্চল ভারতকে দিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনা চক্রে কাশ্মীর উপত্যকাও হিন্দুস্তানে যোগদান করে ফেলে। এর হিন্দু রাজা ভারতের সাথে গোপনে এ কাজটি দ্রুততার সাথে করে ফেলেন।

গর্জে উঠে ওই সকল অঞ্চলের জনতা। শীর দেগা, নেহী দেগা আমামা! জান দিয়ে দেব কিন্তু সম্মান ভূলুণ্ঠিত হতে দেব না। তারা আওয়াজ তোলে স্বাধীনতার। মুসলিম অধ্যূষিত দেশ পাকিস্তান তাদের প্রজ্জলিত অগ্নিতে দেয় ঘৃতাহুতি। ফলে পাকিস্তান ও ভারত বেশ কয়েকবার লড়াইয়ে নিজেদের শক্তি পরীক্ষা করে নেয়। সমৃদ্ধ করে তাদের অস্ত্রশালা, ক্রমে তাদের বিমান বহরে যোগ করে নতুন ও উন্নততর বিমান। আমেরিকা ও চীন দেশ হয়ে যায় পাকিস্তানের অস্ত্রের প্রধান জোগানদার।

অপরপক্ষে রাশিয়া ও বৃটেন থেকে ভারতও সংগ্রহ করতে থাকে বিভিন্ন অস্ত্র আর বিমান। নিজেরাও নিজেদের কারখানায় রাশিয়া ও বৃটেনের কিছু বিমান সংযোজনে সমর্থ হয়। একে অপরকে কাবু করার জন্য তাদের সৈনিক ও বৈমানিকদের দিতে থাকে কঠোর প্রশিক্ষণ। ওরা শান দিতে থাকে নিজেদের অস্ত্র।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিশ্ব মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে এর আগমন। হিন্দু ধর্ম ও শান্তির কথা বলে। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবাজ নেতারা স্ব স্ব ধর্মের লোকদের রক্ষার নামে বক্তৃতা মঞ্চে ও রেডিও টেলিভিশনে ছড়াতে থাকেন হিংসার বীজ। গোপনে দিতে থাকেন নরহত্যার তালিম। এ দু’টি দেশ ধর্মের নামে, দেশের অখন্ডতা রক্ষার নামে বেশ কয়েকবার একে অপরের উপর প্রচন্ড হামলা চালায়। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের হস্তক্ষেপে হিন্দু ও মুসলমান সৈনিকদের লাশের উপর থেমে যায় তাদের যুদ্ধ।

পুনঃ লালসা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। বক্তৃতা মঞ্চে ইথারে প্রচারণা যুদ্ধ তুঙ্গে উঠে। জোর কদম এগিয়ে চলে সেনাদল সীমান্তের দিকে। শো শো করে উভয় দেশের বিমান কোন কারণ ছাড়াই ঢুকে পড়ে একে অপরের সীমানার ভিতর। কঠোর ভাষায় উভয় দেশই পাঠাতে থাকে প্রতিবাদ লিপি। যেন উভয় দেশেরই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়।

৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সাল। জলে, স্থলে, আকাশে হঠাৎ করেই গর্জে উঠে উভয় দেশের মারণাস্ত্র। যুদ্ধভয় দানা বাঁধতে শুরু করে। আর্তনাদ করে উঠেন উভয় দেশের আদম সন্তান। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ঠোঁটের কোণে দেখা দেয় ক্রোড় হাসি। রক্তিম গোলার আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে যায় সীমান্তের খেমকারান ও লাহোরের মাটি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অসীম সাহসী বাঙ্গালী যোদ্ধাগণ বুকে ডিনামাইট বেঁধে লাফিয়ে পড়েন অগ্রসরমান শত শত ভারতীয় ট্যাঙ্কের সামনে লাহোরের রণক্ষেত্রে। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে উর্ধ্বে উচিত হয় ট্যাঙ্ক যেমন প্রচন্ড পদাঘাতে কোন ফুটবল আকাশে খোঁজে আশ্রয়। অতঃপর মাটিই একে নিজের দিকে টেনে আশ্রয় দেয়। হতভম্ব হয়ে যান ভারতীয় যুদ্ধবাজ নেতারা। বাদবাকী ভারতীয় ট্যাঙ্ক পিছু হটে নিজ দেশের মাটিতে ফিরে যায়। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারতীয় জেনারেল সাহেবদের লাহোর কব্জা করে কোন সেনা ছাউনিতে চা পান করা সেবার আর হলো না। খায়েশটি ভবিষ্যতের জন্য রয়ে যায়।

স্থলযুদ্ধের সাথে সাথে উভয় দেশের ভিতরে বিমান ঘাঁটি, সামরিক স্থাপনা, কলকারখানা, বাড়ীঘর, রেল লাইন, রাস্তায় – পুলে আকাশ থেকে বোমা পড়তে থাকে। আক্রান্ত দুই দেশেরই সকল নাগরিক যেন তখন স্বভাবগত ভাবেই উত্তেজিত। মাঠে, পথে পথে বা নৌকা ⛵⛵ জাহাজ ঘাটে বা বিনোদন কেন্দ্রে বা মুদি-পান দোকানের সামনে জটলা পাকিয়ে রেডিওতে লড়াইয়ের খবর শোনা তখন যেন জরুরি হয়ে গিয়েছিল। তখন এ জটলা পূর্ব পাকিস্তানেও দেখা যেতো। আবাল – বৃদ্ধ সকলেই রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে সরকার কবির উদ্দিন পঠিত সংবাদ শোনার জন্য ভির জমাতেন।

কখনো বা উভয় দেশেরই জনতা লড়াইয়ে পক্ষ নিয়ে মিছিল করতেন। তরুণ দলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ ও শান্তি সমাবেশ আর মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হত । মিছিল থেকে হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত হতে থাকত বন্দে মাতরম, হরেকৃষ্ণ হরে রাম আর নারায়ে তকবীর ও ইয়া আলী ধ্বনি। কাঁপতে থাকত বিষণ্ণ প্রকৃতি। কখনো কখনো শ্লোগান শোনা যেতো,”যুদ্ধ নয় শান্তি চাই”।

কখনোবা ভারতীয় হান্টার, নেট, মীগ, ক্যানবেরা বিমানগুলো আপন পেটে গোলাগুলি, রকেট, মিসাইল, বোমা ইত্যাদি মারণাস্ত্র লুকিয়ে ছুটে যেত পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে। শহরে, বন্দরে বেজে ওঠত সতর্কতা সংকেত ‘সাইরেন’। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্যবর, এফ-৬ (মীগ-১৯), এফ-১০৪ ষ্টার ফাইটারও প্রস্তুত। ওদের দক্ষ বৈমানিকেরা পাকিস্তানের আকাশ রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বিমান ঘাঁটিগুলিতে ক্ষণে ক্ষণে বেজে উঠেছে পাগলা ঘণ্টা। দূরন্ত বৈমানিকের দল মুহুর্তে তাদের বিমান নিয়ে উল্কাবেগে ছুটে চলেন শত্রু বিমানের খোঁজে। আকাশে বাজতে থাকে আজরাইলের মরণঘণ্টা। উভয় বিমান বহর থেকে ছুটে আসে বুলেট, রকেট, মিসাইল। কোন কোনটি আঘাত হানে যুদ্ধরত কোন বিমানে। বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিবলয়ে প্রবেশ করে সেটি। প্যারাস্যুট নিয়ে ককপিটসহ পাইলট প্রচন্ড গতিতে বের হয়ে যান বিমান থেকে অথবা বিমানের অগ্নিবলয়ই হয় তার জীবনের শেষ চিতা। সেখান থেকে তিনি নিরবে একাকী অজানা ঠিকানার দিকে যাত্রা শুরু করেন। নিঃশব্দে মহাকালে ঠাঁই নিয়ে অনন্ত জগতে প্রবেশ করেন তিনি। দেশের জন্য তাঁর গৌরবময় বিমান সেনা জীবনের হয় অবসান।

ওই যুদ্ধে পাকিস্তানের এফ-৮৬ স্যবর, এফ-৬ (মীগ-১৯), এফ-১০৪ ষ্টার ফাইটার বহুবার ভারতীয় হাণ্টার, নেট, মীগ ফাইটার বিমানের মুখোমুখি হয়েছে। অসীম সাহসে প্রচন্ড তেজে, অবিশ্বাস্য কৌশলে পাকিস্তানী বৈমানিকগণ হামলাকারী শক্তিশালী ভারতীয় বিমান বহরের হামলা মোকাবেলায় সৃষ্টি করেছেন যুদ্ধের এক চমকপ্রদ ইতিহাস।

১৯৬৫ সালের ১৭ দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান বিমান বহর যে বীরত্ব প্রদর্শন করেছিল তা সম্ভবত: কখনো ম্লান হবে না। হয়ত কেউই কখনো মুছে ফেলতে সমর্থ হবেনা সে যুদ্ধের একজন বীর বাহাদুর বাঙ্গালী বৈমানিকের সৃষ্ট রেকর্ড যা বিশ্বের বিমানযুদ্ধের ইতিহাসে খুবই বিরল। তোমরা ওই বাঙ্গালী বৈমানিকের নাম জান কি?
তাঁর নাম স্কোয়াড্রন লীডার আলম। তিনি ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশেরই একজন দূরন্ত সন্তান। পয়ষট্টির ওই ভয়ঙ্কর যুদ্ধের সময় তিনিও অনেক বাঙ্গালীর মত পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে পি এ এফ সারগোদা বেইসের বৈমানিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধ তখন তুঙ্গে । একদিন ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমান ঝাঁকে ঝাঁকে আঘাত হানলো পাকিস্তানের মূল ভূখন্ডে। অন্যান্য বৈমানিকদের মত সেদিন ওই তরুণ স্কোয়াড্রন লীডার তাঁর স্যবর জেট নিয়ে সারগোদায় আকাশে উড়েন। সাহসী কৌশলে ডুকে পড়েন শত্রু বিমান ঝাঁকের ভিতর। মুহুর্তে তিনি পাঁচটি ভারতীয় হান্টার বিমান গুলি করে নামিয়ে ফেলেন।

এ যুদ্ধে ৩ বার মাত্র শত্রুর মুখোমুখি হয়ে ডগ ফাইটে তিনি ধ্বংস করেছিলেন ৯টি ভারতীয় হান্টার। এ যুদ্ধের অপর বীর বৈমানিকদের মাঝে ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার সা’দ হাশমী। আরো অনেক সাহসী বৈমানিক ছিলেন যাদের কেউ কেউ ফাইটার নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আর কেউবা পাকিস্তান বিমান বাহিনী বি-৫৭ বোমারু বিমান নিয়ে রাতের আঁধারে ভারতের মূল ভূখণ্ডের ভিতরে বোমাবর্ষণ করে বীরবিক্রমে ফিরে এসে গর্বিত কসরৎ দেখিয়ে দেখিয়ে রানওয়ের উপর চক্কর দিয়ে অবতরণ করেছিলেন।

১৯৬৫ সালের যুদ্ধ বাংগালী সৈনিক ও বৈমানিকদের জন্য বয়ে এনেছিল বিশেষ সম্মান। ওই যুদ্ধে তারা সর্বত্রই প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন তাদের শক্তি, সাহস, দক্ষতা আর যুদ্ধকৌশলের বাস্তব অবস্থা। এ যুদ্ধ পাঞ্জাবের শাসক গোষ্ঠীর টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল বাংগালীদের আর খাট করে দেখলে চলবে না। যে কোন সম্মুখ সমরে ওরা মোটেই দুর্বল ও ভীরু নয়।

ভারত ও পাকিস্তানের বর্তমান বিমান বাহিনীর বিমান সম্পর্কে জানতে নিম্ন লিংকে ক্লিক করুন; https://m.facebook.com/sharer.php?u=https%3A%2F%2Fdeshibideshisahitto.wordpress.com%2F2023%2F05%2F09%2Fwatch-%25e0%25a6%25ac%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%25ae%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25a8-%25e0%25a6%25b6%25e0%25a6%2595%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25a4%25e0%25a6%25bf-%25e0%25a6%25a8%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%25af%25e0%25a6%25bc%25e0%25a7%2587-%25e0%25a6%25aa%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%2595-%25e0%25a6%25ad%25e0%25a6%25be%2F&t=Watch+%22%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8+%E0%A6%B6%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF+%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87+%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4+%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0+%E0%A6%A4%E0%A6%BF+%E0%A6%AF%E0%A7%8B+%E0%A6%97%E0%A6%BF+%E0%A6%A4%E0%A6%BE%21%22+on+YouTube

**************

স্বাধীনতা ও ১৯৭১এর বিমান যুদ্ধ


(From the dog fight over Karachi: A story of 1971 war/করাচির আকাশে যুদ্ধ বিমান।)

পাকিস্তান ও ভারতের মাঝে ১৯৭১ সালে আবারও বেজে উঠল রণদামামা। এ বারের সংগ্রাম আর কোনক্রমেই হিন্দু ও মুসলিম ঐতিহ্য নিয়ে বিবাদ তথা জাতীয়বাদ থেকে উদ্ভূত ছিল না।

এ সংগ্রাম ছিল ১৯৪৭ সালে পাক ভারত স্বাধীনতার পর থেকে পাকি শোষনের ফলে ধুঁকে ধুঁকে রূপ নেওয়া বাংগালী জাতীয়তাবাদ থেকে উদ্ভূত সংগ্রাম। বলা যেতে পারে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর পরই এ যুুদ্ধের বীজ বপন করা হয়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে সেটা মহিরূহে পরিণত হয়েছে।

বলতে দ্বিধা নেই যদি মুসলিম প্রধান এ অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান নাম নিয়ে স্বাধীন না হত অথবা ভারতের অংশ হয়ে স্বাধীন হত তবে বাংগালী জাতীয়তাবাদ এত শীঘ্র পূর্ণতা প্রাপ্ত হতে সমর্থ হত না। দিল দরিয়া বুদ্ধিজীবী যারা বলেন ৪৭এ পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টি ভুল ছিল তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, তাহলে এদেশেরও কাশ্মিরের মতই হয়তো ভারতের সাথে থাকতে হতো। তাই ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা বর্তমান বাংলাদেশের জন্য কোন ক্রমেই অভিশাপ ছিল না।

১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে জাতীয়তাবাদের ক্ষয় নেই আর এর নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। কখনো এটা ধর্মের, কখনো দেশের, কখনো বা ভাষার লেবেল লাগিয়ে এগিয়ে চলে। এর যেন পেছনে যেয়ে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ারও কোন অবকাশ নেই।

১৯৪৭ সালের পরপরই পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দারা রাষ্ট্রভাষা বাঙ্গলা চাই স্লোগান দিল। ১৯৫২ সনে সালাম, বরকত, রফিক আরো অনেকে ভাষার জন্য প্রাণ দিলেন। শ্লোগান উঠল, “রাষ্ট্রভাষা বাঙ্গলা চাই”, “নূরুল আমিনের কল্লা চাই”। সময় দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলল। রাজনীতিকদের খেলা জমে উঠেছে তখন ।

১৯৭০ সালের গণভোটে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ ভূট্টোর পিপলস পার্টিকে নির্বাচনে হারিয়ে দিল। পান্জাবী শাসক গোষ্ঠীর সহায়তায় সিন্ধি ভূট্টো ক্ষমতা দখলের পায়তারা চালালেন। এগিয়ে আসলেন এয়াহিয়া, টিক্কা খান আরও অনেক জেলারেল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ গভীর নিশিতে ঢাকার রাজপথে শোনা গেল গুলির আওয়াজ। বন্দি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

বাংলার দামাল ছেলেরা শুরু করল মুক্তিযুদ্ধ। এদেশ থেকে পান্জাবীদের হটাতে হবে। দেশকে স্বাধীন করতে হবে। শেখ মুজিবকে দেশে ফিরিয়ে আনতেই হবে। শহর গ্রামে গঞ্জে শ্লোগান উঠল, “স্বাধীন বাংলাদেশ চাই, শেখ মুজিবের মুক্তি চাই”।

(Indian aircraft carrier INS Vikrant launches an Alize aircraft/ভারতীয় বিমানবাহী জাহাজ।)

হাতিয়ার হাতে অবস্থান নিল পাক সেনারা। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা ছাউনির আবাস থেকে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর বাংগালী ফৌজদের নিয়ে যাওয়া হল যবনিকার অন্তরালে। তবে পূর্ব পাকিস্তানের সেনা শিবিরের সৈনিকদের বিদ্রোহী হয়ে অস্ত্রসহ ভারতে চলে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সহজ ছিল।

পশ্চিম পাকিস্তানের আবাস থেকেও অনেক সাহসী সৈনিক, নাবিক আর বৈমানিক পালিয়ে এসে নাম লেখাতে থাকলেন মুক্তিফৌজে। অচেনা মরু ও বন্ধুর গিরিকন্দর পার হয়ে ওদের অনেকেই ছুটে চললেন ভারত আর আফগানিস্তানের দিকে মুক্তির সন্ধানে। অনেকেই খায়বরের রাধা চক্করে পড়ে ফের ফিরে গেলেন বন্দি শিবিরে। সে আরেক ইতিহাস।

মুক্তিযুদ্ধের অনেক বইতেই সেগুলো লিখা হয়েছে। যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সলের ২৬ শে মার্চ সে যুদ্ধ প্রায় চূড়ান্ত রূপ লাভ করে একই সনের নভেম্বর মাসের দিকে। ভারতীয় বাহিনী মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় সরাসরি পাক বাহিনীর উপর হামলা করার সুযোগ খুঁজতে থাকে।

২৯ নভেম্বর ভারতের হিলি বালুরঘাট অঞ্চলে হামলা চালায় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এক ঝাঁক স্যবর। প্রচন্ড তেজে ছুটে আসে ভারতীয় বিমান। তাদের গোলার আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তিনটি পাক স্যবর জেট। এক দিন প্রচন্ড শক্তি নিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী হামলা চালায় ঢাকায় পাকিস্তানী বিমান ঘাঁটির উপর। হামলার পর হামলা চলতে থাকে। রাতের আঁধারে ভারতীয় বিমানের দিকে ছুটে পাক এন্টি এয়ার ক্রাফট গানের গোলা। উজ্জল আলোকে নিমিশের জন্য দূর হয়ে যায় অন্ধকার। রানওয়ের উপর আছরে পড়ে শক্তিশালী বোমা। কেঁপে উঠে ঢাকা শহর। একে একে অকেজো হয়ে পড়ে পাক বিমান বহরের কুল্লে কুড়িটি স্যবর জেটের সবগুলো। তছনছ হয়ে যায় বিমান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সম্পদ।

পূর্ব রণাঙ্গনের আকাশ তখন ছিল একচেটিয়াভাবে ভারতীয় বিমান বহরের ডানার নিচে। ওদের বাধা দিতে উড়ে যেত না কোন স্যবর। এক সময় এন্টি এয়ারক্রাফট গানের গোলা বর্ষণও থেমে গেল। পশ্চিম রণাঙ্গনে মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছিল অল্প বিস্তর পাক বিমান বাহিনীর এফ-৬, মিরেজ, স্যবর ও এফ-১০৪ ষ্টার ফাইটার বিমানগুলো।

তবে যেন তারা সুদক্ষ বাঙ্গালী বৈমানিকদের হারিয়ে ১৯৬৫ সনের দূর্দান্ত প্রতাপ হারিয়ে ফেলেছিল। ওই যুদ্ধে শত শত ভারতীয় হাণ্টার, নেট, মীগ, মিরেজ, হ্যারিয়ার, সুকুই, ক্যানবেরা বিমানের তুলনায় পি এ এফের মাত্র ২৪৫টি এফ-৬, স্যবর, এফ-১০৪, মিরেজ, বি-৫৭ বিমান ছিল খুবই নগণ্য। ১৯৭১ সনের ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ব রণাঙ্গনে পাক সেনাদের ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্ম সমর্পনের পর মিটে যায় পাকিস্তানের যুদ্ধস্পৃহা। পাক বিমানগুলো তাদের স্ব স্ব ঘাঁটির শান্তিময় আশ্রয়ে ফিরে যায়।

Watch “ভারতের সামরিক শক্তিকে যেভাবে মোকাবেলা করতে চায় পাকিস্তান!” on YouTube

(দ্র: দেশ দুটির যুদ্ধ প্রস্তুতি থেমে নেই। উপরের ভিডিও দেখুন।)

যাক, এ যুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিমান বহর তার সীমিত শক্তি নিয়ে কৌশলগত যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশ এয়ারফোর্স মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর এয়ার বেইসে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই যুদ্ধের শেষের দিকে ভারতের নিকট থেকে একটি ডাকোটা, একটি অটার এবং দুটো এলিউট হেলিকপ্টার পেয়ে পাক বিমান বাহিনীর পলাতক বৈমানিকেরা একটি ক্ষুদ্র তবে কার্যকর বাহিনী গড়ে তোলে। অটার বিমান আর হেলিকপ্টারগুলিতে মেশিনগান লাগানো হয়েছিল। ওরা শত্রুর যোগাযোগ পথ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সফলভাবে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হেনেছে।

সন্দেহ নাই ১৯৭১ সলে নবগঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মোটেও শক্তিশালী ছিল না তবে অস্বীকার করার কোন উপায়ও নেই যে আজকের বিমান বাহিনীর ভিত্তি এবং প্রস্তুর তখনই স্থাপিত হয়েছিল।

সে বিমান বাহিনীর বিমান আর আজকের বি এ এফের সামর্থ্য এক নয়। এক নয় এর বিমান সংখ্যা। আমরা যুদ্ধ চাইনা তবে মায়ানমার যেন বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ করতে মুখিয়ে আছে ! নিম্ন লিংকে উভয় দেশের শক্তি দেখুন;

Watch “বাংলাদেশ vs মিয়ানমার সামরিক শক্তি ২০২৩ | সমরাস্ত্র,বিমানবাহিনী,যুদ্ধবিমান! Nur Mohammad #বিমান” on YouTube

***************

৭১এর বিমান যোদ্ধাদের কথা

Watch “ঢাকার আকাশে হঠ্যাৎ যুদ্ধ বিমান !” on YouTube


চিত্রঃ ঢাকার আকাশে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বি এ এফের যুদ্ধবিমান।

আগের কন্টেন্টে কিলো ফ্লাইটের জন্ম কাহিনী বয়ান করা হয়েছে। এর সদস্য কারা ছিলেন তা অন্যত্র লিখা হয়েছিল ইংরেজি ভাষায়। নিম্ন লিংকে ক্লিক করে তা জানা যাবে।

https://navigationtalk.wordpress.com/

উল্লেখ্য আমার কিলো ফ্লাইটে কাজ করার সুযোগ হয় নাই তবে বন্দি শিবিরের জীবন অবসানের পর দেশে ফিরে বি এ এফ এর ৩ নং স্কোয়াড্রনের বিমানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে অটার বিমানের ফ্লাইট লাইনে কাজ করতে হয়েছে। সে বিমানের ফ্লাইট ইন্জিনিয়ার, এয়ার সিগন্যালার, লোড মাষ্টার সকলেই ছিলেন কিলো ফ্লাইটের সদস্য। সে বিমান চালাতে আসতেন ৩ নং স্কোয়াড্রনের ওসি পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার জামাল উদ্দিন আর কো পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোঃ রফিক। তাঁরা কি কিলো ফ্লাইটে ছিলেন না বন্দি শিবিরে ছিলেন তা এখন আর মনে নেই। তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ সময়ে বি এ এফ প্রধান হন এবং এয়ার মার্শাল পদবীতে চাকরিকাল অবসান হলে অবসরে যান।

আসলে ৩ নং স্কোয়াড্রনের বিমান সেনা যাদের সাথে আমাদের কাজ করতে হয়েছিল তাঁরা কিলো ফ্লাইট থেকেই এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ওয়ারেন্ট অফিসার ভূঁইঞা, ফ্লাইট সার্জেন্ট আউয়াল, সার্জেন্ট শহীদ, সার্জেন্ট আলমগীর প্রমুখ এখনো স্মৃতি মাঝে বিরাজমান। মাঝে মাঝে সে সব সময়ে ফিরে যাই যেন! আমরা নতুনরা ছিলাম পাকিস্তানের বন্দিদশায় পদবী স্থির হয়ে থাকা এ সি১ বা এ সি২ বা এল এ সি বা এস এ সি বা জে টি। তাদের মধ্যে স্রেফ এল এ সি জাকারিয়ার নাম মনে করতে পারছি। আমি ও তিনি আন্তনভ-২৬ বিমানের ককপিটে পাশাপাশি নিজ নিজ ট্রেডের প্রি ও পোস্ট ফ্লাইট পর্যবেক্ষণ সমাপন করেছি। বি এ এফ থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি বাংলাদেশ বিমানের ইন্জিনিয়ার পদবির একজন কর্মকর্তা হন ও অবসরে গমন করেন।

উল্লেখ্য কিলো ফ্লাইটৈ যে সব বিমান ছিল ও পরে যুক্ত কিছু বিমান এখন রয়েছে বি এ এফ যাদুঘরে। নিম্ন লিংকে সেসব দেখে নিতে ক্লিক করতে পারেন: https://deshibideshisahitto.wordpress.com/2023/05/09/watch-%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a7%87/

১৯৭১ সালের পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বন্দি সময়ে ফিরে যাই। তখন অনেক বৈমানিক ও বিমান সেনা ভাবতেন যদি কোন না কোন ভাবে একটি বিমান কাবু করা যেত। যদি কোন বিমান নিয়ে ভারতের মাটিতে অবতরণ করা যেত, তবে সেই বিমান দিয়েই পাক বাহিনীর উপর হামলা করা যেত। একদিন এ বাংলাদেশের দামাল ছেলে বীর বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যাণ্ট মতিয়ুর রহমান পি এ এফ থেকে একটি বিমান হাইজ্যাক প্রচেষ্টার সুযোগ পেয়ে গেলেন।

তিনি ছিলেন পাক বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট ইনস্ট্রাক্টর। তাঁর ট্রেনিং বিমান খানা (টি-৩৩) তারই পাকিস্তানী ছাত্র মিনহাজকে নিয়ে আকাশে উড়ল। তিনি তাঁর ছাত্রকে উড্ডয়নের বিভিন্ন কৌশল শিক্ষা দিয়ে চলেছেন। কখনো হয়ত দ্রুত বেগে চক্কর খেতে খেতে উপরে উঠে লেভেল ফ্লাইট যাচ্ছেন। কখনোবা মরুর বালি ছুই ছুই অবস্থায় রাডার ফাঁকি দেওয়ার কৌশলে উড়ে চলেছেন। চমৎকৃত মিনহাজ উস্তাদের বাহাদুরিতে মনে মনে পঞ্চমূখ।

প্রশিক্ষকের মনের অবস্থা তিনি জানবেন কি করে? উস্তাদের মনে তখন আর একটি বিমান বাহিনী গড়ার স্বপ্ন। মতিয়ুরের দেশ প্রেমে উদ্বেলিত মন ছাত্র মিনহাজসহ বিমান নিয়ে পাকিস্তানের রাডারের চোখে ধূলা দিয়ে ভারতের কোন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণের লক্ষ্যে কৌশলে সীমান্তের দিকে এগিয়ে চলেছেন। ক্রমে দূরত্ব কমতে থাকল।

ভাবাবেগে আপ্লুত মিনহাজ যেন বাস্তবে ফিরে এলেন। ভাবলেন এপথে কেন? এত প্রশিক্ষণ এলাকা নয়। আকাশ থেকে ভারতের জাম নগর বিমান ঘাঁটি দেখা যাচ্ছে। তবে কি উস্তাদ ভারতে নেমে তার নিজ নিজ মাতৃভূমিতে যেতে চাচ্ছেন? তিনিও তার সমস্ত যুক্তি দিয়ে প্রকৃত ঘটনা আঁচ করতে সমর্থ হলেন। তাঁর পাকিস্তানী রক্ত, পাকিস্তানের জন্য দান করার প্রতিজ্ঞা করে ফেললেন তিনি। মনে মনে ঘোষণা করলেন, কখনো নয়, জীবন দেব তবুও দেশের সম্মানকে ভারতের কাছে বিকিয়ে দেব না। তিনিও তার কর্তব্য স্থির করে ফেললেন।

দুই শত্রু দেশের দুই দেশ প্রেমিক ‘বৈমানিক’ একই বিমানে দুই বিপরীত প্রতিজ্ঞায় অটল। মতিয়ুর ভাবছেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতে অবতরণ করতেই হবে। মিনহাজও ভাবছেন মাতৃভূমির স্বার্থে উস্তাদের ইচ্ছায় সমর্পন করা যাবে না। গাদ্দার বনা যাবেনা। সীমান্ত অতিক্রমের পূর্বেই বিমানটিকে পাকিস্তানে অবতরণ করিয়ে দেশের মান বাঁচাতে হবে।

ককপিটের ভিতর শুরু হয়ে গেল অঘোষিত যুদ্ধ। নিজ নিজ কণ্ট্রোল ষ্টিক নিয়ে উভয় দেশ প্রেমিক সিংহ বিমানটিকে আপন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য লড়াই করছেন। বিদ্রোহ করল তাঁদের বিমান। এলোমেলো চক্কর খেয়ে কাঁপতে কাঁপতে বিমানটি আশ্রয় নিল সীমান্তের পাকিস্তানী মরুর তপ্ত বালুকায়।

অগ্নি বিমানটিকে গ্রাস করে ফেলল। জীবন দিয়ে সৃষ্টি করলেন দুই তাজা তরুন দুইটি ভিন্ন ইতিহাস। দুই দেশের মানুষ তাদের নিজ নিজ দেশের দুইটি আত্মাকে তাদের হৃদয়ে স্থান দিল। ওরা আজ বীর শ্রেষ্ঠ মতিয়ুর আর নিশানে হায়দার মিনহাজ। জীবনে ছিলেন তাঁরা অচেনা সাধারণ বৈমানিক। দেশের জন্যে জান কুরবান করে হয়ে গেলেন তাঁরা জননন্দিত মহান সাহসী দেশ প্রেমিক।

(বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিয়ুর রহমানের কাহিনী বন্দি শিবিরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী লেখা। প্রশিক্ষণ ফ্লাইটৈ যা হতে পারে তা আমি বলার চেষ্টা করেছি। উল্লেখ্য তাদের বিমান থাট্টা নামক স্থানে বিধ্বস্ত হয়। সে বিমান উড্ডয়ন করেছিল পি এ এফ বেইস মাসরুর (মৌরিপুর) থেকে। বাংলাদেশে তাঁর বহু বীরত্বগাথা লিখা হয়েছে। লেখা হয়েছে তিনি জোর জবরদস্তি করে সে বিমানে ওঠেছিলেন, ছাত্রকে ক্লোরোফরম করেছিলেন। এসব তথ্য আমার জানা ছিল না। ছাত্র শিক্ষক দুইজন একসাথেই মৃত্যুতে অমর হয়ে রইলেন, বিধায় সে তথ্য তাদের কারো নিকট থেকে পাওয়াও সম্ভব ছিল না। লেখক হয়তোবা অজানা তবে বিশ্বাসযোগ্য কোন সূত্র থেকে সে তথ্য পেয়ে থাকবেন।)

নিম্ন লিংকেও ক্লিক করুন:

মুক্তিযুদ্ধ ও একজন বীর বৈমানিকের কাহিনী

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যুদ্ধবিমান


(An Incident on the Western Front, view of a dogfight involving five aircrafts. In the upper foreground a biplane of the RAF flies towards a stricken German biplane, which is falling towards the ground leaving a trail of smoke in its wake (Imperial War Museum)/ চিত্রঃ পশ্চিম রণাঙ্গনের আকাশে যুদ্ধবিমান।

‘সবার উপর মানুষ সত্য, তার উপরে নাই’। এটি একটি দার্শনিক তত্ত্ব। কোন একজন কবি বলেছেন ‘জগত জুরিয়া দেখলাম আমি একই মায়ের পুত’। পৃথিবীর সকল দেশের কবি, সাহিত্যিক ও দার্শনিকগণ মানুষের জয়গান গেয়েছে। শান্তির বাণী প্রচার করেছেন কিন্তু এ বিশ্বেরই যুদ্ধবাজ জঙ্গিনেতারা দেশের নামে, ধর্মের নামে, ভাষার নামে, স্বার্থের নামে যুগ যুগ ধরেই যুদ্ধের বাণী, হিংসার বাণী প্রচার করে আসছেন। যুদ্ধের লেলিহান শিখার মাঝে লেলিয়ে দিচ্ছেন লাখ লাখ আদম সন্তান। স্রষ্টার আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ অপর আশরাফুল মাখলুকাতের বুকের রক্ত দেখে পিচাশের মত প্রচন্ড অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে।
কিন্তু স্রষ্টাত এমনটি চান নি।

তাঁর ইচ্ছা তাঁরই সৃষ্টি সবচেয়ে বুদ্ধিমান মাখলুক মানুষ সুখে থাকুক। যুদ্ধ হানাহানি থেকে দূরে থাকুক। তাইত তিনি যুগে যুগে দেশে দেশে তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন। এসেছেন নূহ (আ:), ইব্রাহিম (আ:), মূসা (আ:), ঈসা (আ:) ও ইসলামের সর্বশেষ রসূল হজরত মুহাম্মদ (দ:) । একই স্রষ্টা বিভিন্ন সময়ে তাদের পাঠিয়েছেন একই বিধান দিয়ে। একই ঘোষণা দেওয়ার জন্যে এ মহাবিশ্ব স্রষ্টার, এখানে শুধু তারই আইন চলবে। সুতরাং হে মানুষ একই মাটির পৃথিবীতে সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাক।

স্রষ্টার ইচ্ছা সফল হয়নি। যুগের বিবর্তনে একই বিধান বিভিন্ন ধর্মের রূপ নিয়েছে – সৃষ্টি হয়েছে ইহুদী, খৃষ্টান ও ইসলাম ধর্ম। আশ্চর্যের বিষয় এই তিন ধর্মেরই সৃষ্টি হয়েছে মধ্য প্রাচ্যে। এই ধর্মগুলোর প্রবর্তকগণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তির বাণী প্রচারক। কিন্তু হায় তাদের জন্মভূমি আজও জ্বলছে। আজ পুরো মধ্যপ্রাচ্য একটি বারুদাগার যেন। আরো আশ্চর্যের বিষয় তিনটি মহান ধর্মের কথিত সেবকগণই এখানে যুদ্ধে লিপ্ত। অতীতে গ্রীক, রোমানও পারসীকগণ এ রণাঙ্গনে লড়াই করেছে। খৃস্টান ও মুসলমানেরা একে অপরকে ক্রুশেডের নামে হত্যা করেছে। সময়ের বিবর্তনে এসেছে নতুন সমস্যা।

কতিপয় বৃহৎ রাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দুর্বল রাষ্ট্র প্যালেষ্টাইনের উপর উড়ে এসে জুরে বসল ইসরাইল নামে একটি ইহুদী রাষ্ট্র। সেখানে বসবাস করতেন ৪০ লক্ষ দরিদ্র মুসলমান। জীবনের ভয়ে তাদের ৩০ লক্ষ লেবানন ও অন্যান্য আরব রাষ্ট্রে উদ্বাস্ত হিসাবে আশ্রয় নেন। বাদ বাকি ১০ লক্ষ থেকে যান অধিকৃত এলাকায়। তারা গড়ে তোলেন প্যালেস্টাইন মুক্তি আন্দোলন।

অপর দিকে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশ থেকে ইহুদীরা ইসরাইলের পথ ধরেন। ইসরাইল গড়ে তোলে শক্তিশালী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী। শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সময়ের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে থাকে। প্যালেস্টাইনীদের সশস্ত্র গেরিলা সংগ্রাম স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য আমেরিকা তাদের দিতে থাকে নতুন নতুন বিমান।

নিম্ন লিংকে ক্লিক করে প্রাসঙ্গিক ভিডিওটি দেখে নিতে পারবেন:

Watch “যে কৌশলে ইসরায়েল একাই মিসর সিরিয়া আর জর্ডানকে মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে হারিয়ে দিয়েছিল । Israel vs arab” on YouTube

১৯৪৮ সালের মে মাসেই ইসরাইল ও আরবদের মাঝে প্রথম যুদ্ধ বাঁধে। ১৯৫৬ সালে মিসর সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করে। এ উপলক্ষ্যে ওই ইসরাইল মিসরের সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইসরাইলের পক্ষে যুদ্ধ করে। ১৯৬৭ সালের ৫ই জুন ইসরাইল কোন উস্কানি ছাড়াই আরব দেশগুলোকে হামলা করে। এ যুদ্ধ ৬ দিন স্থায়ী হয়। পুনরায় ১৯৭৩ সালের ৬ই অক্টোবর আরব ইসরাইল যুদ্ধ বাঁধে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য ও সমর্থনে ১৯ দিনের এই যুদ্ধে মিসরের গাজা ও সিরিয়ার গোলান মালভূমিসহ অনেক এলাকা ইসরাইল দখল করে নেয়।

ওই সমস্ত যুদ্ধে ইসরাইল ব্যবহার করে বৃটিশ, ফ্রান্স ও আমেরিকান বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ বিমান। কখনো ওরা স্যবর জেট দিয়েও আক্রমণ চালিয়েছে। কখনো ওদের ফ্যানটম দৈত্য-দানুর মতই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। কখনো ফ্রান্সের মিরেজের অনুকরণে নির্মিত তাদের নিজস্ব ‘কাফির’ নামক বিমান দিয়ে লেবাননের উদ্বাস্তু শিবিরের অসহায় মানুষগুলোর উপর বীর বিক্রমে বোমা ও গোলাবর্ষণ করে কাপুরুষের মত নিজ দেশের ঘাঁটিতে ফিরে গেছে।

ইসরাইলী যুদ্ধবাজ নেতাদের যুদ্ধ তৃষ্ণা মিটানোর খায়েশে ওরা আবার উড়ে গেছে কোন উদ্বাস্তু শিবিরের উপর। হত্যাকারী জল্লাদের মত নির্দ্বিধায় ওরা খালাস করেছে তাদের ডানার নিচে ঝুলানো বোমা, রকেট, মিসাইল। আজো তারা ধ্বংসের এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মুক্তি সংগ্রামী হামাস, হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য দল রকেট বা ড্রোন হামলা করে এর জবাব দিতে পারছে এখন।

ফ্রান্সের মিরেজ বিমানের অনুকরণে ইসরাইলের নিজস্ব কারখানায় নির্মিত একটি ‘কাফির’ বিমান।

আরব ইসরাইল যুদ্ধে আরব দেশগুলো বরাবরই রুশ যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করেছে। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধে আরবরা কখনো মীগ-১৫, কখনো মীগ-১৭, কখনো মীগ-১৯, কখনো বা মীগ-২১, নিয়ে শত্রু বিমানের সাথে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছে। ওই সকল যুদ্ধের সময় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বহু বাঙালী বৈমানিক আরবদের পক্ষে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে বাঙ্গালী জাতির সুনাম বৃদ্ধি করেছে। জানা যায় স্কোয়াড্রন লীডার সাইফুল আজম ১৯৭৩ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধে চারটি ইসরাইলী যুদ্ধ বিমান ধ্বংস করেন।

ফিলিস্তিন-ইসরাইল লড়াই প্রসঙ্গ:

ফিলিস্তিনের রকেটের ড..রে পা’লা’লো ১২০০০ ইসরাইলি – বানাচ্ছে লোহার ঘর


(চলছে ফিলিস্তিন আর ইসরাইলের মাঝে অনন্ত যুদ্ধ। কবে এর শেষ কেউই জানেনা। উপরের ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে ইউ টিউব থেকে। দেখে নিতে পারেন।)

মধ্য প্রাচ্যের জমিনে শান্তি মনে হয়, বহুৎ দূর আস্ত ।সি আই এ ইরাকের রাস্তায় ইরানিদের গাড়ি বহরে ড্রোন থেকে মিসাইল ছুড়ে মারে। জেনারেল সুলাইমানিকে এ ড্রোন হামলায় হত্যা করা হয়। ইরানও ইরাকে মার্কিন স্থাপনা নিশানা বানায়। ওরা সেদিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মিসাইল ছুড়তে বাধ্য হয়। হালে এ দেশটিও ক্রমে ক্রমে যেন লাপরোয়া হয়ে উঠছে। ওরা বিমান ও বানাচ্ছে! দেখে নিন: https://deshibideshisahitto.wordpress.com/2023/05/13/watch-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%87%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a7%82%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b0/

ইসরাইলের যুদ্ধবাজ নেতাদের নিকট যেন শত্রু যাদের মনে হবে তাদের জীবন্ত রাখতে নাই। ওরা সেনা আর মোশাদকে শত্রু নিধনের মহোৎসবে শামিল রেখেছে। ওরা এখন একাজে নিজ দেশে মুসলিম, ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন এমনকি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির নেতাদের টার্গেট করে। ইসরাইলের কথিত শত্রু নিধনের জবাব দেবার চেষ্টা করছে এখন ইরান বা হামাস অথবা হিজবুল্লাহ যোদ্ধা। দেখুন : https://youtu.be/dhQGGVmC2hY

***************

ইরাক – ইরানের যুদ্ধে বিমান

মধ্য প্রাচ্যের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ইরাক-ইরান যুদ্ধ। এটি উপসাগরীয় যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৯৮০ সনের ২২ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই ইরানের রাজতন্ত্রের আমলে সৃষ্ট কিছু সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইরাক আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ইরানে আক্রমণ করে বসে। এ যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৮৮ সালের ২০শে আগস্টের একটি সুন্দর মুহুর্তে।

এটি ছিল মুসলিম বিশ্বের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। দীর্ঘ আট বছর ধরে যুদ্ধ করেও বলতে গেলে কোন সমস্যার সমাধান হয়নি। শাতিল আরব জনপথের সমস্যা এখনো সমস্যাই রয়ে গেছে কিন্তু যুদ্ধের ফলে জীবন হারিয়েছে লাখ লাখ আদম সন্তান। হাজার হাজার বছরের পুরনো পারস্য আর সুমের, দামেষ্ক – বাগদাদের সভ্যতার বিভিন্ন স্মৃতি বিজড়িত স্থান বিনষ্ট হলো গোলা, রকেট, মর্টার, ক্ষেপনাস্ত্র ও বিমান হামলায়। এতে ধূলার সাথে মিশে গেছে উভয় দেশের অনেক জনপদ, কলকারখানা, রাস্তাঘাট ও সেতু। নির্দয় ক্ষেপপনাস্ত্র উভয় দেশেই আঘাত হেনে তার নিজস্ব ভাষায় কথা বলেছে।

অসহায়ের আহাজারিতে আর্তনাদ করে উঠেছে বিষন্ন প্রকৃতি। উভয় দেশের লড়াকু জঙ্গি-বিমানই উড়ে গেছে শত্রুদেশের স্কুল, মাদ্রাসা ও ধর্মস্থানের উপর। আগুনে বোমার আঘাতে আঘাতে ওইগুলি অগ্নিময় হয়ে গেছে। হাজার হাজার মাছুম শিশু, নারী ও বৃদ্ধ অগ্নিশিখার নিকট অবলিলায় আত্ম সমর্পণে বাধ্য হয়েছে।

যুদ্ধের সুযোগ নিয়েছে ইসরাইল। দূরপাল্লার বিমান নিয়ে উড়ে এসে বোমার আঘাতে ধ্বংস করে গেছে ইরান – ইরাকের পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনা ও সম্পদসহ বিবিধ সামরিক কেন্দ্র। উপসাগরে ডুবেছে বিভিন্ন দেশের পণ্যবাহী জাহাজ। এ যুদ্ধের সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রও নিয়েছে। উপসাগরে শান্তির নামে প্রেরণ করেছে এর বিমানবাহী শক্তিশালী জাহাজসহ দুর্ভেদ্য নৌবহর। হামলা করেছে দুর্বল ইরানী নৌবহরের উপর। ডুবিয়ে দিয়েছে ইরানী রণতরী। ধ্বংস করেছে ইরানী তৈল মঞ্চ। সর্বশেষে ইরানী যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে ধ্বংস করে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে এর সকল যাত্রী।

সেদিন বিশ্বমানবতা ঘৃণায় চিৎকার করে উঠেছিল। কিন্তু সে ঘৃণা যেন ‘বিদ্রোহী’ হয়ে পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে কি? ওতে পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিইবা আসে যায়? তাদের ধারণা হয়তোবা পরাশক্তি হিসেবে তকমা টিকিয়ে রাখতে ওইসব সুযোগ নেয়া দরকার। বিশ্ব রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার তাদের রয়েছে!

উপসাগরে ঘটনা দ্রুত বয়ে যেতে ছিল। ইরানও সেবার যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়েছিল। আঘাত হেনেছিল তার যোদ্ধা হেলিকপ্টার গানশীপের উপর। ফলে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব আশংকা করেছে পরাশক্তিও ইরানের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধের। শেষ পর্যন্ত আর যুদ্ধ হয়নি। হলে কি হত? বাঘে মহিষে যুদ্ধ জমতে পারে, কিন্তু সে যুদ্ধ খুবই অসম।

শেষ পর্যন্ত উপসাগরীয় যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে যাওয়ার পূর্বেই যুদ্ধমান উভয় দেশের হুশ হয়েছে। কিন্তু এর পূর্বেই মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্ব দ্বিধা বিভক্ত হয়ে গেছে। মিশর ও জর্দান শুরু থেকেই ইরাককে সকল প্রকার সহযোগীতা দিয়ে আসছিল। সিরিয়া ও লিবিয়া তাদের আদর্শের বন্ধু ইরানকে দিয়ে আসছিল সম্ভাব্য সকল প্রকার সাহায্য। সৌদি আরব ও একদিন ইরাকের মিত্র হয়ে যায়। ইরানকে কাবু করার জন্য ইরাকের নিকট পৌঁছাতে থাকে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সাহায্য। নিজেও সম্ভাব্য ইরানী হামলা মোকাবেলায় গড়ে তোলে আমেরিকার সহায়তায় বিশেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সম্ভবত: সৌদি সরকারের নিজের অজান্তেই তার ইরান ভীতি প্রবল হয়ে উঠে। সন্দেহ দানা বেধে উঠতে থাকে। ইরানীদের সকল কার্যক্রমে তারা সৌদি বিরোধিতা দেখতে পায়।

ফলে পবিত্র হজ্জের নিষিদ্ধ মাসেও শত শত হজ্জযাত্রীকে মৃত্যু বরণ করতে হয়। হজ্বের ইতিহাসে এ এক দুঃখজনক ঘটনা। ১৯৮৭ সালের হজ্জ রক্ত দিয়ে লিখা।

ইরাক যুদ্ধ শুরু করেছিল একই সাথে স্থল, জল ও আকাশে। এর স্থল বাহিনী অপ্রস্তুত ইরানী বাহিনীর লাশের উপর দিয়ে ট্যাঙ্ক চালিয়েছে। মুহুর্তে পাঠিয়ে দিয়েছে বহু তাজা প্রাণ পরপারে। এর যুদ্ধ বিমানগুলো ইরানী ঘাঁটি ও সীমান্তের ইরানী চৌকিতে হঠাৎ করে বোমাবর্ষণ করে গুড়িয়ে দিয়েছে। সাদ্দামের আঘাতে আয়াতুল্লাহ খোমেনী হতভম্ব হয়ে যান। জ্বলে উঠে তার প্রতিশোধ স্পৃহা। ঘোষণা করেন এর বদলা অবশ্যই নিতে হবে। গর্জে উঠেন সাদ্দাম হোসেন। ইরানকে যুদ্ধ পরিকল্পনারই সুযোগ দেওয়া হবে না।

ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যায় ইরানের শাহের গড়া বিমান বাহিনীর মারাত্মক ফ্যানটম। আঘাত হানতে থাকে ইরাকের অভ্যন্তরে। তাদের দক্ষ পাইলটগণ খুবই দক্ষতায় গুলি করে মাটিতে ফেলতে থাকে ইরাকী মীগ। পৃথিবী চমকিত হয়ে তাকিয়ে থাকে ওই সকল বীর বৈমানিকদের দিকে। আশ্চর্য তাদের আক্রমণ কৌশল। তারা যেন ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল রেখে একে একে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানতে থাকে।

আকাশ যুদ্ধে সাদ্দামের বিমান বাহিনীর জঙ্গি বিমান ও হেলিকপ্টার গানশীপ রণাঙ্গনে যথেষ্ট সহায়তা দান করে। উপসাগরে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তু যেমন তৈল টার্মিনাল, ইরানী ও অন্যান্য দেশের জাহাজের উপর সফল আঘাত হানে সেসব। ভুলবশত: উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের একটির উপর ক্ষেপনাস্ত্র হামলা করে তা অকেজো করে দেয় ইরাকিরা। ইরাকের দূরপাল্লার বোমারু বিমান তেহরান ও পবিত্র কোম শহরের উপর বোমা বর্ষণ করে। ইরানী বিমান বাগদাদের উপর বোমাবর্ষন করে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে। সে যুদ্ধে ফ্রান্সের তৈরি ইরাকের মিরাজ বিমান বহরও পিছিয়ে ছিল না।
https://encrypted-tbn3.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcSbwM30iZeRxEr9a2Pvcbb5m9qPUQPQgwP_QAKLo7zTWLSX2KeNH0T10WU
চিত্রঃ এক ঝাঁক মীগ-২১ বিমান। যুদ্ধের সময় বিভিন্ন ধরনের মীগ বিমানই ছিল ইরাকী বিমান বাহিনীর মূল শক্তি।
ইরাক ও ইরানের মাঝে যুদ্ধে উভয় দেশের বহু বৈমানিক খুবই দক্ষতার সহিত অপূর্ব কৌশলে যুদ্ধ করেছেন। নিজ নিজ দেশের সরকার উভয় দেশের বীর বৈমানিকদের দিয়েছে বিভিন্ন খেতাব।

Watch “ইরাক ইরান যুদ্ধের বিস্তারিত। কেন হয়েছিল এই যুদ্ধ?” on YouTube

আল্লাহর নিকট হাজার শোকারিয়া অনেক জীবন ও অনেক ধ্বংসের পর উভয় জঙ্গী নেতা বাস্তবকে উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছেন। উভয়ই যুদ্ধ বন্ধ কতে সম্মত হয়েছেন। যুদ্ধত থামল, কিন্তু কি লাভ হয়েছে? লাখো প্রাণের বিনিময়ে ওরা কি পেল? আসলে এ যুদ্ধে কেউই জয়লাভ করেনি। ইরাক ও ইরান উভয়েই পরাজিত হয়েছে। পরাজিত হয়েছে বিশ্ব মানবতা। আহত হয়ে মুষড়ে পরেছে উভয় দেশের হাজার বছরের লালিত সভ্যতা। আজো উভয় দেশের আহত অর্থনীতি আর্তনাদ করছে। যুদ্ধের ফসল আহত আদম সন্তান উভয় দেশের সর্বত্র যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে। সন্দেহ নাই যুদ্ধের ফলে উভয় দেশই কিছু কিছু অস্ত্র নির্মাণ করতে সমর্থ হয়েছে। নিজস্ব ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তি অর্জন করেছে। ওই সমস্ত কি ওদের যুদ্ধের ক্ষতির সান্তনা দিতে পারবে? বিশ্বের সকল যুদ্ধবাজ নেতার সুভবুুিদ্ধর উদয় হোক। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে। তাঁর গোয়েন্দারা তাঁকে ইরানের সঠিক শক্তির তথ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

ইরাকের যুদ্ধবাজ নেতারা হয়ত ভেবেছিলেন ইরানের আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার কারণে আয়াতুল্লাহ খোমেনীর সরকারের কোমড় ভেঙ্গে গেছে। সুতরাং পয়লা আঘাতেই ইরান পরাজয় বরণ করবে। আট বছরের যুদ্ধ ইরাকের এ ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। ইরানীদের দৃঢ় মনোবল ও বিশ্বাসের ফলে তারা ইরাকের পয়লা আঘাতে মুষড়ে পড়েনি বরং মাথা ঠান্ডা রেখে একের পর এক যুদ্ধ পরিকল্পনা করেছে। ইরানের ভিতর থেকে ইরাকীদের হটিয়ে দিয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে ইরাকের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছে ওরা। অবশেষে যুদ্ধ না করে ফাউ রণাঙ্গন ত্যাগ করে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। এ যুদ্ধ ধৈর্য্য, সাহস, আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছা শক্তির এক চমকপ্রদ ইতিহাস। একথা বললে ভুল হবে না যে শুধুমাত্র ইরানী জনগণের দৃঢ় মনোবলের কারণে ওরা একাই ইরাক এবং সকল পরাশক্তির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে সমর্থ হয়েছে। ওদের জেহাদী জোশ সারা বিশ্বকে আত্মত্যাগের তালিম দিয়েছে।

তা সত্বেও যুদ্ধ কখনো মঙ্গল বয়ে আনে না এ সত্যটি মানব জাতির নিকট প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে সাদ্দাম হোসেন ও আয়াতুল্লাহ খোমেনী আরও পূর্বে যুদ্ধ না থামিয়ে মহা ভুল করেছিলেন, কেননা হিংসা কখনো শান্তির জন্ম দিতে পারে না।

ইরাক ইরানের যুদ্ধের সমাপ্তি হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক থেকে ইরানের ওপর হামলা ও ইরানের পাল্টা হামলা এখনও চলমান। নিম্ন ভিডিও এমন একটি বিমান যুদ্ধের:

https://deshibideshisahitto.wordpress.com/2023/05/10/watch-%e0%a6%87%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%98%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%9f/

যাক, হিংসা থেকে হিংসারই উদ্ভব হয়ে থাকে। মানুষের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত শান্তি কখনো স্থায়ী হতে পারে না। সময়ের ব্যবধানে পুনঃ পুনঃ জলে ওঠে প্রতিশোধের আগুন । আবার মিটিং মিছিল, লড়াকু সন্ত্রাস তথা অশান্তি।

********************

চিত্রঃ এসআর-৭১ ব্লাকবার্ড গোয়েন্দা বিমান।

শিস্ দিয়ে উড়ে যায় গোয়েন্দা বিমান

গোয়েন্দা তৎপরতা যুদ্ধে সফলতার জন্য, যথেষ্ট যুদ্ধাস্ত্র, কঠোর ঘাম ঝড়ানো প্রশিক্ষণ, কৌশল এবং উচ্চ মনোবলের মতই গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধ জয় শুধু অস্ত্র দ্বারা কখনো সম্ভব নয় যদিনা ওই সমস্ত অস্ত্র চালানোর জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, দক্ষ ও সাহসী জনবল না থাকে। খুবই শক্তিশালী ও জানবাজ সেনাদলও বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে না যদিনা যুদ্ধ পরিকল্পনা সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়।

যুদ্ধ আর পাখি শিকার এক কথা নয়। রাতের আঁধারে কোন পত্র পল্লবে ছাওয়া গাছে গুলি করলে হয়ত কোন পাখি মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পারে। কিন্তু সঠিক সংবাদ ব্যতীত শত্রু দেশে গোলাবর্ষণ অথবা বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করলে কোন লাভত হবেই না বরং হীতে বিপরীত ফল হতে পারে। এ সত্যকে মনে রেখে বিশ্বের সকল দেশই গোয়েন্দা বাহিনী গড়ে তোলার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।

সশস্ত্র বাহিনীতে এ দলের কাজ শত্রুর সঠিক অবস্থান, এর জনবল, অস্ত্রের সংখ্যা ও ধরন, শত্রুদলের অবস্থানের দুর্বলতম স্থান ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহ করা।

শত্রু দেশের খুবই ভেতরে ব্যক্তির পক্ষে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো কঠিন। শ্লথগতি মানুষের পক্ষে শত্রু দেশের অভ্যন্তরে সামরিক খবরাখবর সহজে সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে অর্ডারমাফিক বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এর যুদ্ধবিমান ডিজাইনারগণ গোয়েন্দা বিমান নির্মাণের প্রতি মনোনিবেশ করেন। প্রথম দিকে তারা সমকালীন বিমানে বড় বড় ক্যামেরা লাগিয়ে গোয়েন্দাকাজের জন্য ওই সমস্ত বিমান প্রস্তুত করতেন। ক্রমে ক্রমে উন্নত বিমান আবিষ্কৃত হয়েছে। যুদ্ধবিমান সাবসনিক থেকে সুপারসনিক গতি পেয়েছে। তখন ডিজাইনারগণ ফাইটার বিমানে ক্যামেরা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি যেমন শক্তিশালী রাডার, বেতার যন্ত্র ইত্যাদি সংযোজন করে গোয়েন্দা কাজের উপযোগি করে ফেলেছেন। আসলে যে কোন ধরনের বিমান বিশেষ করে ফাইটার বিমানে বিশেষ গোয়েন্দা সরঞ্জাম সংযোজন করে বিমানটিকে গোয়েন্দা বিমানে পরিবর্তন করা সম্ভব। সেনা কার্গো বিমান-কপ্টারও একাজে ব্যবহৃত হতে পারে। আধুনিক ড্রোন এ কর্মে লাজবাব। এখন তুরষ্ক নির্মিত বিমান এ শিল্পের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।এ প্রসঙ্গে নিম্ন লিংকে ক্লিক করে ভিডিওটি দেখে নিন:

httpss://aviationbangladesh.wordpress.com/2023/05/08/watch-%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%a3%e0%a7%8d%e0%a6%a1%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%a8%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%a8-%e0%a6%85/
ফাইটার বিমানের সীমিত ক্ষমতা, শত্রুদেশের খুবই অভ্যন্তরে প্রবেশকরে সামরিক সংবাদ সংগ্রহে অপারগতা, এর নির্দিষ্ট গতি এবং সর্বোপরি একজন দক্ষ বৈমানিক হারানোর ক্ষতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বিবেচনা করে আমেরিকা ও রাশিয়া শুধু গোয়েন্দা কার্যে ব্যবহারযোগ্য খুবই দ্রুতগতি সম্পন্ন, সাধারণ জঙ্গীবিমান থেকে অনেক বেশি উচ্চতায় উড্ডয়নক্ষম বৈমানিক বিহীন বিমান উদ্ভাবনের পরীক্ষা নীরিক্ষা করে বহু ধরনের গোয়েন্দা বিমান নির্মান করে ফেলেছে। সেগুলোর কোন কোনটি বৈমানিক ব্যতিত দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে পরিচালনা করা যেত। কোন কোনটি শত্রু বিমান আক্রমণের আগাম সংবাদ প্রদানের জন্য বিশেষ ধরনের রাডার ও অন্যান্য সরঞ্জামে সজ্জিত ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈমানিকবিহীন এস আর-৭১ ব্লাকবার্ড গোয়েন্দা বিমান খুবই দক্ষতার সাথে গোয়েন্দাবৃত্তি সমাপন করত। এ ধরনের বিমান অন্তত: এক হাজার বার রাশিয়া, চীন, মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য দেশের উর্দ্ধ আকাশে শিস্ দিয়ে অতি উচ্চগতিতে উড়ে গেছে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট অবস্থানের উপর চক্কর দিয়ে দিয়ে ছবি উঠিয়েছে। কখনো আক্রমণ ফাঁকি দেওয়ার জন্য হঠাৎ করে অনেক উচ্চতায় উঠে গিয়ে এ বিমানের সর্বোচ্চ বেগে আপন ঘাঁটিতে ফিরে যেতে সমর্থ হয়েছে।

এ ধরনের বিমান ঘণ্টায় প্রায় তিন হাজার মাইল বেগে এক লক্ষ ফুটেরও উপর দিয়ে উড়ে যেতে সক্ষম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন গোয়েন্দা বিমানও বৈমানিক বিহীনভাবে উড্ডয়নে সমর্থ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাওয়াক বিমান নিজ দেশের অভ্যন্তরে শত্রু দেশের বিমান আক্রমণের সংবাদ আগাম দিতে সমর্থ। অবশ্য এ সময় বিমানটিকে আকাশে উড্ডয়নরত থাকতে হবে এবং এর রাডার চালু থাকতে হবে। এ দেশের এফ-১১ বিমানটি বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত গোয়েন্দা বিমান। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাওয়াক বিমান ন্যাটো জোটসহ অনেক দেশ সাফল্যের সাথে ব্যবহার করছে।
অপরদিকে রাশিয়ারও রয়েছে টি.ইউ-১২৬ এবং অন্যান্য কয়েক ধরনের শক্তিশালী গোয়েন্দা বিমান। এদেশের বিমানগুলো ওয়ার্শ জোট এবং নিজ দেশের পক্ষে কাজ করেছে। বৃটেন, জার্মানী ও ইতালীর যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত টরনেডো বিমান যুদ্ধ এবং গোয়েন্দা কাজে দক্ষ।
বর্তমান যুগ মহাশূন্য যাত্রার যুগ। পরাশক্তিগুলো অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছে যে বৈমানিক বিহীন গোয়েন্দা বিমানের কাল ফুরিয়ে এসেছে। তাই সেগুলো ক্রমে তাদের বিভিন্ন যাদুঘরের শোভাবর্ধন করছে।

কারণ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির দান গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো খুবই নিখুতভাবে সামরিক তথ্য সংগ্রহে সমর্থ। এগুলোর কাজে কোন দেশই সহজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। পক্ষান্তরে অপরদেশে তথ্য সংগ্রহরত যেকোন গোয়েন্দা বিমানের এন্টি এয়ারক্রাফটগানের গুলি খাওয়ার ঝুঁকি নিতে হয়। শত্রু বিমানের ধাওয়া খেয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে হয়। রিমোট কন্ট্রোলের ত্রুটির দরুন বিধ্বস্ত হওয়ার দৃষ্টান্তও বিরল নয়। গোয়েন্দা তৎপরতার জন্য পরিবর্তিত সাধারণ ফাইটার জঙ্গী বিমানগুলোর অবস্থান আরও নাজুক।

সোভিয়েট রাশিয়া, আমেরিকা, চীন, ফ্রান্স, বৃটেন ইত্যাদি দেশ মহাশূন্যে তাদের বহু উপগ্রহ প্রেরণ করেছে। এদের বহু গোয়েন্দা উপগ্রহ আজ পৃথিবী থেকে বহু দূর দিয়ে তাদের কক্ষপথ অতিক্রম করছে। ক্রমাগত গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো খুবই বিশ্বস্ত সেবকের মত নিখুঁত ভাবে তাদের কাজ সমাপন করে যাচ্ছে। টি ভি ক্যামেরার সাহায্যে অনবরত বিশ্বের সকল দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থানগুলোর ছবি স্ব স্ব দেশের কন্ট্রোল রুম গুলিতে পাঠিয়ে যাচ্ছে।

অস্ত্র বিক্রয়ের মত পরাশক্তিগুলো গোয়েন্দা উপগ্রহ প্রেরিত তথ্য যুদ্ধরত দেশগুলোর নিকট বিক্রয় করে লুটছে লাখ লাখ ডলার। ইরাক ইরান যুদ্ধের সময়ও নাকি উভয়দেশ গোয়েন্দা উপগ্রহপ্রেরিত তথ্যের জন্য বৃহৎ শক্তির নিকট ধর্না দিয়েছে। কোন কোন সময় কোন বিশেষ দেশের প্রতি বিশেষ শত্রুতার কারণে ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে ওরা। ফলে দেশটি যুদ্ধের ময়দানে খেয়েছে দারুন মার। বিশ্ব শিখেছে যুদ্ধ তথ্যের জন্য অপরের উপর নির্ভর করলে অবশ্যই পরাজয় বরণ করতে হবে।

যুদ্ধে ব্যবহৃত পরিবহন বিমান


(An AC-130U releasing flares)

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা উপগ্রহগুলোর নাম খুবই অদ্ভূত। যেমন বিগবার্ড, ল্যান্ডবার্ড, ল্যান্ড স্যাট, সি ম্যাট, স্কাই আই, ফায়ার বি ইত্যাদি। এগুলো সোভিয়েট রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য দেশের সামরিক ঘাঁটির ছবি তুলে থাকে। গোয়েন্দা উপগ্রহের প্রেরিত বিভিন্ন ছবি থেকে সামরিক বিশেষজ্ঞগণ শত্রুদেশের দুর্বলতম স্থান, সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চৌকির অবস্থান, স্থল, জল ও নৌ আক্রমণের সম্ভাব্য পথ ইত্যাদি নির্ণয় করে থাকেন। এদের প্রেরিত তথ্য বিশ্লেষণ করে এত নিখুত তথ্য পাওয়া যায় যে অস্ত্রের সংখ্যা, অস্ত্রের অবস্থান, অস্ত্র স্থাপনার দিক অস্ত্রের ধরণ ইত্যাদি সকল কিছু বিশেষজ্ঞগণ সহজে নির্ণয় করতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ফ্রান্স, সোভিয়েট ও মার্কিন পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন দেশের অস্ত্র – শস্ত্রের যে সমস্ত ছবি ও তথ্য সরবরাহ করা হয় সেগুলোর প্রায় সকলগুলোই উপগ্রহের প্রেরিত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্ণয় করে পত্রিকায় পাঠানো হয়।

আমেরিকার মত সাবেক সোভিয়েট রাশিয়ারও বেশ কিছু উপগ্রহ আকাশে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্যে সফর করে বেড়াচ্ছে। প্রেরণ করছে ন্যাটো জোট, চীন বা অন্যান্য সকল সম্ভাব্য শত্রু দেশের সামরিক স্থাপনার ছবি ও অন্যান্য তথ্য। বর্তমানে রাশিয়ার কসমস ও সুয়ুজ সিরিজের বহু গোয়েন্দা উপগ্রহ মহাকাশে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। এ দুদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি বৃহৎ শক্তি তাদের নগণ্য সংখ্যক গোয়েন্দা উপগ্রহ আকাশে প্রেরণ করেছে। বৃহৎ শক্তিগুলোর সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ আজ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য গোয়েন্দা উপগ্রহের উপর নির্ভর করছে। ওরা প্রাপ্ত তথ্য সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ করে সর্বাধুনিক তথ্য সদাই তাদের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর নিকট পাঠিয়ে চলছে।
আকাশের গোয়েন্দা উপগ্রহ ভবিষ্যতে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আজ দিকে দিকে ষ্টার ওয়ার বা এস.ডি. আই এর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সম্ভবত: কোন একদিন এ পৃথিবীর মতই নিকট মহাকাশে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। গোয়েন্দা এবং সামরিক উপগ্রহ ধ্বংসের জন্য পরাশক্তিগুলো একে অপরের দিকে নিক্ষেপ করবে লেসার অস্ত্র। বিষাক্ত হবে পবিত্র মহাশূন্য। হয়ত তখন একে একে সকল উপগ্রহ আকাশ থেকে বিদায় নিবে অথবা আহত অবস্থায় অকেজো হয়ে ভাসতে থাকবে শূন্যলোকে অনন্তকাল।

কিন্তু তবুও এ পৃথিবীর যুদ্ধ ও গোয়েন্দা তৎপরতা বন্ধ হবে এমন আশা করা যায় না। যতদিন হিংসা ও স্বার্থের হানাহানি থাকবে আকাশে অন্তত: সাধারণ গোয়েন্দা বিমান অথবা হেলিকপ্টার উড়বে। দেশের অভ্যন্তরে অথবা সীমান্তে অথবা শত্রুদেশের ভিতরে শত্রুসেনার অবস্থান খুঁজে বেড়াবে। দেশের স্বার্থে মরণ ঝুঁকি নিয়ে সাহসী বৈমানিকের দল গোয়েন্দা বিমান নিয়ে সহস্র কালনাগিনীর ডাকের মত শিস দিয়ে দ্রুত গতিতে উঁচু আকাশ দিয়ে ওড়ে যাবে।

ক্যারিয়ারে যুদ্ধ বিমান


চিত্রঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী জাহাজ এন্টারপ্রাইজ। এর বুকে বিমানের ঝাঁক।

পুরাকালে জলদস্যুর দল সমুদ্রে জাহাজ নিয়ে ঘুড়ে বেড়াত। তাদের জাহাজে থাকত ডাকাতি করার জন্য নানা রকমের অস্ত্র। তারা ছিল সমুদ্রের বাদশাহ। সাগর মহাসাগরে এদের অস্তিত্ব আজ অবধি আছে। তবে সভ্যতার অগ্রগতিতে কমে গেছে তাদের প্রতাপ। সোমালিয়ার জলদস্যুরা এর প্রমাণ।

আজ পরাশক্তিগুলোর নৌবাহিনী নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করে সাগর মহাসাগরে বড় বড় যুদ্ধজাহাজ, ডুবো জাহাজ, ফ্রিগেট, ডেস্ট্রয়ার, ক্রুজার, গানবোট ইত্যাদি নিয়ে ভেসে বেড়ায়। কোন কোন নৌদলের সাথে থাকে এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার নামে বড় বড় যুদ্ধ জাহাজ। এগুলোর কাঁধে সওয়ার থাকে যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার গান শীপের ঝাঁক। এরা জাহাজে চড়ে সাগর মহাসাগরে ঘুড়ে বেড়ায়। কখনো হাইকমান্ডের নির্দেশে জাহাজের ডেক থেকে দ্রুত আকাশে উড়ে যায় কোনটি। কোন দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বোমা হামলা চালায়!

হার্মাদ দস্যুদের মতই নিক্ষেপ করে অস্ত্র। চালায় ধ্বংসযজ্ঞ এবং অবশেষে নিজস্ব ক্যারিয়ারের সুখের আশ্রয়ে ফিরে যায়। এরাই বর্তমান বিশ্বের সমুদ্র তথা পৃথিবীর বাদশাহ। এদের দুর্দান্ত প্রতাপে বিশ্বের ক্ষুদ্র ও দুর্বল দেশগুলো এদের সমিহ করে চলতে বাধ্য হয়।

মার্কিন এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে উড্ডয়ন করে ১৯৮৬ সালে লিবিয়া আক্রমণ করেছিল এমন বহু যুদ্ধ বিমান।

বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজের ধারণা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছে। জাপান আমেরিকার পার্লহার্বারস্থ নৌঘাঁটি আক্রমণ করেছিল বিমানবাহী জাহাজ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে। বৃটেন বৃটিশ সাম্রাজ্যের সর্বত্র তার যুদ্ধ বিমান পাঠাত জাহাজে করে। জার্মানীও তার জঙ্গিবিমানগুলো রণাঙ্গনের কাছাকাছি তাদের বিমান ঘাঁটিতে পাঠাত জাহাজে করেই। ক্রমে আমেরিকাও তাদের ফাইটার ও বোমারুগুলো জাহাজে করেই দূরের ঘাঁটিগুলিতে তাদের বিমানশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য প্রেরণ করে থাকত।
কালের বিবর্তনে দ্রুতগতিসম্পন্ন বিমান নির্মিত হয়। বৃহৎ শক্তিগুলো যুগের সাথে তাল মিলানোর জন্য বৃহৎ ও প্রশস্ত বিমানবাহী জাহাজ নির্মাণ করে। আধুনিক যুদ্ধে বিমানবাহী জাহাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় গ্রেটবৃটেন শুধুমাত্র তার বিমানবাহী জাহাজ থেকে আর্জেন্টিনার সেনা ও নৌ অবস্থানে বিমান আক্রমণ চালিয়ে দেশটিকে পর্যুদস্ত করতে সমর্থ হয়েছিল এবং জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। এ যুদ্ধে আমেরিকাও বৃটেনকে সমর্থন দিয়েছিল এবং এর নৌ বহর ফকল্যান্ডের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। নৌ বহরটির মূল শক্তি ছিল একটি বিমানবাহী জাহাজ এবং এর উপর সওয়ার বিমানবহর।

যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রাম্যমান বিমানবাহী জাহাজগুলোর মধ্যে এন্টারপ্রাইজ, কিটিহক, নিমিজ, আইজেন হাওয়ার, কোরাল সি, কালভিংসর, মিডওয়ে, কনস্টিলেশন ইত্যাদি বিখ্যাত। এ দেশের আরও অনেকগুলো ছোট বড় জাহাজ আছে যেগুলো বেশ কয়েক স্কোয়াড্রন এ্যারোপ্লেন ও কিছু সংখ্যক হেলিকপ্টার নিয়ে সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমেরিকার সপ্তম নৌবহরের সাথে তার বিমানবাহী জাহাজ এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়েছিল। ১৯৮১ সালে ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার সমুদ্র সীমানার নিকটে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবাহী জাহাজের বিমান লিবিয়ার দুটি টহলরত মীগ ধ্বংস করে। ১৯৮৮ সালে উপসাগরে অবস্থানরত মার্কিন নৌবহরের বিমানবাহী জাহাজের বিমান ও হেলিকপ্টার বহু বার ইরানী লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলা চালায়।
https://encrypted-tbn3.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcRn4da0_mpDw1v7r754R2qAT8982_O_mqjXsNdidibMC4-yoFJB
চিত্রঃ উপকূলের ভাসমান ডেকের উপর একটি হ্যালিপ্যাড।

১৯৮৯ সালে মার্কিন বিমানবাহী জাহাজের দুটি এফ-১৪ যুদ্ধ বিমান লিবিয়ার দুটি মীগ-২৩ বিমানগুলি করে ভূপাতিত করে। ষষ্ঠ নৌবহরের এ বিশাল জাহাজটির নাম ইউ এস এস এফ কেনেডী। ১৯৮৬ সালেও আমেরিকার বিমানবাহী জাহাজ থেকে গাদ্দাফীকে হত্যার জন্য বিমান হামলা চালিয়েছিল।

আমেরিকার বিমানবাহী জাহাজ এফ-১৪, এফ-১৮, এ-৬, এ-৭ ইত্যাদি যুদ্ধ বিমান বহন করে। অপরদিকে বৃটেন তার বিমান বাহী জাহাজে সি-হ্যারিয়ার স্কি জাম্প জেট ইত্যাদি বহন করে থাকে।

রাশিয়ারও আছে শক্তিশালী বিমান বাহী নৌবহর। এরাও সমুদ্র থেকে সমুদ্রে ঘুড়ে বেড়ায়। ইদানিং ভারত বৃটেন থেকে একটি বিমানবাহী জাহাজ পেয়েছে। ১৯৭১ সালেও এর বিক্রাস্ত নামে একটি বিমানবাহী জাহাজ ছিল।

চিন দেশও এ ধরনের বহর গড়ে তোলার চেষ্টায় আছে। এর ভাসমান ডেকে সমুদ্রে টহল হেলিকেপ্টার বহরের সংখ্যা নগণ্য নয়। অবশ্য এসকল ডেক থেকে যাত্রীবাহী হেলিকপ্টারের সাহায্যে উপকুল থেকে তৈল মঞ্চ, সমুদ্রের বিভিন্ন দ্বীপ অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোন অবস্থানের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করা হয়। সে সব দিয়ে প্রয়োজনে সমুদ্রে উদ্ধার কার্য চালানো যায়। চোরা কারবার রোধের জন্য গোয়েন্দা চপার/ হেলিকপ্টারের টহলকার্য জোরদার করা যায়। ভাসমান ডেক অবশ্যই বিমানবাহী জাহাজ নয় তবে প্রয়োজনে এগুলোকে অন্য জাহাজ দিয়ে টেনে একস্থান থেকে অপর স্থানে স্থানান্তর করা যায়।

শান্তির সময় বিভিন্ন উন্নত দেশের সামুদ্রিক উপকূলীয় অঞ্চলের ভাসমান হ্যালিপ্যাড নিঃসন্দেহে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে।
বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ ও শান্তিতে উন্নততর বিমানের ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। রণক্ষেত্রের আকাশে বিমানযুদ্ধ নিঃসন্দেহে অপূর্ব। যুদ্ধরত দুই ঝাঁক শত্রু বিমানের আশ্চর্য রণকৌশল অবলোকন করার জন্য মানুষ মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ট্র্যাঞ্চ থেকে বের হয়ে আসে। আশ্চর্য হয়ে অপলক দৃষ্টিতে ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া, বোমাবর্ষণ, রকেট ও মিসাইল নিক্ষেপ, শত্রুবিমানের প্রতি পরষ্পরের গুলিবর্ষণ এবং ডগফাইটের অন্যান্য কৌশল সম্মোহিতের মত দেখতে থাকে।

রাতের আকাশযুদ্ধ আরও মনোরম, ভয়াল রাত্রির নিথর নিরবতা খান খান করে ভঙ্গ করে ফাটতে থাকে বোমা। অগ্নি দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিমান ঘাঁটি থেকে প্রচন্ড গর্জন করে আকাশে উড়ে আক্রান্ত দেশের বিমানের ঝাঁক। ওরা মুখোমুখি হয়।

এলোপাথাড়ি ছুটতে থাকে উভয় দেশের বিমানের অগ্নিময় গুলি। যেন ঝাঁকে ঝাঁকে উল্কা উড়ে যাচ্ছে। তবু আতশবাজির মত ফাটছে এন্টি এয়ারক্রাফট গানের আগুনে গোলা। বিমান যুদ্ধ সাহসী বৈমানিকদের রক্তে আগুন জ্বালায়। তারা ভুলে যায় দেশে অথবা বিমানবাহী জাহাজে নিজেদের ঘাঁটিতে ফেরার কথা। পৌঁছে না তাদের কানে নিচে জ্বলন্ত জনপদ ও কাল দরিয়ার যুদ্ধ জাহাজের বাসিন্দাদের আর্তচিৎকার।

এক সময় হয়ত তাদের কারো বিমানে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে আগুন। বেল আউট করেন পাইলট বা মরনে অনন্ত আকাশের ঠিকানা খুঁজে নেন!
বিমানযুদ্ধ আধুনিক যুদ্ধ কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যুদ্ধে শত্রু বিমান ঘাঁটি, বিমানবাহী জাহাজ, রণতরী, সামরিক ছাউনিতে বোমাবর্ষণ এবং শত্রু বিমানের পরষ্পরের মাঝে ডগ ফাইট কখনো যুদ্ধ আইনের লঙ্ঘন নয়। তবে জনপদ, বিদ্যাপীঠ, ধর্মস্থান, হাসপাতাল ইত্যাদির উপর বোমাবর্ষণ সমর্থন করা যায় না।

শত্রুবিমান জুজুর ভয়ে বৃহৎশক্তি অথবা যে কোন দেশের সামরিক বাহিনীর শত্রুদেশের যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে নিরপরাধ যাত্রীদের হত্যা করা কখনো যুদ্ধ আইনের অংগ নয়। সন্দেহ নাই লিবিয়া ও ইসরাইল একে অপরের শত্রু। কিন্তু ইসরাইলের যুদ্ধ বিমানের লিবিয়ার যাত্রীবাহী বিমানগুলি করে ধ্বংস করে দেওয়া ঠান্ডা মাথায় সন্ত্রাসবাদ ব্যতীত আর কিছু ছিল না।

১৯৮৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তারিখে রাশিয়ার মীগ বিমান ২৬৯ জন যাত্রীসহ দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বোয়িং যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে এবং বিমানটি সমুদ্রবক্ষে নিমজ্জিত হয়। ১৯৮৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইরাক ইরান যুদ্ধের সময় মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ বহর থেকে মিশাইল নিক্ষেপ করে দুই শতাধিক যাত্রীসহ একটি যাত্রীবাহী ইরানী বিমান ধ্বংস করে। গনগনে আগুনের লেলিহান কুন্ডে প্রজ্জলিত বিমান উপসাগরে পতিত হয়। এ দুটো ঘটনাকে কখনো বিমান যুদ্ধের উদাহরণ বলা যায় না। হয়ত এগুলো তাদের শক্তির দম্ভ অথবা গোয়েন্দাদের ব্যবহারিক ত্রুটির ফল। বিশ্ব মানবতাকে ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্য পরাশক্তিগুলোর অহেতুক দম্ভ ত্যাগ করা উচিত, ত্রুটিমুক্ত করা উচিত তাদের গোয়েন্দা ব্যবস্থা।

চিত্রঃ পারমাণবিক শক্তিচালিত মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস জর্জ ওয়াশিংটন। ইনসেট: এই জাহাজের যুদ্ধবিমানগুলি পরীক্ষা করা হইতেছে।

বীর বাঙ্গালী বৈমানিকদের গাঁথা


চিত্রঃ(Bangladesh Air Force MiG-29 Taking Part in Flypast of victory day, 2012./ আকাশে বি এ এফের মিগ- ২৯ বিমান।)

স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত আকাশে আজ এদেশেরই দামাল ছেলেরা জঙ্গী বিমান নিয়ে বিদ্যুৎ বেগে আকাশের নিলিমা ভেদ করে উড়ে বেড়ায়। বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার দৃপ্ত অঙ্গিকারে দ্রুতবেগে ওরা তাঁদের বিমান নিয়ে আকাশে বিপজ্জনক মহড়া চালিয়ে যায় নির্ভিক চিত্তে।

সম্ভবত: বর্তমান বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাহসী বাঙ্গালী বৈমানিকগণ উড়ে চলেছেন এক ঝাঁক যুদ্ধবিমান নিয়ে।

ভারতের বিমান বাহিনীতেও বাঙ্গালী বৈমানিকদের সংখ্যা নগণ্য নয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বহু সাহসী বাঙ্গালী বৈমানিক বিভিন্ন যুদ্ধে সৃষ্টি করেছিলেন বীরত্বের অমর গাঁথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এদের কারো কারো নাম অমর হয়ে ঠাঁই পেয়েছে। এ ইতিহাসে সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মতিয়ুরের নাম চিরদিন রক্তের আখরে লিখা থাকবে।

পাক-ভারতের স্বাধীনতা বহু বাঙ্গালীকে পিএএফ এর বৈমানিক হবার সুযোগ করে দিয়েছিল। অতঃপর বাংলাদেশের উদ্ভবে এ সুযোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে নিঃসন্দেহে।

বাঙ্গালীর উড্ডয়নের ইতিহাসে প্রথম চমক সৃষ্টি করেছিলেন একজন বেলুন বীর ১৮৮৯ সালে। বেলুনই ছিল সে যুগের বিমান। বৃটিশ ভারতে জন্মগ্রহণকারী যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম বেলুন চালাতে সমর্থ হয়েছিলেন তিনি একজন বাঙ্গালী। তাঁর নাম ছিল রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। অবশ্য তিনিই এ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম বেলুনে উড্ডয়ন করেন নাই। বৃটিশ ভারতে বেলুনে আকাশ ভ্রমণের ইতিহাস আরও বহু পুরানো।

বেলুন আবিষ্কারের দু’বছরের মধ্যেই কলকাতা শহরে একজন বিদেশী সর্বপ্রথম বেলুন নিয়ে আকাশে ডানা মেলেছিলেন। তার নাম ছিল মি: উইন্টন। ২৯ জুলাই ১৭৮৫ সালে তিনি কলকাতার কোন এক স্থান থেকে আকাশে উড়ে ভারতে বেলুনের প্রবর্তন করেন। অতঃপর একজন ফরাসী বেলুন চালক ১৮৩৬ সালে কলকাতার গার্ডেনরিচের এক বাগান থেকে বেলুনে আরোহন করে বেশ কিছুদূর উঠে দুর্ঘটনায় পতিত হন। তিনি বেলুন সহ মাটিতে আছড়ে পড়েন। আহত হন তিনি। তাঁর নাম ছিল রবার্টসন।

অতঃপর এদেশে আসেন বাঙ্গালী বেলুন চালক মি: রামচন্দ্রের প্রশিক্ষক পার্সিডাল স্পেন্সার। এ দেশে তিনি এসেছিলেন ১৮৮৯ সালে। কলকাতায় তিনি সে সময় কয়েকটি বেলুন প্রদর্শনির আয়োজন করেছিলেন। এ সময় মি: রামচন্দ্র তাঁর নিকট থেকে বেলুনে উড্ডয়ন শিক্ষা করেন এবং ‘ভাইসরয়’ নামক বেলুনে একবার আকাশে উড্ডয়ন করেন। কয়লা গ্যাস দ্বারা এ বেলুন, আকাশে উড্ডয়ন করত।

এরপর তিনি নিজেই একটি বেলুন বানিয়ে ফেলে। এর নাম দেওয়া হয় ‘সি সিটি অব ক্যালকাটা’। এটিতে তিনি একাই ১৮৮৯ সালের ৪ঠা মে আকাশে উড্ডয়ন করেন। এটি ৪০০০ ফুট উপরে উঠেছিল এবং ৪০ মিনিট আকাশে ছিল। এ থেকেই হয়েছিল তাঁর বেলুনের যাত্রা শুরু। তিনি গঠন করেছিলেন চ্যাটার্জী বেলুন কোম্পানী। এ কোম্পানীর পক্ষে তিনি কলকাতা, এলাহাবাদ ও ঢাকায় বহুবার তাঁর বেলুনে উড্ডয়ন করেছিলেন। দেখে ও শুনে চমকিত হয়েছিল বৃটিশ ভারতের মানুষ।

ক্রমে বহু সময় বয়ে গেছে। আবিষ্কৃত হয়েছে ধাতব বিমান। বৃটিশ রাজের রাজকীয় বিমান বাহিনীর কল্যাণে ভারতের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত হয়েছে বিমান ঘাঁটি। এসেছে বিমানবহর। সে সময় মূলত: বৃটেনবাসী ইংরেজগণ সে সব বিমান পরিচালনা করতেন।

প্রথম মহাযুদ্ধে বৃটিশ বিমান বাহিনীতে কোন বাঙ্গালী বৈমানিক ছিলেন কিনা এ এখন আর জানার উপায় নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পূর্বে ভারতীয় কিছু লোক বৈমানিক হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এদের মাঝে কতজন বাঙ্গালী ছিলেন তাও আজ জানার কোন উপায় নেই।

ইতিহাসে শুধু বিমান বাহিনীর ওই সকল বৈমানিকদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় যারা পাঁচটি অথবা ততোধিক শত্রুবিমান ধ্বংস করে ‘Ace’ (বীর বিমান যোদ্ধা) নামের বিশেষ সম্মান পেয়েছেন। এ তালিকায় কোন বাঙ্গালীর নাম অনুপস্থিত।
বাঙ্গালী বৈমানিকদের ইতিহাসে যিনি সর্বপ্রথম এটা (Ace) উপাধি লাভ করেন তার নাম স্কোয়াড্রন আলম। তিনি এ সম্মান লাভ করেন ১৯৬৫ সালের পাকভারত যুদ্ধে। তখন তিনি ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন স্কোয়াড্রন লীডার। বাঙ্গালী এ স্কোয়াড্রন লীডার সে যুদ্ধে হয়ে উঠেছিলেন ভয়ঙ্কর। সারপোদা বিমান ঘাঁটির প উপর তিনি দুর্দান্ত তেজে স্যাবর জেট নিয়ে ভারতীয় বিমান বহরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তিনি ৬ই সেপ্টেম্বর দুটি, ৭ই সেপ্টেম্বর পাঁচটি এবং ১৭ই সেপ্টেম্বর দুটি অর্থাৎ সর্বমোট নয়টি বিমান ধ্বংস করে হয়েছিলেন জেট বিমান যুগের প্রথম ‘Ace’ ।

তাঁর ৭ই সেপ্টেম্বরের যুদ্ধটি ছিল খুবই রোমাঞ্চকর। সে দিন তিনি ছয়টি ভারতীয় হান্টারের একটি ঝাঁকের উপর হামলা চালান। সুযোগ বুঝে একটি হান্টারকে তিনি তাঁর বিমানের সাইড উইন্ডার মিসাইলের আঘাত হানেন। ধ্বংস হয় সেটি। অতঃপর তরিৎ গুলি করে ধ্বংস করেন আরো চারটি বিমান। অপর হাণ্টারটি কোনক্রমে পলায়ন করে।
বাঙ্গালী বৈমানিকদের মধ্যে সে সময়ের স্কোয়াড্রন লীডার আলমের সম্মান যুদ্ধের ইতিহাসে খুবই সুলভ নয়।

বাংলার অপর একজন দামাল ছেলে জনাব সাইফুল আজম । তিনি আরব ইসরাইল যুদ্ধে জর্ডানের পক্ষে যুদ্ধ করে আধুনিক বিমান যুদ্ধের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। সে যুদ্ধে তিনি ধ্বংস করেছেন চারটি ইসরাইলী জেট জঙ্গী বিমান। তাঁর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তিনটি দেশ তাকে দিয়েছে চারটি যুদ্ধ পদক। তার এ সম্মান বাঙ্গালী জাতির অহংকার।

তারা ব্যতীত আরও বাঙ্গালী বৈমানিক ছিলেন, এখনো আছেন। এরা সকলেই দুঃসাহসী। বিমান বাহিনীর ইতিহাসে এরা অমর হয়ে থাকবেন।

এখন আমাদের সকল বাহিনীর এয়ার উইং রয়েছে। বাহিনী বিষয়ে নিম্ন লিঙ্ক দেখে নিতে পারেন:

Watch “বাংলাদেশে কোন বাহিনীর সংখ্যা কত এবং ভবিষ্যতে কত হবে | Bangladesh ARMY – NAVY – POLICE – BGB – RAB” on YouTube

_______________

বাংলাদেশের ‘বেসামরিক বৈমানিক’ কথন

বেসামরিক বৈমানিকগণও যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইনের বাঙ্গালী বৈমানিক ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন শাহাব উদ্দিন, ক্যাপ্টেন আকরাম, ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন, ক্যাপ্টেন কাজী আবদুস সাত্তার, ক্যাপ্টেন আব্দুল মুকিত প্রমুখ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্মলগ্ন থেকে (২৮/৯/১৯৭১) দেশ সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন। তাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য সেকালের স্বল্পগতি সম্পন্ন বিমান নিয়ে বিবিধ অপারেশনে যেতেন।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন সময়ে ব্যবহৃত অটার (ডি এইচ সি-৩), ১৯৩৫ সালে নির্মিত ম্যাকডোনাল এন্ড ডগলাস কোম্পানি নির্মিত ডিসি-৩ বিমান এবং এ্যালিউট নামের টার্বো শ্যাফট ইঞ্জিন সংযোজিতে ছোট একটি হেলিকপ্টার ছিল কিলো ফ্লাইট তথা নবিন বিএএফের সাত রাজার ধন!

এগুলো যুদ্ধ উপযোগী করেছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনী থেকে পলাতক কারিগরী শাখার দক্ষ বৈমানিকগণ। সংস্কারের মাধ্যমে প্রেট এন্ড হুইটনি পিস্টন ইঞ্জিন সংযোজিত অটারটিকে ফাইটার কাম বোম্বারে পরিণত করা হয়েছিল।

এ বিমানে ১৫ পাউন্ড ও ৩০ পাউন্ড ওজনের ১০টি বোমা, দুই ডানার নিচে সংযোজিত ট্রাসে ২টি করে মোট ৪টি রকেট পড বহন করা যেত। প্রতিটি পডে মোট ৮টি করে ২০ পাউন্ড ওজনের ৩২টি রকেট বহন করা যেত।

সে বিমান থেকে হাত দিয়ে বোমার পিন খোলে সে বোমা ধাক্কা দিয়ে ফেলতে হত। ডিসি-৩ (ডাকোটা) বিমানটিকে প্যারাট্রুপার ও যুদ্ধ সামান ড্রপ করার উপযোগী করা হয়েছিল। এর পেছনের কার্গো হ্যাচ (hatch) খুলে ফেলে এর বিকল্প ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছিল। হেলিকপ্টারটিকে যুদ্ধ উপযোগী করা হয়েছিল এর দরজায় স্বয়ংক্রিয় বন্দুক এবং ফিউজলেজের উভয় পাশে রকেট পড সংযোজন করে।

পি আই এ থেকে আসা উল্লিখিত বৈমানিকগন এগুলো নিয়ে যুদ্ধ অপারেশনে যেতেন। স্বাধীনতার পর তাঁদের অধিকাংশ বাংলাদেশ বিমানে যোগ দেন।
১৯৭১ থেকে ২০০২। এ বিশাল সময়ের মাঝে বাংলাদেশের বহু বেসরকারী বিমান ও হেলিকপ্টার সার্ভিস জন্ম দিয়েছে। সেগুলেতে যোগ দিয়েছেন বিবিধ শাখার বহু বৈমানিক। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ও বিমান বাঁচানোর তাগিদে দুঃসাহসী ভূমিকা রেখেছেন।

১৯৯৮ সালে এমন একটি ঘটনার জন্য সুপরিচিত হয়েছেন এয়ার পারাবতের ক্যাপ্টেন এহসান। সেদিন সাভারের একটি পাট ক্ষেতে তাঁর বিমানটিকে সফলতার সাথে আপদকালীন অবতরণ করিয়েছিলেন তিনি। এই সাহসী বৈমানিক এদেশের এ্যারো বেঙ্গলে ইতিপূর্বে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি ফ্লাইং একাডেমী বাংলাদেশের প্রধান উড্ডয়ন প্রশিক্ষকও ছিলেন একসময়।
এদেশের মেয়েরাও বৈমানিক হিসেবে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এদেশের প্রথম মহিলা পাইলট ক্যাপ্টেন রোখশানাও ছিলেন পুরুষ বৈমানিকদের মত নির্ভয়। তিনি এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন। তারপরও বহু মহিলা বৈমানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। কর্মরতও আছেন কেউ কেউ। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এয়ার পারাবত ফ্লাইং একাডেমীর সেসনা-১৫০ চালাতে গিয়ে মারা গেলেন উজ্জল উড্ডয়ন প্রশিক্ষক ফারিয়া লারা। সেদিন তিনি ও সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বরিশাল বিমান বন্দরে ল্যান্ডিঙ অনুশীলন শেষে ফিরে আসছিলেন। ওদের বিমান সেদিন ১০টা ৩০ মিনিটের সময় ঢাকার পোস্তাগোলার নিকট বিধ্বস্ত হয়। সাহসী বৈমানিকেরা কখনো মরে না।

__________

বিমানবাহী জাহাজ ও আধুনিক যুদ্ধ

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ফরাসী বিমানবাহী জাহাজ ক্লিমেঞ্চু পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দিকে এগিয়ে চলেছে। (ইউএনবি/এএফপি)

১৯৯০ সালের ২রা আগষ্ট। সারা পৃথিবীকে চমকে দিয়ে হঠাৎ ইরাক কুয়েত দখল করে ফেলল। মধ্য প্রাচ্যের দুর্বল রাজাগণ আপন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বৃহৎ শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করলেন। ফ্রান্স, বৃটেন, আমেরিকা ইত্যাদি পরাশক্তিগুলো মহাসমুদ্রের ওপার থেকে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিল।

আদেশ পেয়ে তাদের নৌবহর শাস্ত মহাসাগরগুলোর অবাধ জলরাশী তোলপার করে এগিয়ে চলল উপসাগরের দিকে। সেগুলোর সঙ্গ নিল বিশাল সব বহুবিধ যুদ্ধ (multi – roles) সিষ্টেমযুক্ত বিমানবাহী রণতরী আর সহায়ক জাহাজ। ওদের কাঁধে সওয়ার হয়ে তখন এগিয়ে চলেছে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার গান শীপের ঝাঁক। হয়তবা কখনো জাহাজের ডেক হতে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে মহড়া চালাত সে বিমান প্রচন্ড শক্তি নিয়ে শত্রু অবস্থানের উপর হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য।

ভূমধ্যসাগরে প্রেরিত মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ‘সারাটোগার’ ফ্লাইট ডেক থেকে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি অত্যাধুনিক জঙ্গী বিমান।

যাক, বাস্তব আক্রমণ শেষে অবশ্যই কিছু বিমান পুনঃ ফিরে আসবে বিমানবাহী জাহাজে। ফেরার পথে যদি কোন বিমানের জ্বালানির অভাব হয় তবে নিকটবর্তী কোন বিমান ঘাঁটি থেকে উড়ে আসবে ট্যাঙ্কার বিমান এবং উড্ডয়নরত অবস্থায়ই সে বিমানে করবে জ্বালানি সরবরাহ। অবশ্য জাহাজ থেকে যদি গন্তব্য বহু দূর হয় তবে বড় বড় বিমান থেকে একই পদ্ধতিতে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়।

কে সি-১৩৫ ট্যাঙ্কার বিমান। একটি যুদ্ধ বিমানে জ্বালানি সরবরাহ করছে।

বিমানবাহী জাহাজের ধারণা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছে। জাপান আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপের পার্ল হার্বারস্থ স্থাপনায় বিমানের সাহায্যে আঘাত হেনেছিল আর সে বিমানগুলি লক্ষ্যবস্তুর উদ্দেশ্যে উড়ে গিয়েছিল বিমানবাহী জাহাজ থেকে।

মূল আলোচনা করা যাক। অবশেষে সমাপন হল স্মরণকালের সর্বাধিক ব্যয়বহুল যুদ্ধ। উপসাগরীয় অঞ্চলে কুয়েতকে ইরাকের দখলদারী থেকে মুক্ত করার জন্য এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে গঠিত বহুজাতিক বাহিনী ইরাকের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায় এবং ইরাকী বাহিনীকে কুয়েত হতে হটিয়ে দেয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর ইরাক ১৯৯১ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মেনে নেয় এবং যুদ্ধের অবসান হয়।

এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় অঞ্চলে ৪ লাখ ১৪ হাজার স্থলসেনা, ১০০০ ট্যাংক, ২০০০ সামরিক যান, ১৫০০ হেলিকপ্টার, ১৩০০ যুদ্ধবিমান, ১০৮টি নৌ যুদ্ধ জাহাজ প্রভৃতির সমাবেশ ঘটিয়েছিল।

ইরাকের ছিল ৫ থেকে ৭ লাখ সৈন্যের ৬০ ডিভিশন স্থলবাহিনী, ৭০০ যুদ্ধ বিমান, ২৫০টি বোমারু বিমান, ৪০০০টি ট্যাংক, ২৭০০ সামরিক যানবাহন, ৩০০০ কামান ও প্রচুর রাসায়নিক অস্ত্রের ভান্ডার এবং বিশাল সামরিক বাহিনী।

ন্যাটোর হেড কোয়ার্টার হিসেবে তুরস্কে সমাবেশ ঘটানো হয়েছিল বেলজিয়াম, জার্মানী ও ইটালীয় বিমান বাহিনীর ৪২টি যুদ্ধ বিমান। এছাড়া বৃটেন ও ফ্রান্স ব্যতীত বাংলাদেশসহ বহুদেশের সেনাগণ মিত্র জোটের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল। বৃটেনের ছিল ৩৫ হাজার স্থল সৈন্য, ৩৫০টি ট্যাঙ্ক, ৭৭২টি জঙ্গী বিমান এবং ২০টি নৌ যুদ্ধ জাহাজ। এ যুদ্ধে ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীর অবস্থিতিও লক্ষণীয় ছিল। জানা যায় মিত্র জোটের স্থল সৈন্য সংখ্যা ছিল ৬ লক্ষ ৮০ হাজার।

এই অদম্য যুদ্ধের সূচনা হয় বিমান যুদ্ধের মাধ্যমে। হাজার হাজার বিমান রাতের আঁধারে বাগদাদের উপর প্রচন্ড বোমাবর্ষণ করে। বিমানবাহী জাহাজ ও উপসাগরীয় অঞ্চলের বিবিধ দেশের ঘাঁটি থেকে এরপর ক্ষণে ক্ষণে বিমান হামলা চালানো হতে থাকে। বিভিন্ন লক্ষ্য বস্তুর উদ্দেশ্যে নৌ জাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা হতে থাকে শত শত টুমাহক ক্রুজ ও লেসার নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক সব ক্ষেপনাস্ত্র। ইরাকী রাডার স্থাপনার উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা হতে থাকে হার্ম মিশাইল।

ইরাকী বিমান বিধ্বংসী কামানগুলো গর্জে উঠে। বিমানগুলো ডগ ফাইটে লিপ্ত হয়। মিত্র বিমানগুলি ইরাকী বিমান ঘায়েল করার জন্য আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণ যোগ্য ফনিক্স মিসাইল ব্যবহার করে। ইরাকী স্কাডও সফলভাবে আঘাত হানে মিত্র জোটের কয়েকটি স্থাপনায় এবং ইসরাইলের মূল ভূখণ্ডের কোন নিশানায়। অবশেষে জল, স্থল ও অন্তরিক্ষে মিত্র শক্তির অত্যাধুনিক প্রযু্ক্তির নিকট ইরাকের পরাজয় ঘটে।
অবশ্য ইরাকের বিরুদ্ধে মিত্র জোটের আকাশযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। ওরা ইরাকের কিছু এলাকার আকাশকে ইরাকী বিমানের জন্য উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা ঘোষণা করেছে। সে এলাকার আকাশ মার্কিন ও বৃটিশ যুদ্ধ বিমানের অবাধ বিচরণক্ষেত্র যেন। মাঝে মাঝে ইরাকী বিমানের সাথে ডগ ফাইটের কথাও শুনা যায়। কখনোবা মিত্র জোটের দুই একটি জঙ্গি বিমানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা শুনা যায়।

যুদ্ধ নব উদ্যোগে চালাচ্ছে মিত্র জোট। প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ওদের বিমান হামলা চালাচ্ছে ইরাকী রাডার ও অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায়। স্থলের বিমান ঘাঁটি থেকে যেমন আক্রমণ করা হয় ঠিক তেমনি ভাসমান ঘাঁটি থেকেও হামলা পরিচালনা করা হয়।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেমন আক্রমণ করা হয় স্থলের কোন সেনা স্থাপনা থেকে ঠিক তেমনি কখনো বিমানবাহী জাহাজ থেকে পাঠানো হয় অত্যাধুনিক এফ এ-১৮ জেট যুদ্ধ বিমান কোন নিশানায়। ইরাকের এ অঞ্চল যেন মিত্র জোটের জন্য স্থায়ী যুদ্ধ ক্ষেত্র। ওরা তখন ইরাকের বিরুদ্ধে আরো বৃহত্তর যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে সাদ্দাম উৎখাতের উদ্দেশ্যে।

উল্লিখিত যুদ্ধগুলি ছাড়া ভিয়েতনাম যুদ্ধে (১৯৫৬-৭৬) যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী জাহাজ ছিল খুবই সক্রিয়। বলকানের রক্তক্ষরণ বসনিয়া – হারজেগোভিনিয়ার যুদ্ধে (১৯৯২) বিমানবাহী জাহাজ ব্যবহৃত হয়েছে। পাকভারত যুদ্ধে (১৯৬৫) মার্কিন ও রুশ বিমানবাহী জাহাজ সাগরে অবস্থান নিয়ে নিজেদের মিত্রদের পক্ষে স্নায়ুযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল (১৯৭১ সালে ভারত ব্যবহার করেছে)।
অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জবুশ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে হটানোর যুদ্ধও শুরু করে দেন। এর পূর্বে অস্ত্র পরিদর্শনের নামে দফায় দফায় সেখানে পাঠানো হয় অস্ত্র পরিদর্শক। ইরাকে অস্ত্র পরিদর্শকরা গোয়েন্দাগিরি করেছে বলে সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রণসজ্জা জোরদার করতে থাকে। লক্ষাধিক মার্কিন সৈন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ২০০৩ সালের ১১ জানুয়ারী পরিদর্শক দলের হ্যান্সব্লিক্স ইরাকে বিধ্বসী অস্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে ঘোষণা করেন।

তা সত্ত্বেও ১৫ ফেব্রুয়ারী ইরাকের অদূরে ৬টি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করা হয়। সে সময় বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরোধী প্রচন্ড বিক্ষোভ চলছিল। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা ঘোষণা করে পরমাণু অস্ত্র চুক্তি অনুযায়ী কর্মসূচি বাতিলের পর ইরাক পুণরায় তা চালু করেনি। এসব মতামত, বিশ্বব্যাপি যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ এমনকি খোদ মার্কিন ওয়াশিংটনে যুদ্ধবিরোধী জন সমুদ্র উপেক্ষা করে মার্কিন যুদ্ধবাজগণ ইরাকে রণপ্রস্তুতি অব্যাহত রাখে।

ইরাকে হামলার বিরোধিতায় ফ্রান্স ও জার্মানী অনড় থাকে। যুক্তরাষ্ট্র এক একক পরাশক্তিরূপে গোটা দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক হতে পারে না বলে ফ্রান্স ঘোষণা করে। ‘ইরাকে যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’ অস্ত্র পরিদর্শকদের এই মর্মে ঘোষণা, জাতিসংঘে ৬০টি দেশের দাবী ও বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকনীতি না বদলানোর হুমকি দেন মার্কিন নেতা জর্জ বুশ।

২২ ফেব্রুয়ারী মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, “যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত” বলে ঘোষণা দেন।

অতঃপর ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে মার্কিন হামলা শুরু হয়। সাদ্দাম হোসেনকে বিমান হামলায় হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। ইঙ্গ-মার্কিন জঙ্গী বিমান সমূহ বাগদাদের উপর, বসরার উপর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দফায় দফায় হামলা চালাতে থাকে। শুধুমাত্র ২২ মার্চেই বাগদাদের উপর ৩ সহস্রাধিক বিমান হামলা চালানো হয়। নিক্ষেপ করা হয় দেড় সহস্রাধিক ক্ষেপনাস্ত্র। স্থানে স্থানে গুচ্ছ বোমাসহ বিবিধ বোমা নিক্ষেপ করা হতে থাকে। ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর বিমান থেকে রাসায়নিক বোমা নিক্ষেপের খবর পাওয়া যায়। ২৭ মার্চ ইরাকের উত্তরাঞ্চলে মার্কিন ছত্রীসেনা অবতরণের সংবাদ পাওয়া যায়।
বিমান হামলার ছত্রছায়ায় মার্কিন বাহিনী বাগদাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসের ৯ তারিখে অবশেষে প্রতিরোধ ছাড়াই মার্কিন বাহিনীর কাছে বাগদাদের পতন হয়। শুরু হয় গণ হত্যার মচ্ছব। ইরাকের দিকে দিকে প্রতিরোধের আগুন জ্বলে উঠে। গোটা ইরাক অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়।

২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে মার্কিন দখলদার বাহিনীর হাতে ইরাকের অবিসংবাদিত নেতা সাদ্দাম হোসন গ্রেফতার হন। অবশ্য এরপরও গোরিলা যুদ্ধ চলছিল যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ মে মাসের ৩১ তারিখে মূল যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন।
উল্লেখ্য এ অসম যুদ্ধে সাদ্দামের বিমান বাহিনী হামলাকারী ইঙ্গ – মার্কিন বিমানের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিরোধই গড়ে তোলতে পারেনি। সাদ্দাম হোসেন বিমানগুলি রক্ষার জন্য ইরানে পাঠিয়ে দেন। তাসত্ত্বেও এফ – ১৬ যুদ্ধ বিমান ও এ্যাপাচি হেলিকপ্টারসহ কিছু বিমান গেরিলাদের হামলার শিকার হয়।

এখনো ন্যাটো জোটের বিমানবাহী রণতরী মধ্যপ্রাচ্যোর সাগর মহাসাগর দাপিয়ে বেড়ায়। এ জোটের তুরষ্ক সাগরে নামিয়েছে ড্রোনবাহী জাহাজ। তাদের নিজেদের বানানো বায়ার আকতার ও অন্যান্য ড্রোন তাতে মোতায়েন করা হয়েছে। ইরানও তার নৌবাহিনীর জন্য বানাচ্ছে উন্নত বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ । ভিডিওতে দেখে নিন: https://aviationbangladesh.wordpress.com/2023/05/07/watch-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a7%82%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a3-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae%e0%a7%80-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ae/

দুনিয়ার শান্তিকামী সাধারণ মানুষ অবশ্য এসবকে ফজুল মনে করেন। তাদের নেতাকর্মীরা মিছিল সমাবেশে তা জানানি দেন। আম জনতার দুর্বল আওয়াজ মহাশক্তিধরদের কানে পৌঁছায় না।

**********

আফগানিস্তানে চলমান যুদ্ধসমূহে বিমান

“নতুন শতাব্দীর নবম মাসে আকাশ থেকে নেমে আসবে এক কিং অব টেরর’। পয়তাল্লিশ ডিগ্রী সবকোণে আকাশ জ্বলে উঠবে। নতুন শহরে দেখা দিবে অগ্নিকাণ্ড।”

(নস্ট্রাডেমাস)’

২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার পর সারা বিশ্বে ৪শ বছর পূর্বের ফরাসি ইতিহাসবেত্তা ও জ্যোতিষী নস্ট্রাডেমাস এর ভবিষ্যদ্বানী নিয়ে আলোচনার টেবিলে তুফান উঠে। তিনি আরো বলেছেন “সেপ্টেম্বর ১১ই তারিখে আকাশ হতে নেমে আসবে দুটি ধাতব পাখি 🐦🐦। আর তা আঘাত হানবে দুটি সুউচ্চ টাওয়ারে।”

উল্লিখিত দিন সত্যসত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার টুইন টাওয়ারে দুটি বিমান আঘাত হেনেছিল। সেদিন বিমান সন্ত্রাসীগণ যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং ৭৪৭ সহ চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে সেগুলোকে তাদের ধ্বংসকারী পরিকল্পনার নিখুত অথচ ভয়ানক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে।

জানা যায় ১৯ জন সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী বিমানগুলো ছিনতাই করে। ইউনাইটেড এয়ার লাইন্স এবং আমেরিকান এয়্যার লাইন্সের দুটি বিমান বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের দুটি টাওয়ারে আঘাত হানে। আমেরিকান এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইট আঘাত হেনেছিল পেন্টাগনে এবং ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইট পেনসেলভানিয়াতে বিধ্বস্ত হয়। বিশ্লেষকগণ ঘটনার পিছনের ঘটনা নিয়ে ভাবতে থাকেন। ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক এর উপর সুপার সন্ত্রাসী হামলার কারণ কি?

কেউ বলেন এ কাজ বহুকাল থেকে মার খেতে থাকা ফিলিস্তিনিদের। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইল এখনো তার ঘৃণ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের হৃৎপিণ্ডের ওপর আঘাত হানতে হবে। অল্প সময়ের মাঝে সকল ইউরোপীয় বিশ্লেষকদের ধারণা এক ও অভিন্ন হয়ে যায়। তাদের মতে ওসামা বিন লাদেন নিঃসন্দেহে এই অঘটনের হোতা।

যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করলো, তাকে ধরতে হবে। তার বিচার হবে। সুতরাং আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হল লাদেনকে অবশ্যই হস্তান্তর করতে হবে।

লাদেন জানালেন, এর আমি কিছুই জানিনা। তালেবান যুক্তরাষ্ট্রকে প্রমাণ উপস্থাপন করার কথা জানাল কারণ তাদের মতে কোন নির্দোষ মুসলমানকে বিধর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া কুরআনের শিক্ষা বিরোধী কাজ । যুক্তরাষ্ট্র লাদেনের পার্বভ্য গুহার আস্তানা বোমা মেরে ধ্বংস করার আর তালেবান সরকারকে উৎখাত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। এর কারণ কি?

সম্ভবত: নস্ট্রাডেমাসের ভবিষ্যৎবাণীও এর কারণ হয়ে থাকবে। তিনি মধ্যপ্রাচ্য থেকে সারা বিশ্ব কাঁপানো এক ব্যক্তির ১৯৯৯ সালে আলোকিত আবির্ভাবের কথা বলেছেন।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, রিয়াদে জন্মগ্রহণকারী সউদি কুবের ওসামা বিন লাদেনই সে ব্যক্তি। অনেকে মনে করেন তাঁর বাণী বিশ্বাস করার তেমন যুক্তি নাই কেননা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগে এসবে বিশ্বাস না করাই শ্রেয়।

তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আফগানিস্তানে হামলা চালায়। ওরা রাতের আঁধারে প্রথম বিমান ও মিশাইল আক্রমণ চালায়। ক্রমে আক্রমণ প্রচন্ডতর হয়।

আফগানিস্তানে মার্কিন হামলাকে ধর্মযুদ্ধ অভিহিত করে মুসলিম দেশের তরুণদের মাঝে শুরু হয় জেহাদে হাওয়ার উম্মাদনা। এদিকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে যুক্তরাষ্ট্র আফগান শহর, গ্রাম, মক্তব, মাদ্রাসা, বাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, স্কুল ইত্যাদির উপর বাছাবিচারহীনভাবে বিমান আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। এতে নিহত হয় হাজার হাজার আদম সন্তান।

মৃত্যুর ভয়ে হাজার হাজার আফগানের স্রোত প্রতিবেশী দেশগুলির দিকে ধাবিত হয়। লাখ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলিতে আস্রয় নেয়। যুদ্ধের প্রথম দিকে দৃশ্যত অনঢ় তালেবান প্রশাসন ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার এবং এভাবে দেশকে মার্কিন ও মিত্রদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। জেহাদী জোশে উদ্দিপ্ত শহিদী মেজাজের তালেবান শান্তির মোকাম এবং মসনদে আলা ছেড়ে পাহাড়ে পর্বতে আশ্রয় নেয়। তখন আফগানিস্তানে মার্কিন পছন্দ সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু যুদ্ধ তখনো থামে নাই।
প্রতিনিয়ত আল-কায়দা যোদ্ধা ও তালেবানরা যুদ্ধ পরিকল্পনা করছে। ওরা মিত্র বাহিনীর সৈন্য সামন্তের ওপর গেরিলা হামলা চালাচ্ছে। মার্কিন বিমান ও হেলিকপ্টার গানশীপের গিরি কন্দর তছনছ করা চিরুনি অভিযান হামলার জবাব দিচ্ছে ওরা।পাহার পর্বত ধ্বংসকারী ডেইজি কার্টার ও অন্যান্য বিধ্বংসী অস্ত্র নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছে মিত্র বাহিনীর সদস্যরা। এ যুদ্ধের শেষ করে হবে একমাত্র মহান স্রষ্টাই তা জানেন।

(দ্রষ্টব্য: যুদ্ধ শেষ হয়েছে। তালেবান পুনঃ আফগান সরকারের তখতে তাউসে আসীন।)

******”**

ড্রোন যুদ্ধ

(এ পাঠটি আমার কালের ৫ লাইট এক এক রেজিমেন্ট আর্টিলারির সকল সদস্যদের উৎসর্গ করা হলো। উল্লেখ্য, ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত এ ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় এয়ার ক্রাফট রিকগনিশন কোর্সে পাঠদান কালে প্রথম সামরিক বাহিনীর টার্গেট ড্রোনের সাথে পরিচয় হয় আমার।)।

এখনো সাগরে বিমানবাহী জাহাজের ও প্রতিবেশী দেশসমূহ আর আফগান ভূমির মার্কিন ঘাঁটির হাজার হাজার বিমান আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

মার্কিন তথা আমেরিকার ড্রোন যুদ্ধ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। যুদ্ধে চালক বিহীন বিমান বা ড্রোন ব্যবহার সাম্প্রতিক যুদ্ধসমূহে নবসংযোজন বলা যায়।

অবশ্য এ ধরনের বড় বিমান দ্বারা গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড ও বোমাবর্ষণ পরিচালনা ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এ ধরনের কার্যকর কোন বিমান আকাশে উড়েনি।
যতদূর জানা যায় ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯১ সালে বহুজাতিক বাহিনী কর্তৃক ইরাকের বিরুদ্ধে পরিচালিত অপারেশন ডেজার্টস্ট্রোম, ১৯৯৮ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের সামরিক অভিযান অপারেশন, ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইঙ্গ-মার্কিন হামলা অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডমে, ২০০৩ সালে ইরাকে ইঙ্গ মার্কিন পরিচালিত সামরিক হামলা অপারেশন ইরাকী ফ্রিডম ইত্যাদির সফলতার জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রমে ড্রোনের বহুল ব্যবহার হয়েছে।
ড্রোন যুদ্ধ ভয়ানক রূপলাভ করেছে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে পর্বতময় এলাকায় তালেবান ও আল-কায়দা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত মার্কিন অভিযানের সময় থেকে। আগে যেখানে শুধুমাত্র গোয়েন্দা কার্যক্রম, গবেষণা, বিমানবাহিনীর যুদ্ধ বিমানের গুলা-গুলি বর্ষণ অনুশীলনে টার্গেট বিমান হিসাবে ড্রোন ব্যবহৃত হত বর্তমানে তা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানব হত্যার হোলি খেলায় মেতেছে।

আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে এ পর্যন্ত (২০১৩) ড্রোন হামলায় মারা গেছে বহু আল-কায়দা নেতা। জানা যায় ২০১১ সালের ২ মে তারিখে আল- কায়দার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের কোয়েটা লাগোয়া এবোটাবাদে মার্কিন সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পূর্বে বহুবার মার্কিন বাহিনী সন্দেহজনক বিন লাদেনের অবস্থান বলে কথিত কোন বাড়ীতে বা গিরি গুহার আস্তানায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন ড্রোন।

সেসব হামলায় বিন লাদেন নয় মারা গিয়েছে অন্যরা যাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। তাছাড়া ড্রোন হামলার পর কোন বিশেষ নেতার নিহত হওয়ার কাহিনী প্রচার করা হয়েছে বারবার। প্রকৃতপক্ষে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে হামলা করা যায়। কিন্তু হামলার পর কে মারা গেল, ক্ষয়ক্ষতি কেমন হল যথাযথ নির্ণয় করা একেবারেই অসম্ভব কোন কোন সময়। কেননা সেসব হামলার অধিকাংশ দুর্গম এলাকা হয়ে থাকে। এ কালের ড্রোনের কর্মপদ্ধতি জটিল বটে।

এটি থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট অবস্থানে হামলা সহজ। কিন্তু যাকে লক্ষ্য করে হামলা সে ব্যক্তি হামলাকালে সেখানে নাও থাকতে পারেন।
পাকিস্তান ও ইয়েমেনে চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিয়তই বহু মানুষ হত্যা করে চলেছে। শন্তিকামী বিশ্ব এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পাকিস্তান ও ইয়েমেনে মার্কিন ড্রোন হামলায় বহু বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে এবং এসব বেআইনি হামলার জন্য মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অপরাধের অভিযোগ তোলা যেতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র দেশ দু’টিতে ড্রোন হামলা বৈধ বলে দাবি করেছে। হোয়াইট হাউসের দাবি, সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন হামলায় নির্দোষ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা কম।


চিত্রঃ কম্পিউটার থেকে একটি ড্রোনের ছবি।

প্রকৃত পক্ষে ড্রোন হামলায় যথাযথ তথ্যের খুবই প্রয়োজন। নতুবা যাকে বা যাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হওয়ার কথা তাদের বদলে নিরাপরাধ অন্যদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা অধিক। এ পুস্তকের ভূমিকায় উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে তাই নিশ্চিত হওয়া যায়।

উল্লেখ্য যে চিকিৎসক শাকিল। আফ্রিদির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের আফগান ঘাঁটি থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে সেনাদের টার্গেটে পৌঁছে দেয়। হামলায় পাকিস্তানের এবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে তাঁর বাসগৃহে রাতের অন্ধকারে হত্যা করে ওরা। এর পূর্বে তার বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভাষণ হল, আল-কায়েদা এবং তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে ড্রোন। এতে তুলনামূলক ভাবে ক্ষতি কম।

বাস্তবে মার্কিন এ বক্তব্য একপেশে অর্থাৎ হামলাকারীদের ক্ষতি কম তথা বোমা, ক্ষেপনাস্ত্র ইত্যাদি নিক্ষেপ ছাড়া কোন ক্ষতি হয় না বললেই চলে। অপর পক্ষে যে স্থানে হামলা চালানো হয় সেখানে যেন জাহান্নাম কায়েম হয়। বিধ্বস্ত হয় ইমারত ও অন্য স্থাপনা বোমার আঘাতে পুড়ে ছাড়খার হয় মানব সভ্যতা।

তছনছ হয় শহর,বন্দর। ইতস্তত এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে আদম সন্তানের লাশ। সেখানে লক্ষ্যের মানুষটি থাকতে পারেন বা নাও থাকতে পারেন। আহত ও নিহতদের মধ্যে আম নারী-পুরুষ ও শিশু সংখ্যা মোটেও কম থাকে না। যেমন বহু হামলায়ে নিহতদের মাঝে উসামা বিন লাদেন ছিলেন না।
২০১৩ সালের শেষের দিকে ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে লেখা হয় ভারত তাদের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সংলগ্ন সীমান্তে ড্রোন মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা এর সমালোচনা করেছে।

আশংকা করা হয় এতে সীমান্তে বি এস এফের হত্যাকান্ড বহুগুণ বেড়ে যাবে।

মার্কিন ড্রোন হামলা সম্পর্কে ফিরে আসা যাক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক উবামা এ হামলার বৈধতা দিয়েছেন। তার মুুখপাত্র জে কারনি এক ব্রিফিঙয়ে বলেন, “ড্রোন হামলা আইনসঙ্গত ও কার্যকর।”

চিত্রঃ(A BAE Raven during flight testing/ উড্ডয়ন পরীক্ষাকালে একটি রেভেন বিমান।)

বিভিন্ন সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের জবাব হল, ড্রোন হামলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মানতে তারা বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করে থাকে। তারা আরো বলে থাকেন, আমরা সব আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সন্ত্রাস বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করার জন্য সরকার বরাবরই গুরুত্বারোপ করে থাকে। (সূত্র প্রথম আলো অক্টোবর ১৪ ২০১৩।)

হালের রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে হাজার হাজার ড্রোন। এসব ড্রোন দিয়ে শত্রুদের অবস্থান শনাক্ত করা থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া, এমনকি গোলা হামলাও চালানো হচ্ছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার হাতে কোন কোন ড্রোন আছে, এসব ড্রোন কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সে বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। রুশ বাহিনীর হাতে রয়েছে ইরানের ড্রোন।

যুদ্ধে ইউক্রেনের ব্যবহৃত প্রধান সামরিক ড্রোনটি তুরস্কের তৈরি। নাম বেরাকতার টিবি২। এর আকৃতি একটি ছোট উড়োজাহাজের মতো। ড্রোনটিতে ক্যামেরা রয়েছে, আর দরকার পড়লে ড্রোন থেকে লেজার গাইডেড বোমাও ছোড়া যায়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের (রুসি) গবেষক জ্যাক ওয়াটলিং বলেন, ইউক্রেন ৫০টিরও কম বেরাকতার টিবি২ ড্রোন নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছিল। অন্যদিকে যুদ্ধে রাশিয়া ছোট আকৃতির অরলান–১০ ড্রোন ব্যবহার করছে। সেগুলোতেও ক্যামেরা আছে, আর ছোট বোমা বহন করতে পারে।

(দ্রষ্টব্য: এ নিবন্ধটি আফগান যুদ্ধ চলাকালে লিখা হয়েছে। পরে অবশ্য আপডেট করা হয়েছে ও হচ্ছে।)

চিত্র: ইউ টিউব থেকে ভিডিও

Facebook: অজানা বস্তু

অথবা

Watch “ড্রোন শিল্পে ইরানের চমক, বিস্মিত পশ্চিমারাও! | দৃশ্যপট | Iranian Drone Technology | Somoy TV” on YouTube

লেখকের পরিচয়
লেখক সৈয়দ মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন ১৯৫২ সালের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে বিমানসেনা হিসেবে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে যোগ দিয়ে পি টি টি এস কোহাটে গমন করেন। অতঃপর পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের করাচীর কোরাঙ্গী ক্রিকস্থ স্কুল অব এ্যারোনটিকসে বিমান প্রকৌশল সম্পর্কীয় কারিগরী (বেসিক এয়ার ফ্রেম টেকনোলজি) প্রশিক্ষণ শেষে পি এ এফ বেইস সারগোদায় যোগ দেন। অবশ্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পূর্বেই অন্যান্য বাঙ্গালী সেনার মত তাকেও বন্দিত্ব বরণ করতে হয় এবং পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশের পিএ এফ রিশালপুর, সীমান্তের প্রান্ত সীমায় বান্নু সেনানিবাস ও সর্বশেষে বঙ্গবন্ধুর বন্দি জীবনের শেষ আবাস মিয়ানওয়ালীর চমশা নামক স্থানে আটক থেকে বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ায় ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। অতঃপর ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এডুকেশন জেসিও হিসেবে যোগদানের সুযোগ গ্রহণ করেন। তিনি সেবাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭৬ ও ১৯৮২ সালে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের দুইটি আলাদা কোর্সে (কোর্স এ ও বি) মাষ্টার ডিগ্রি সমাপণ করেন ও ১৯৮৬ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর এম পি ওভুক্ত কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ও ২০১২ সালের জুন মাসে রামপুরা একরামুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি কলেজ অব এডিয়েশন টেকনোলজী, ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজী,এ আই বি,সাইকা,স্কিল জবস (ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অঙ্গ সংগঠন), হেরিটেজ ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব এভিয়েশনে (খন্ডকালীন ফ্যাকাল্টি/ চীফ ইনষ্ট্রাক্টরসহ বিবিধ পদে) কর্মরত ছিলেন। এভিয়েশন ও ইতিহাস বিষয়ক তার কিছু পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাপেডিয়া, navigationtalk.wordpress.com ও এ সাইটে তার কিছু প্রকাশনা রয়েছে।

About Syed Mohd. Saleh Uddin

I am from Bangladesh (East Pakistan before 1971). I joined the PAF in 13 February, 1969 then served in the BAF and Bangladesh Army (AEC) and retired (as SWO) from the Bangladesh Army in December, 1986. Then I joined in a college as a Lecturer and lastly retired from the Rampura Ekramunnessa Degree College situated in Dhaka, Bangladesh in July 2012 as an Assistant Professor. During this long period, time to time I worked in the Dhaka University, National University, Bangladesh Open University, BISE and BTEB as an examiner or scrutinizer etc. I also served in the CATECH, HICAM, NIET etc institutes in different teaching capacities and now working in a literary project of Dr. Shah A. Rahim (Associate professor, BOU) as a translator of literary works and a free lancer for the world media viewers. I have few publications of various interests in Bangladesh.
This entry was posted in 'বিমান চালনা ও সামরিক বাহিনী, Aeronautical Engineering, Aeronautical Teaching, Air Crash, Airmen' story, Aviation History, বিমান চালনা, ভারত ও বাংলাদেশ বিষয়, bangladesh, Bengal, Book, Forces in British India, From News, India, India-Pakistan War, Navigation, Outer Space, Story, Uncategorized, World Wars and tagged , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

Leave a comment